লোকে ভাবে আমরা হোর্ডিং লাগাই

শুধু মেকআপ নয়। ওঁর পরিচিত মেকআপ আর্টিস্টের কথাও তক্ষুণি মনে পড়বে। এবং তিনি ন্যাকামি করে বলবেন, আমার টাচ আপের জন্য ওকেই দরকার।  সেই সময়ে তমুক মেকআপ আর্টিস্ট পাওয়া সম্ভব?

লোকে ভাবে আমরা হোর্ডিং লাগাই
(বাঁদিক থেকে) পহেলী সাহা (উইন্ডোজ প্রোডাকশন), চিল্কা রায় (সুরিন্দর ফিল্মস), অভিষেক ঘোষ (স্যাজিটেরিয়াস কমিউনিকেশনস প্রাইভেট লিমিটেড), অহনা কাঞ্জিলাল দত্ত (এসভিএফ এন্টারটেনমেন্ট), এবং শ্রেয়া হাজরা (জিৎ ফিল্মওয়ার্কস প্রাইভেট লিমিটেড)।
Follow Us:
| Updated on: Dec 20, 2020 | 12:58 PM

তাঁদের নখদর্পনে, আলপিন টু এলিফ্যান্ট!
ফিল্ম প্রচারের যাবতীয় খুঁটিনাটি নিয়ে প্রায় পিএইচডি করে ফেলেছেন। দারুণ বাংলায় বলতে জনসংযোগ কর্মী। ইন শর্ট ফিল্মের পিআর দেখেন। এঁরা, অহনা কাঞ্জিলাল দত্ত  Ahana Kanjilal Dutta (এসভিএফ এন্টারটেনমেন্ট), পহেলী সাহা  Paheli Saha (উইন্ডোজ প্রোডাকশন), চিল্কা রায় Chilka Roy (সুরিন্দর ফিল্মস), শ্রেয়া হাজরা  Shreya Hazra (জিৎ ফিল্মওয়ার্কস প্রাইভেট লিমিটেড) এবং অভিষেক ঘোষ Abhishek Ghosh (স্যাজিটেরিয়াস কমিউনিকেশনস প্রাইভেট লিমিটেড)।

 

পি আর। গোদা বাংলায় জনসংযোগ। বেশিরভাগ মানুষ জানেই না এটা খায় না মাথায় দেয়। একটু বুঝিয়ে বলবেন?
অহনা
সত্যিই খারাপ লাগে এটা বলতে এখনও মানুষের এই কাজ সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। শুনতে হয় “তুই হোর্ডিং লাগাস?”। এক কথায় উই ক্রিয়েট ইমেজ অফ দ্য কোম্পানি!
অভিষেক লোকে জিজ্ঞেস করলে বলি, কমিউনিকেশনে আছি। এবং তারাও বিজ্ঞের মতো ভেবে ঠিক মাথা নেড়ে দেয়।
সবাই হাসি।
পহেলী কত লোকে বলেছে, “কমিউনিকেট কী করো? লোককে বলো ফিল্ম আসছে! হয়ে যায়!”
চিল্কা অনেকে আবার বলে, পি.আর. করিস নাকি লোকেদের সঙ্গে ‘প্যার’ করিস। ভাবুন জাস্ট!
শ্রেয়া আমার পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে মা-বাবাকে একসঙ্গে বসিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা বুঝিয়ে ছিলাম পি.আর. কী। আমায় তো হিরে থেকে জিরে অবধি সব দেখতে হয়।

 

paheli with dada

‘দাদার’ সঙ্গে পহেলী

 

আরও পড়ুন গ্রাসরুটে পলিটিশিয়ান কম, সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি: পঙ্কজ ত্রিপাঠী

 

কত বছর হল প্রফেশনে? শুরুটা হল কীভাবে?
অহনা পনোরো বছর। বম্বে ইউনিভার্সিটি থেকে, পি আর নিয়ে পড়াশোনা । তারপর এক বিনোদন এজেন্সিতে কাজ শুরু করি। মূলত ফ্যাশনের বিষয়গুলো দেখতাম। চার বছর কাজ করার পর, সঙ্গীত বাংলা চ্যানেল থেকে অফার আসে। তার এক বছর পর এসভিএফ এন্টারটেনমেন্ট করি।
অভিষেক তোমার পনেরো বছর হয়ে গেল, অহনাদি!
অহনা হ্যাঁ। পনোরো- ষোলো তো হবেই।
চিল্কা সাত বছর। মিডিয়া সায়েন্স নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন। স্নাতকোত্তর সাংবাদিকতা নিয়ে। তারপর ‘লঞ্চার্স’, ‘স্যাজিটেরিয়াস’-এর মতো পি আর কোম্পানির সঙ্গে কাজ করি। বেশ কিছু ফ্রিল্যান্সিংও করি সে সময়ে। ডিজিট্যাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। তিন বছর হল সুরিন্দর ফিল্মস জয়েন করেছি।
অভিষেক আমি মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের ছাত্র। পড়াশোনা শেষ করে নেক্সটজেন কমিউনিকেশনে জয়েন করি। ছেড়ে আলাদাভাবে পি আর নিয়ে আবার পড়াশোনা করি। দিল্লি চলে যাই ইন্টার্নশিপ করতে। ফিরে এসে ফার্স্ট আইডিয়া বলে এক কোম্পানি জয়েন করি। সেটা ছেড়ে ২০১৭তে ‘স্যাজিটেরিয়াস’-এ জয়েনড।
পহেলী আমার জন্য একেবারে উলটপূরাণ! আড়াই বছর ছিলাম আইটি সেক্টরে। ‘স্রেই বিএনপি পরিবাস’। সেটা ছেড়ে সহকারী পরিচালনার কাজ। তারপর উইনডোজ জয়েন করি, প্রায় দেড় বছর হতে চলল।
শ্রেয়া গ্র্যাজুয়েশন স্কটিশ থেকে  সায়েন্স নিয়ে। তারপর সেন্টজেভিয়ার্স থেকে পাবলিক রিলেশন ও মাস কম নিয়ে ডিপ্লোমা। তারপর আড়াই বছরের ইন্টার্নশিপ। এক বছরের চাকরি স্যাজিটেরিয়াস’-এ।  তারপর ‘জিৎ ফিল্মওয়ার্কস’ জয়েন করি।

 

with two stars

কাজের মাঝে ছবি। শ্রেয়ার সঙ্গে রুক্মিনী ও নুসরত।

 

সলমন খান বলেছেন, কাজে ‘কিক’ নাকি থাকতেই হয়। আপনাদের কাজে সেই ‘কিক’ কী?
পহেলী যাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টা চালিয়ে যাই আমরা মানে দর্শক, তাঁরা যখন রিলেট করতে পারে আমাদের ছবিটার সঙ্গে, মুখ থেকে বেরিয়ে আসে “ওয়াও”, এটা আমার কাছে রিয়্যাল কিক!
অহনা দর্শককে হলমুখী করা আমাদের লক্ষ্য। সিনেমা রিলিজের দিন এবং তার পরের দু’দিনের বক্স অফিস কালেকশন আমার কাছে আল্টিমেট ‘কিক’।
চিল্কা ধরা যাক, কোনও নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যম আমাদের ছবির খবর নিয়মিত ছাপে না। তাঁকে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে, সেই সংস্থায় নিজেদের ছবিকে একটা জায়গা করে দেওয়া আমার কাছে কিক!
অভিষেক অন্ধকার সিনেমাহল। সেভেন্টি এমএম স্ক্রিনে যখন আপনার নাম ক্রেডিট স্ক্রোলে দেখার অনুভূতি ব্যক্ত করা কঠিন। সেটাই  আমার কাছে দ্য রিয়্যাল ‘কিক’।

 

 

 

এতগুলো বছরে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে নিশ্চয়ই।
অহনা
অ্যামাজন অভিযান’-এর প্রোমোশন। সবচেয়ে বড় পোস্টার লঞ্চ। মনে আছে, প্রোমোশনের আগের সন্ধ্যে অবধি অনুষ্ঠান করানোর অনুমতি পাইনি। তার উপর দেব তখন সদ্য সাংসদ হয়েছেন। ওঁর সিকিউরিটি, কলকাতার মিডিয়া তো ছিলই তার উপর ন্যাশনাল মিডিয়াও উপস্থিত। সব নিয়ে নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল। গোটা বিষয়টা এত বিরাট ছিল বিবিসি নিউজও কভার করেছিল।
চিল্কা একেবারে শুরুর দিকে, বস আমার লেখা কপি মুখে ছুঁড়ে মেরেছিলেন। বলেছিলেন তোমার দ্বারা কাজ হবে না।  ভীষণ টাফ ছিল। কিন্তু সে বসই পরে আমাকে বলেছিলেন থ্যাঙ্ক ইউ। ইউ হ্যাভ ডান ইট!
অভিষেক কেরিয়ারের প্রথম দিকে একটা ফ্যাশন ইভেন্টে করেছিলাম। অর্জুন রামপাল এসেছিলেন কলকাতায়। প্রচুর কাজ। মিডিয়া থেকে শুরু করে কভারেজ সব। কিছুই বুঝতে পারছি না। সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। এতটা পাজলড হয়ে গিয়েছিলাম, মনে আছে অনলাইন কভারেজের কালার প্রিন্ট আউট নিয়ে ছবি তুলে ক্লায়েন্টকে মেল করেছিলাম! কভারেজের লিংক পাঠালেই কিন্তু হয়ে যেত। ভীষণ চাপ ছিল সে দিন। আমার বস চিৎকার করে বলেছিলেন, “স্কুলে তোমার ক্লাস কে নিত? গাধারা?”
পহেলী ‘ব্রহ্মা জানেন…’ ছবির মিউজিক লঞ্চ। বিরাট এলসিডি স্ক্রিন লাগানো হয়েছে। লাইভ পারফর্ম্যান্স হবে। সবাই চলে এসেছে। মিডিয়ার লোক রেডি। সব ঠিক। কিন্তু শেষে দেখলাম, স্ক্রিনে তার লাগানো নেই। স্ক্রিন জ্বলছে না। ঋতাভরি স্টেজে উঠে গিয়েছে। হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল। তারপর আস্তে আস্তে স্ক্রিন ঠিক হল। মিউজিক লঞ্চও হল। শিবুদা সেদিন বুঝেছিল আমার কী অবস্থা হয়েছিল। আর বকাঝকা করেননি।
শ্রেয়া আমার মনে হয় কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা রোজ পড়ি। রোজ নতুন চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এটাও জানি আমরা ঠিক সেটা থেকে বেরিয়ে আসব।

 

with abir

খুনসুটি: আবির ও অহনা।

 

সুপারস্টারদের এত কাছ থেকে দেখছেন। ব্যক্তিগত জীবনের বন্ধুবান্ধবদের কিছু দাবি কিংবা প্রশ্ন তো থাকে যেমন ধরুন, ‘আবিরের গালে কাটা দাগটা সত্যি রে’ কিংবা ‘দেবের সঙ্গে একটা সেলফি তুলিয়ে দিবি’?
চিল্কা (হাসি) মেসেঞ্জার খুলি না। শুধু সেলফি নয়। অনেকে ভাবে আমি বোধহয় কাস্টিং করি। পোর্টফোলিও পাঠিয়ে বলে সিরিয়াল করতে চাই! বন্ধুবান্ধব কিন্তু বোঝে যে এটা আমার কাজের জায়গা, তাই সেই স্পেসটা পাই।
পহেলী অদ্ভূত সব প্রশ্ন, জিজ্ঞেস করে সৌরভ (গঙ্গোপাধ্যায়) কি এতটাই গ্ল্যামারাস? প্রসেনজিৎ (চট্টোপাধ্যায়) সামনাসামনি কীরকম রে? মানালি (দে) কি বাস্তবে এতটাই বাচ্চা-বাচ্চা?
অভিষেক আমার বন্ধুদের একটাই আবদার, সায়নী ঘোষের সঙ্গে ডেটে যেতে চাই! প্লিজ হেল্প কর। আমি ওদের বলেছি, যে আমি কখনও কাজ অবধি করিনি সায়নীর সঙ্গে। কী বলব বলুন? তারপর বুম্বাদা কি শুধু শশা আর মুড়ি খেয়ে থাকে? চা-এ চিনি দেয়?
পহেলী  স্টারদের ডায়েট প্ল্যান ভীষণ জানতে চায় লোকজন।
অহনা (হাসি)। আড্ডাতে হামেশাই এসব শুনতে হয়। প্রশ্নে যখন আবিরের কথা উঠল, তখন বলি আমার বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্রেজ আবিরদাকে নিয়ে। ওঁর সঙ্গে সেলফি তোলার কত পিটিশন জমে আছে। কী বলব! এ ছাড়া কোন স্টার বেশি ট্যানট্রাম করে কিংবা কে বোঝদার, এসব প্রশ্ন তো খুব শুনতে হয়। মাঝেমাঝে যা করি, বন্ধুদের প্রিমিয়ারে কিংবা কোনও ইভেন্টে, ডেকে নিই।
শ্রেয়া আমাকে একটা কমন প্রশ্ন শুনতে হয়। জিতদা কি সত্যিই এতটাই ফর্সা ধবধবে?

 

স্টারদের ট্যানট্রাম সামলাতে হয়েছে?
অভিষেক ট্যানট্রাম ঠিক বলব না। একটা ঘটনার কথা বলি। কেরিয়ারের শুরুর দিকে এক টলিউড সুপারস্টারের ফিল্মের কাজ করছি। এবং তিনি সে দিন ইভেন্টে দেরি করে এসেছেন। প্রায় ১ ঘণ্টা লেট। উনি যেই ঢুকেছেন ফ্লোরে আমি সটান ওঁকে বলি, স্যর এত দেরি করেছেন, একটু তাড়াতাড়ি করতে হবে। উনি বেশ রেগে গিয়ে বলেন, ‘তুমি চেনো কার সঙ্গে কথা বলছো? তোমার বস আমার বন্ধু। তুমি জানো আমি কী করতে পারি?”
আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিলাম।
অহনা প্রথম দিকে দু-একবার ভীষণ সমস্যায় পড়েছিলাম। একবার এক নায়িকা লিফট করে উপরে উঠছে, পাশে আমি দাঁড়িয়ে। হঠাৎ বললেন, “আমার এখন ফ্রুট জুস লাগবে!” উনি একেবারে নাছোড়বান্দা। লিফ্টে আমি জুস কোথা থেকে জোগাড় করব বলুন?
চিল্কা একদম শেষ সময়ে, স্টারদের মনে পড়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়। যেমন সব সেটল হয়ে গিয়েছে, ঠিক তখন মনে পড়বে মেকআপ দরকার। কিংবা ড্রেস ঠিকঠাক নয়। একদম লাস্ট মোমেন্টে! সারাক্ষণ কিন্তু ভিডিও কলে চ্যাট চলছিল, তখন মনে পড়েনি।
শ্রেয়া শুধু মেকআপ নয়। ওঁর পরিচিত মেকআপ আর্টিস্টের কথাও তক্ষুণি মনে পড়বে। এবং তিনি ন্যাকামি করে বলবেন, আমার টাচ আপের জন্য ওকেই দরকার।  সেই সময়ে তমুক মেকআপ আর্টিস্ট পাওয়া সম্ভব?
পহেলী মিডিয়া ইন্টারেকশন শুরু হবে। যথারীতি স্টার লেট করেছেন, উনি এসে প্রথমে নিজের পছন্দের মিডিয়াকে আগে ডাকলেন। এটা করলে যা হয়, বাকি মিডিয়া যাদের নাম ওয়েটিং লিস্টে রয়েছে, তারা চটে গেল। এবং আমাদের সঙ্গে সে সব মিডিয়াকর্মীর সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকল। এরকম অনেকবার হয়েছে।

 

With Prosenjit

টি ব্রেক: বুম্বাদার সঙ্গে অভিষেক।

 

বিভিন্ন দিক সামলাতে গিয়ে সঙ্গে মনোমালিন্য বা মতোবিরোধ হয়েছে কখনও?
অভিষেক এক্সক্লুসিভ! এই শব্দটা সাংঘাতিক। একটা কভারেজের এক্সক্লুসিভিটি কতজনকে দেওয়া যায়! কোনও এক মিডিয়াকে এটা দিলে, বাকিরা রেগে যান। পরের কভারেজগুলোয় রাগের ফলপ্রকাশ হয়। কভারেজের বিভিন্ন দিক থেকে স্টোরি অ্যাঙ্গেল, সেটা যদি একজন সাংবাদিক আবিষ্কার করে খবর করেন, তাহলে কিন্তু সেটা আরেক মাত্রা পায় বলে আমি মনে করি।
অহনা না, আমার কখনও এটা হয়নি। কারণ এত বছর কাজসূত্রে তারা এখন বন্ধু হয়ে গিয়েছে। পার্ক হোটেলে ‘বাপি বাড়ি যা’র প্রেস কনফারেন্সে ছিল। পাওয়ার কাট হয়ে গিয়েছিল। মিডিয়াকে এক-দেড় ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল। কিন্তু তাও তারা রিঅ্যাক্ট করেননি। অসময়েও ওঁরা যে ভাবে সহযোগিতা করেছেন, আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ থাকব।
চিল্কা আমি অভিষেকের সঙ্গে একমত। কোনও নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে এক্সক্লুসিভ স্টোরি নিয়ে কথা হয়েছে। এবং আমরা কমিট করে ফেলেছি যে তাদের স্টোরিটা দেওয়া হবে। বাকিরা ভীষণ রেগে যায় এবং তারা আর খবরটাকে আমল দেয় না।
পহেলী একবার যো কমিটমেন্ট করলি, তো ম্যায় খুদ কি ভি নেহি সুনতা!
সবাই: (হাসি)

 

আরও পড়ুন কারও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জাজমেন্টাল হবেন না: শ্বেতা

 

ছবি প্রমোশনে এমন কোনও ঘটনা যা আজীবন মনে থেকে যাবে?
পহেলী আমার কাছে সবথেকে কাছের মূহুর্ত, হল ভিজিট। ওয়ান টু ওয়ান কনভারসেশন হয় সেখানে। মনে আছে ‘কণ্ঠ’ রিলিজের পর শিবুদাকে জড়িয়ে সদ্য পিতৃবিয়োগ হওয়া এক ছেলে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছেন “এই রোগ আমার বাবাকে কেড়ে নিয়েছিল, বাবার কষ্টটা বুঝতে পারছি,” ল্যারিঞ্জাইটিস পেশেন্টরা কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, “আবার বাঁচার ইচ্ছে বাড়ছে”। এই মূহুর্তগুলো ভীষণ সুন্দর!
অহনা ঋতুদার (ঋতুপর্ণ ঘোষ) সঙ্গে কাজ করা মনে থেকে যাবে আজীবন। যেভাবে আমায় কাছে টেনে নিয়েছিলেন আজও ভুলিনি। সকালে সাতটা-আটটা নাগাদ ফোন করতেন। ছবি নিয়ে যাবতীয় প্ল্যানিং করতেন। ‘চিত্রাঙ্গদা’ প্রোমোশনে আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, “তুই বল কোথায় দাঁড়াব, কোথায় ইন্টারভিউ দেব। কী বলব?” আমি তখন অবাক। আমাকে টপকে কোনও সাংবাদিক কিন্তু ঋতুদার কাছে পৌঁছতে পারতেন না। ঋতুদাই দিতেন না। সটান বলতেন, “অহনাকে জিজ্ঞেস করুন, ও বলে দেবে।” আজও ওঁকে ভীষণ মনে পড়ে।
অভিষেক দেবদার সিনেমার প্রোমোশন চলছে। আমরা সবাই একসঙ্গে বসে প্ল্যান করছি। আমি, রুক্মিনী (মৈত্র), কমলদা (কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়)। কোনও কিছু বোঝাতে গেলে আমি একটু হাত নেড়েটেড়ে বোঝাই। খেয়াল করিনি, কমলদা আমায় লক্ষ্য করছিলেন। মিটিং শেষে উঠতে যাব, আমায় ডেকে বললেন, “কখনও ছবিতে কাজ করেছো? বা করবার ইচ্ছে আছে?” আমি তো অবাক! দেবদা দেখি হাসছে। তারপর কমলদা বললেন, “আমি আমার একটা ছবিতে তোমায় কাস্ট করতে চাই, তোমার সিদ্ধান্তটা জানিও!” ঘটনাটা সত্যি মনে থাকে যাবে।
চিল্কা ‘বরুণবাবুর বন্ধু’ ছবির প্রমোশেনে, পরাণজ্যেঠু (বন্দ্যোপাধ্যায়), মাধবী আন্টির (মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে ছিলাম। কথায় কথায় বলছিলেন কীভাবে পুরনো সময়ে শুটিং হত। যত কথা হচ্ছিল তত এমন অনেক কিছু জানতে পারছিলাম, যা আমাকে বারবার অবাক করছিল। সে সময়ে ছবি প্রমোশন নাকি ছিলই না! আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম তার মানে পি.আর. করার লোকও তো ছিল না! শুনে দু’জনেই খুব হেসেছিলেন।

 

With Param and koyel

প্রমোশনে সেলফি: পরমব্রত, কোয়েল ও চিল্কা।

 

‘বস’- শব্দটি শুনলে কী মনে হয়।
শ্রেয়া গোপাল (জিতের ছোট ভাই) স্যার, এবং জিত স্যর দু’জনেই আমার বস। ওঁরা দু’জনে আমাকে নিজের মেয়ের মতো ট্রিট করেন। ভীষণ খেয়াল রাখেন। কোনও ইভেন্টে দেরি হলে, তাদের চিন্তা বেড়ে যায়। এবং যতক্ষণ না আমি বাড়ি পৌঁছচ্ছি বারবার আমার খোঁজ নিতে থাকেন। আসলে আমাদের এখানে মহিলা কর্মচারীর সংখ্যা কম। তাই কোনও কিছুতেই মহিলাদের প্রাধান্য থাকে বেশি। কোনও আইডিয়া হোক বা একজিকিউশন সেটা মেয়েদের কাছ থেকেই আসবে।  
অহনা বস একেবারেই বসি নয়। গাইডিং লাইটস। শ্রীকান্তদা (মোহতা) যখন ছিলেন, আমরা বসে মার্কেটিং, প্রমোশন প্ল্যান করতাম। প্রিমিয়ার, মিডিয়া হাউস সব ঠিক হত। এখন মনিদা (মহেন্দ্র সোনি) গোটাটা দেখেন। দু’জনেই আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন, আমারা যেন নিজেদের মতো কাজ করতে পারি। এই ছাড় কিন্তু সব জায়গায় পাওয়া যায় না।
চিল্কা রানেদার (নিসপাল সিং রানে) সঙ্গে কাজ করছি বলে নয়, উনি আমাকে যতটা স্বাধীনতা দেন কাজের ক্ষেত্রে তা বলে বোঝাতে পারব না। বিশ্বাস করেন আমাকে, যা এই ফিল্ডে ভীষণ দরকার।
পহেলী আমারও দু’জন বস। শিবুদা-নন্দিতাদি। দু’জনে দু’মেরু। একজন প্রচন্ড ওয়র্কহলিক। আরেকজন কুল অ্যান্ড কাম। শিবুদা-নন্দিতাদি আজ পর্যন্ত আমাদের কোম্পানি কথাটা বলেননি। বলেছেন উইন্ডোজ আমাদের পরিবার। শিবুদা সকাল সাড়ে ছটায় কল করে ঘুম ভাঙিয়ে প্রোমোশন প্ল্যান করে। আর নন্দিতাদি একদম শেষ স্টপেজ। ভীষণ কঠিন সময়ে ওর কাছে গিয়ে সমস্যা বলার পর, পুরোটা শুনলেন তারপর ঝামেলা মিটিয়ে দিলেন, শুধু বললেন, “আমার কাছে আগে আসতে হত” ব্যস!
অভিষেক শিলাদিত্যদা (শিলাদিত্য চৌধুরি) ভীষণ ভাল গ্রুমার। নিজেকে কীভাবে ক্যারি করতে হয় এটা ওংকে দেখে শেখা। তিনি বিশ্বাস করেন, সময়ের একটা মূল্য আছে। তাই যা কিছু হয়ে যাক, মিটিংয়ে দেরি করা যাবে না। ওঁকে দেখে অবাক হয়ে ভাবি, সারাদিন টিমের সঙ্গে পিকনিক করে এসে একেবারে সিরিয়াস মিটিংয়ে বসে পড়াও সম্ভব!

 

 

 

 

লোকমুখে শোনা যায় পি.আর. থ্যাঙ্কলেস জব। আর আপনারা আনসাং হিরো। কী বলবেন?
চিল্কা:
সব প্রফেশনে কিন্তু পি.আর. ডিপার্টমেন্ট ভীষণ জরুরি। এবং আছেও। আর এটাও ঠিক এ প্রফেশনের ব্যাপারে লোকে এত কম জানে। তবে এটাও ঠিক আমাদের নিজেদের কর্মক্ষেত্রের লোকজন কিন্তু এখন আমাদের যথেষ্ট সম্মান দিতে শুরু করেছেন।
শ্রেয়া এটা ঠিক।
অহনা একদম। এটা ভীষণ আনফরচুনেট। আমার কাছের লোকগুলো জানে। কিন্তু বাকিরা কিন্তু এখনও আমার কাজ নিয়ে ওয়াকিবহাল নয়। কিন্তু এখন ন্যাশনালি পি.আর. বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয়েছে। এটা দেখে খুব ভাল লাগে। আর আনসাং হিরো প্রসঙ্গে বলি, এসফিএফ-এর যে কোনও ছবির শুরুর ক্রেডিট স্ক্রোলিংয়ে আমার নাম থাকে। ২০১৪ থেকে এসভিএফ এটা শুরু করে। আই ফিল প্রাউড পর ইট।
অভিষেক আমরা ‘হিরো’ নই। বা হিরোইক কোনও কাজ করছি না। ক্লায়েন্ট খুশি হলেই আমরা খুশি। আর ‘থ্যাঙ্কলেস’ প্রসঙ্গে বলি, লোকমুখে শুনেছি এটা বলা হয়। তবে আমি এর দুটো দিকই দেখেছি। চাকরিসূত্রে এরকম মানুষও দেখেছি আমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিয়ে নিজে নাম কুড়িয়েছে। এবং ধন্যবাদ পর্যন্তটুকু জানায়নি। আবার এমনটাও দেখেছি, কাজ ভাল লেগেছে বলে, প্রচুর ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ উইশও পেয়েছি। ক্লায়েন্ট বলেছেন, প্রচুর সেলিব্রিটিও জানিয়েছেন। তাই একেবারে ‘থ্যাঙ্কলেস’ জব এটা বলব না।
পহেলী আমাকে প্রচুর বার শুনতে হয়েছে, “আমরা তো কনটেন্ট ক্রিয়েট করছি, আপনি মাঝে শুধু ব্রিজিং করছেন।” এটা শোনার পরে খারাপ লেগেছে কিন্তু সে সব খারাপ লাগা বেশিক্ষণ টেকেনি, কারণ ঠিক একই দিনে উইন্ডোজের গোটা হাউস আমার কাজের জন্য পিঠ চাপড়েছে। তাই যখন যখনই মনে হয়েছে আমি আনসাং হিরো ঠিক তখনই কেউ আমাকে বুঝিয়েছে আই অ্যাম নট!

 

নতুন প্রজন্ম যারা প্রফেশনের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছে, তাঁদের কোনও পরামর্শ?
অভিষেক এটা একেবারে গ্ল্যামারাস চাকরি নয়। এটা ভেবে এগনো উচিৎ।
চিল্কা ভীষণ ম্যাচিওর্ড হতে হবে। স্মার্টনেসের একটা আলাদা কদর আছে এই ফিল্ডে।
অহনা নিজের স্বপ্নর সঙ্গে থেকো। সাফল্য আসবেই।
শ্রেয়া এ এমন প্রফেশন যেখানে প্রতিদিন নতুন লোকের সঙ্গে আলাপ হয়। এবং প্রতিদিন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠেই ভাবতে হবে, আই ক্যান ডু ইট!
পহেলী
পি আর-এর আরেক নাম ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট। তাই ভীষণ পজিটিভ এবং ফোকাস থাকা খুব জরুরি।