“জেঠু শুটিং শেষ,” সেটাই শেষ কথা: ‘অভিযান’-এর পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়

ভেবেছিলাম উনি ছবি নিয়ে কিছু মন্তব্য নিশ্চয়ই করবেন। হয়তো কিছু অপছন্দ হবে। কিন্তু দেখলাম সে সব কিছু হল না। বরং উনি খুব খুশি হয়েছিলেন।

“জেঠু শুটিং শেষ,” সেটাই শেষ কথা: ‘অভিযান’-এর পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়
পরম-সৌমিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Jan 19, 2021 | 7:18 PM

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ‘জেঠু’ বলে ডাকতেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু ‘জেঠু’ বলে ডাকলেও পরমের কাছে প্রয়াত সৌমিত্র ছিলেন কাছের এক বন্ধু। শুটিং সেট থেকে জেঠুর গল্ফগ্রিনের বাড়ির সান্ধ্য আড্ডায় সময় পেরিয়ে গেলেও কথা থেমে থাকেনি। তাঁদের দু’জনের ‘অভিযান’ও থেমে যায়নি। আজ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিনে পরমব্রতর পরবর্তী ছবি ‘অভিযান’-এর প্রথম ঝলক দেখলেন দর্শক। আর আবার পরম ‘মিত্র’ হয়ে উঠলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। TV9 বাংলাকে পরমব্রত জানালেন পরম বন্ধুর গল্পগুলো…

 

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হন। আপনি কোন ক্লাসের ছাত্র?
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যদি ‘স্কুল’ হতেন, আর সেই স্কুলে ক্লাস টুয়েলভ অবধি পড়ানো হত, তাহলে আমি ফাইভ-সিক্সের ছাত্র।

 

 

 

 

সৌমিত্রবাবুর প্রয়াণের দিন আপনি কলকাতায় ছিলেন না। আক্ষেপ হয়?
তিনি যে দিন মারা গিয়েছিলেন, তার প্রায় এক মাস আগে থেকে আমি কলকাতার বাইরে ছিলাম। শহর ছাড়ারও আগে যখন শেষ দেখা হয়, ওঁর শরীর ঠিক ছিল না। এবং আমি কলকাতার বাইরে যাওয়ার পর ওঁর শরীরের আরও অবনতি হয়। আমি রোজ যোগাযোগ রাখতাম। উনি চলে যাওয়ায় এক অদ্ভুত শূন্যতা গ্রাস করেছিল। যে দিন উনি চলে গেলেন, আমি ‘অভিযান’-এর রাফ কাট প্রাইভেট লিঙ্কে দেখছিলাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, ওঁর সঙ্গে আর দেখা হবে না, আড্ডা হবে না। আর কোনওদিন আমরা একসঙ্গে ড্রিঙ্ক করতে-করতে শিল্প, সিনেমা, রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে পারব না।

 

ঠিক যেভাবে ‘অভিযান’ শুরু করেছিলেন, আর আজ প্রথম টিজার মুক্তির দিনের মধ্যে কতটা ফারাক?

ফারাক তো রয়েইছে। এই ফারাকে একটা গোটা প্যান্ডেমিক কাটিয়ে ফেলেছি। গোটা পৃথিবীটা বদলেছে। এবং এখনও বদলাচ্ছে। এত বড় লম্বা এক ছবি এডিট করতে গিয়ে বুঝেছি, এটা কোনওভাবে চমক-চটক দেওয়ার মতো ছবি হয়নি। ‘অভিযান’-এ ধ্রুপদী এক মেজাজ রয়েছে। একটু ধরে দেখতে হবে।

 

শেষ কথোপকথনে কী কথা হয়েছিল ‘বন্ধু’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে?

ওঁর অংশের শুটিং আগেই হয়েছিল। যিশুর (সেনগুপ্ত) শুটিং বাকি ছিল। যে দিন ‘অভিযান’-এর শুটিং শেষ করলাম সে দিন ঠিকভাবে কথা হয়েছিল। ওঁকে ফোন করে বলেছিলাম, “জেঠু শুটিং শেষ হল।” সেটাই শেষ কথা।

 

আরও পড়ুন অহংকারহীন এক নীরব দার্শনিক: ‘আমি সৌমিত্র’র পরিচালক সায়ন্তন মুখোপাধ্যায়

 

অভিযান’ করার অনুমতি পেতে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল?

না তা হয়নি। কারণ প্রস্তাবটি আসে ওঁর ঘনিষ্ট দু’জনের থেকে। আমাকে শুধু ওঁকে বোঝাতে হয়েছিল যে আমি কীভাবে ছবিটাকে ভাবছি, কী করতে চাই। ভেবেছিলাম উনি ছবি নিয়ে কিছু মন্তব্য নিশ্চয়ই করবেন। হয়তো কিছু অপছন্দ হবে। কিন্তু দেখলাম সে সব কিছু হল না। বরং উনি খুব খুশি হয়েছিলেন।

 

সৌমিত্রবাবুর কণ্ঠে রবার্ট ব্রাউনিংয়ের কবিতায় শুরু হল অভিযান-এর ট্রেলর। তবে সৌমিত্রবাবুর পছন্দের কবি ছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়।

হ্যাঁ, শক্তি চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ওঁর প্রিয় কবি। উনি মনে করতে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মতো কালজয়ী কবি বাংলা সাহিত্যে খুব কম জন্মেছেন। শক্তিবাবু এবং সৌমিত্র মিত্র ছিলেন। সক্ষ ছিলেন। এবং তা ‘অভিযান’-এ ফুটে উঠবে। তবে এ-ও ঠিক উনি ভীষণ পড়াশোনা করতেন। দেশি-বিদেশি লেখকদের লেখাপত্তর পড়তেন। তাঁদের হয়তো আমিও চিনি না।ওঁর মুখে তাঁদের কথা শুনতাম, জানতাম।

 

 

‘অভিযান’-এ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

 

 

সৌমিত্রহীন সৌমিত্রর জন্মদিনে মন খারাপ করছে নিশ্চয়ই।

এই প্রথম জন্মদিন, যেদিন উনি নেই। মনখারাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আজ ‘অভিযান’এর টিজার লঞ্চ হল।

 

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে দু-দুটো ছবি করেছেন। অহংকার হয় দুটো ছবিতে তিনি ছিলেন বলে? না আক্ষেপ মাত্র দুটো ছবিতে তিনি ছিলেন বলে?
অহংকার বলব না। তবে ভীষণ আনন্দ হয় এটা ভেবে যে এমন এক মানুষকে নিয়ে দু’দুবার কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আনন্দ এক প্রবাদপ্রতিম শিল্পীকে ডিরেক্ট করতে পেরেছি। আক্ষেপ হয় না, অনেকে তো বোধ হয় সে সুযোগটুকুও পাবে না।

 

আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে আগেও লিখেছেন। আচ্ছা যদি, আজ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিনে তাকে এক খোলা চিঠি লিখতেন। শেষ দু’লাইনে কী লিখতেন?

লিখতাম, তোমার কাছ থেকে শিখেছি কীভাবে একজন শিল্পী কীভাবে হয়ে উঠতে হয়। সেই শিল্পের পরিধি শুধু একজন অভিনেতা, নাট্যকার কিংবা কবি-তে আটকে রাখতে নেই। শিল্পীমনস্ক কীভাবে হতে হয়, এটা তোমার কাছ থেকে শিখেছি। শিল্পী-মনকে কীভাবে জীবনের শেষ দিন অবধি বাঁচিয়ে রাখতে হয়, এটা তোমার কাছ থেকে শিখেছি সৌমিত্রজেঠু।