মায়েদের দিন: ভয়-অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করেই কাজে যাচ্ছেন ওঁরা, সামলাচ্ছেন ঘরে-বাইরে

করোনা আবহে কীভাবে ঘর-বাহির, সন্তান সম দক্ষতায় ম্যানেজ করছেন টলিপাড়ার সেলেব মায়েরা...ওঁদের মুখ থেকেই ওঁদের গল্প জেনে নিল টিভিনাইন বাংলা...

মায়েদের দিন: ভয়-অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করেই কাজে যাচ্ছেন ওঁরা, সামলাচ্ছেন ঘরে-বাইরে
ছেলে আদিদেবের সঙ্গে সুদীপা (বাঁ দিকে) এবং মেরাখের সঙ্গে পায়েল (ডান দিকে)
Follow Us:
| Updated on: May 09, 2021 | 1:47 PM

ক্যালেন্ডারের ৯ তারিখ জানিয়ে দিচ্ছে আজ নাকি মায়েদের দিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের লাগাতার উইশ, মাকে নিয়ে আদরের ছবি বুঝিয়ে দিচ্ছে আজ মা-দিবস। কেউ মায়ের জন্য রাঁধছেন কষা মাংস, আবার কোভিডে সদ্য হারানো মায়ের স্মৃতিতে চোখের জল মুছে নিচ্ছে অষ্টাদশী যুবতী। মায়েদের দিন হয় না– এ তর্কেও প্লাবিত হচ্ছে ফেসবুকের দেওয়াল…তবে এ সবের মধ্যেই মহামারি উপেক্ষা করে সন্তানের জন্য, পরিবারের জন্য শুটিংয়ে বেরচ্ছেন যে সব সেলেব মায়েরা, তাঁরা কী বলছেন? তাঁদের কারও সন্তানের বয়স দুই, আবার কারও মাত্র দশ মাস। কেউ আবার সবে পাঁচের গন্ডী পেরিয়েছে। অনিশ্চয়তার প্রহরে প্রতি মুহূর্তে আক্রান্ত হওয়ার ভয়, বাড়ি ফিরে সন্তানকে কোলে আঁকড়ে নেওয়ার মধ্যেও রয়েছে দ্বিধা…”কী জানি আমার থেকে ওর হবে না তো…”। তবু ওঁরা কাজ করেন, কাজকে ভালবেসে। কাজ করেন পরিবারের জন্য, সন্তানের জন্য…করোনা আবহে কীভাবে ঘর-বাহির, সন্তান সম দক্ষতায় ম্যানেজ করছেন টলিপাড়ার সেলেব মায়েরা…ওঁদের মুখ থেকেই ওঁদের গল্প জেনে নিল টিভিনাইন বাংলা…

সুদীপা চট্টোপাধ্যায় 

ছেলে আদিদেবের বয়স মোটে আড়াই। দিন কয়েক আগেও শুটিং করেছেন সুদীপা চট্টোপাধ্যায়। নন-ফিকশন শো’র দায়িত্ব তাঁর উপর। বেশিরভাগই অপরিচিত। তাই কোথাও গিয়ে ছোট্ট আদির জন্য বেশি সাবধানী সুদীপা। ড্রাইভারকে ছুটি দিয়েছেন, মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে তিনি উত্তরপ্রদেশ। কখনও নিজেই ড্রাইভ করে যাচ্ছেন আবার প্রযোজনা সংস্থাকে গাড়ি পাঠালে তা স্যানিটাইজ থাকছে কিনা সে বিষয়েও তদারকি করে চলেছেন তিনি। বাড়ির থেকে সব নিয়ে যান। তাঁর কথায়, ” খাবারের প্লেট থেকে যেটা দিয়ে বাসন মাজব…সব নিজেই ক্যারি করি।”  এমনকি ইলেকট্রিক কেটলিটাও ক্যারি করেন সুদীপা। বাড়ির মতোই শুটিং ফ্লোরে আলাদা ছোট সেটআপ বানিয়ে নিয়েছেন। সুস্থ যে থাকতেই হবে। চ্যানেলের অফিস  থেকে ফ্লোর স্যানিটাইজ হচ্ছে ঠিকই, নিজেও ক্রমাগত হাত স্যানিটাইজেশন থেকে শুরু করে বাড়ি ফেরা অবধি জামা কাপড় ছেড়ে, স্নান করে ফ্রেস হওয়া…এ সবই নিয়মমাফিক চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। মায়ের গাড়ির হর্ন শুনলেই ছুট্টে চলে আসে সুদীপার সন্তান। কিন্তু তিনি তো ফ্রেস না হয়ে আগের মতো কোলে নিতে পারবেন না আদিকে। জড়িয়ে ধরতে পারবেন না আদরে। তাই আজকাল বাড়ির কাছে এসে হর্নও দেন না তিনি। আগে থেকেই বাড়ির কোনও সদস্যকে ফোনে জানিয়ে দেন দরজা খোলার জন্য। তাঁর দুই পোষ্যও তাঁর গাড়ির আওয়াজ চেনে বিলক্ষণ। তাই বাড়ি ঢুকতে হয় চুপিচুপি। বাড়িতে ঢুকেই সোজা বাথরুম। ফ্রেস হয়ে, গরম জলে স্নান করে তারপর আদির কাছে গিয়ে সুদীপা জানান, “মা এসে গিয়েছে”।

আরও পড়ুন- এক এক দিন তোমাদের স্মৃতি কী ভীষণ তাড়া করে…’

দুই ছেলে এবং স্বামী সম্রাটের সঙ্গে ময়না।

পায়েল দে

ছেলের বয়স দুই। আধো আধো বুলিতে মা’কে কাছছাড়া করতে একেবারে নারাজ সে। অথচ ছোট্ট মেরাখ (পায়েলের সন্তান) আজ বেশ কয়েক দিন মা-বাবার থেকে আলাদা ঠাম্মা-দাদুর কাছে। কারণ, করোনা। পায়েলের স্বামী দ্বৈপায়ন এই মুহূর্তে করোনা আক্রান্ত। পায়েল নেগেটিভ হলেও এই মুহূর্তে কোনওভাবেই রিস্ক নিতে চাইছেন না তিনি। তাই মেরাখের জন্য, কষ্ট হলেও আলাদা ফ্ল্যাটে দ্বৈপায়নের সঙ্গে থাকছেন পায়েল, অবশ্যই আলাদা ঘরে। শুটিংও করেছেন বন্ধ। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আজকাল কথা হয় ভিডিয়ো কলে। আর মেরাখ? ছোট হাতে সে’ও ভিডিয়ো কলে দেখে মা-বাবাকে। দ্বৈপায়নের করোনা আক্রান্ত হওয়ার প্রায় ১০ দিন অতিক্রান্ত। সুস্থ হয়ে তিনি শুটে যোগ দেবেন। যোগ দেবেন পায়েলও। দেখা হবে মেরাখের সঙ্গেও। তখন? ‘মা…’ বলে একরত্তি ছুঁতে চাইলে পায়েলের মনে কি কোথাও গিয়ে কী কাজ করবে শঙ্কা? পায়েলের কথায়, “ওকে কোলে নেব ঠিকই, কিন্তু অতটাও কাছে আসতে পারব না মেরাখের। যতটা দূরে দূরে থেকে ইন্টারঅ্যাক্ট করা যায়… আমি বুঝতে পারছি এই যে এখন বাবা-মা’কে দেখতে পারছে না এখন ওর ভিতরে কিছু একটা চলছে… প্রত্যেকের জীবনটা কেমন ওলট পালট হয়ে গেল…”।

ময়না মুখোপাধ্যায়

ময়নার যমজ সন্তান সাগর-সমুদ্র এখনও খুব ছোট। সপ্তাহে চারদিন করে শুটে যেতে হচ্ছে ময়নাকে। শুট শেষে ডেটল দিয়ে হাত-পা ধোয়া থেকে শুরু করে জিনিসপত্র স্যানিটাইজ চলছে সবই। কিন্তু কোথাও গিয়ে অবচেতনে ভয়ও কাজ করছে। এই ভয় নিজের জন্য নয়। এই ভয় সন্তানের জন্য। শুটিং ফেরত ক্লান্ত মা বাড় ঢুকলেই ছুট্টে আসে সাগর-সমুদ্র। কোলে উঠতে চায়। মায়ের গায়ের গন্ধ পেতে চায় ওরা। কিন্তু ময়না জানেন, করোনা আদর-স্নেহ-ভালবাসাকে তোয়াক্কা করে না একেবারেই। তাই হাত, পা ধুয়ে জামা না ছাড়া পর্যন্ত ছেলেদের কাছে যেতে পারেন না তিনি। তবে মা’কে দেখে এখন তাঁর দুই সন্তানও মাস্ক-স্যানিটাইজারে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে ক্রমশ। তাঁর কথায়, “একতলায় খেলার পর উপরে এলে আগে ওরা হাত, পা ধুয়ে নেয়। স্যানিটাইজ করে। সে অভ্যেস ওদের তৈরি হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে মাস্ক পরাই। এখন নিজেরাও বলে মাস্ক পরিয়ে দাও। আর যে জায়গায় ওরা খেলে বা যে সব খেলনা নিয়ে খেলে সেগুলোও ডেটল স্প্রে করি আমরা।” সঙ্গে ইমিউনিটি বাড়াতে সব সবজি দিয়ে তরকারি আর ডাক্তারের নির্দেশ মতো ওষুধ। কারণ, করোনার নয়া স্ট্রেনে ছাড় পাচ্ছে না দুধের শিশুরাও।

মেয়ের সঙ্গে স্বৈরিতী।

স্বৈরিতী বন্দ্যোপাধ্যায় 

মেয়ের বয়স মাত্র দশ মাস। মা হওয়ার পর অনেক দিন ব্রেকের পর আবারও কাজে ফিরেছেন স্বৈরিতী। সঙ্গে সঙ্গে ফিরেছে করোনার হানাদারিও। একেবারেই কোলের সন্তান। মা ছাড়া চলে না তার। খাওয়ানো থেকে শুরু করে ঘুম পাড়ানো…মায়ের কোলের নরম স্পর্শ চাই-চাই। তাই অভিনেত্রীর এখন ‘প্রিয়বন্ধু’ স্যানিটাইজার। নিজেই জানালেন শুটিং শেষ করে বেরনোর সময়েই চলে একপ্রস্থ স্যানিটাইজেশন। আবার বাড়ি এসেও জামাকাপড় ছেড়ে, স্নান সেরে তারপর মেয়েকে আদর। তার কথায়, “আমার মেয়েটা এত ছোট যে আমাকে ছাড়া থাকতে পারে না একেবারেই। তাই গরম জল খাওয়া, ভেপার নেওয়া, প্রপার ডায়েট…প্রত্যেক দিন নিয়ম মেনে করি।”