‘সৃজিতকে বলেছিলাম বাবাকে যেন হিরো হিসেবে না দেখায়’, শিকাগো ছাড়ার আগে বলেন মৃণাল-পুত্র কুণাল
Films on Mrinal Sen: ২০২৩ সালে টিভি নাইন বাংলা ডিজিটালকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে মৃণাল সেনের পুত্র কুণাল সেন শিকাগো থেকে বলেছিলেন, "আমার কাছে মনে হয় না চেহারার মিলটা খুব একটা বড় বিষয়। কোনও-কোনও নির্মাতা সেই মিল রাখার চেষ্টা করেন। চেহারা মেলানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আমার কাছে বিষয়টা অতটা বড় নয়। যে কোনও বায়োপিকই ফিকশনালাইজ়ড।"
মৃণাল সেনের জন্ম শতবর্ষকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে বেশকিছু বাংলা ছবি। একটি তৈরি করেছেন অঞ্জন দত্ত। সেই ছবির নাম ‘চালচিত্র এখন’। ছবিতে মৃণাল সেনের চরিত্রে অভিনয় করেন অঞ্জন নিজেই। ছবিটি মুক্তি পায় চলতি বছরের ১০ মে। অন্য ছবিটি তৈরি করেছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়–‘পদাতিক’। মুক্তি পাবে ১৫ অগস্ট। ছবিতে মৃণাল সেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। ছবিতে চঞ্চলের লুক হইচই ফেলে দিয়েছিল। যেন হুবহু মৃণাল সেন!
২০২৩ সালে টিভি নাইন বাংলা ডিজিটালকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে মৃণাল সেনের পুত্র কুণাল সেন শিকাগো থেকে বলেছিলেন, “আমার কাছে মনে হয় না চেহারার মিলটা খুব একটা বড় বিষয়। কোনও-কোনও নির্মাতা সেই মিল রাখার চেষ্টা করেন। চেহারা মেলানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আমার কাছে বিষয়টা অতটা বড় নয়। যে কোনও বায়োপিকই ফিকশনালাইজ়ড।”
সৃজিত মুখোপাধ্যায় যখন ‘পদাতিক’ ছবিটি তৈরি করছিলেন, কুণাল বলেছিলেন, “আমি আমার বাবাকে কখনওই নিজের সম্পত্তি মনে করি না। তিনি পাবলিক ফিগার। নিজেকে পাবলিকলি এক্সপোজ় করেছেন। কিছু লোক সেটার সদ্ব্যবহার করবে, কিছু লোক করবে না। সেটাই রিস্ক। আমি সেটা নিয়ে মাথা ঘামাই না।”
‘পদাতিক’-এর প্রদর্শনীর উদ্বোধনে উপস্থিত থাকবেন কুণাল সেন। তিনি শিকাগো থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। তার আগে একটি লম্বা ফেসবুক পোস্টে কিছু কথা লিখেছেন কুণাল। দেখুন কী লিখেছেন তিনি।
কুণাল সেনের ওয়াল (ফেসবুক) থেকে:
“আর এক ঘণ্টার মধ্যে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেব। কিন্তু আমার এই যাত্রা আগেরবারের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। অতীতে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য কলকাতায় গিয়েছি। এবারও যাচ্ছি। এবার আরও কিছুদিন থাকব। আমার এবারের কলকাতা সফর নিঃসন্দেহে আলাদা। এর কারণ, আমাকে সৃজিত (মুখোপাধ্যায়) নিমন্ত্রণ করেছেন। তিনি আমার উপস্থিতিতেই ‘পদাতিক’ ছবিটির উদ্বোধন করতে চান।
বলতে দ্বিধা নেই যে, এটা আমার কাছে খুবই অন্যতম একটি অভিজ্ঞতা হতে চলেছে। বাবা-মায়ের জীবনের অনেক কিছুই বড় পর্দায় দেখতে চলেছি। কিছু ঘটনা আজও আমার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে। অচেনা মানুষ আমার বাবা-মা এবং আমার চরিত্রটাকে ফুটিয়ে তুলবে এই ছবিতে। খুব কম সংখ্যক মানুষ এমন ঘটনার সম্মুখীন হতে পারেন। বায়োপিক অভিনব বিষয় নয়। এমন ছবি সাধারণত তখনই তৈরি হয়, যখন মানুষগুলো আর পৃথিবীতে নেই। এক্ষেত্রে আমি জীবিত আর তাঁরাও জীবিত, যাঁরা আমার বাবা-মাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন।
অঞ্জন দত্তও একটা ছবি তৈরি করেছেন। সেখানে তিনিই আমার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু সেই ছবিটা বাবার জীবন নিয়ে তৈরি হয়নি। ছবিটা সেই সময়ের কথা বলেছে, যখন অঞ্জন অভিনেতা হিসেবে আমার বাবার সঙ্গে কাজ করেছিলেন। তা এক সম্পর্ক ভিত্তিক চিত্রনাট্য। ‘পদাতিক’ সেই তুলনায় অনেকটাই আলাদা। এই ছবি বাবার গোটা জীবনটাকেই তুলে ধরবে বড় পর্দায়।
সব বায়োপিককেই ফিকশনের আঙ্গিকে তৈরি করা হয়। কেউই জানেন না বন্ধ দরজার আড়ালে কোন ঘটনা ঘটেছে। চলচ্চিত্র নিমার্তাদের সেই ঘটনাগুলি কল্পনা করতে হয়। আমি ছবিটা এখনও পর্যন্ত দেখিনি, তাই এখনই বলতে পারব না ছবিতে দেখানো ঘটনাবলী আমার উপর কী প্রভাব ফেলবে। তবে এই মুহূর্তে একটাই কথা বলতে পারব, এক অনন্য অভিজ্ঞতা হতে চলেছে।
সৃজিতের সঙ্গে কিছু আলোচনা আগেই হয়েছিল আমার। আমি ওঁর শৈল্পিক চিন্তাভাবনাকে সম্মান জানাতে চেয়েছি বরাবরই। ওঁর কাছে আমার একটাই অনুরোধ ছিল, বাবাকে হিরো-ওয়ারশিপ না করে তাঁর জীবনের ওঠানামাকে যেন তুলে ধরে। এখানে বাবার কথা বলতে চাই। আমার বাবা যদি কোনও বায়োপিক তৈরি করতেন, তিনি সেই ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের হস্তক্ষেপ পছন্দ করতেন না…।”