সিপিএম জাগছে? ‘সেলিমদার মতো একটা বড় ঝাঁকুনি দেওয়ার দরকার ছিল’

Mohammad Selim: গোপীনাথপুরে ৩৬ নম্বর বুথে সিপিএমের এজেন্ট মোস্তাককে মারধর করে বসতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়েই সেখানে ছুট্টে যান সেলিম। তারপরই সেলিমের হাতে ধরা পড়েছে ভুয়ো এজেন্ট। তাঁকে হাত ধরে বাইরে বের করে এনেছেন সেলিম। ঘটনাটি দেখে TV9 বাংলাকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাম সমর্থক সেলিব্রিটি শ্রীলেখা মিত্র, অনীক দত্ত এবং বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়।

সিপিএম জাগছে? 'সেলিমদার মতো একটা বড় ঝাঁকুনি দেওয়ার দরকার ছিল'
প্রতিক্রিয়া বাম সমর্থক সেলিব্রিটিদের।
Follow Us:
| Updated on: May 07, 2024 | 7:58 PM

স্নেহা সেনগুপ্ত

তৃতীয় দফার ভোট। মুর্শিদাবাদের পোলিং বুথে ভুয়ো এজেন্ট ধরেছেন সিপিআইএম প্রার্থী তথা রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এবারের ভোট ময়দানে মুর্শিদাবাদের ভোটের মাঠে কংগ্রেস সমর্থিত বাম প্রার্থী সেলিম। সকাল থেকেই তিনি ঘুরছেন বিভিন্ন বুথে। গোপীনাথপুরে ৩৬ নম্বর বুথে সিপিএমের এজেন্ট মোস্তাককে মারধর করে বসতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়েই সেখানে ছুট্টে যান সেলিম। তারপরই সেলিমের হাতে ধরা পড়েছে ভুয়ো এজেন্ট। তাঁকে হাত ধরে বাইরে বের করে এনেছেন সেলিম। এই ঘটনা ঘটার পর লোচনপুরে আসেন সেলিম। দেখেন ২০০ মিটারের মধ্যে তৃণমূলের ক্যাম্প। তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মহঃ সেলিম। কথা কাটাকাটি হয় সেলিমের সঙ্গে। সেলিমকে ঘেরোও করা হয়। গো ব্যাক স্লোগানও তোলা হয়। অভিযোগ তোলা হয়, সেলিম নাকি গুণ্ডা নিয়ে গিয়েছিলেন। এসবই সকাল থেকে টেলিভিশন এবং মোবাইলের পর্দায় দেখছেন আম রাজ্যবাসীর মতোই বাম সমর্থক টলিউড সেলিব্রিটিরা। সেলিম আজ তাঁদের চোখে রাজা। TV9 বাংলা শুনল অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র, অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় এবং পরিচালক অনীক দত্তর বক্তব্য।

এই খবরটিও পড়ুন

শ্রীলেখা মিত্র:

সেলিমদা হলেন সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক। অনেকদিনের পোড় খাওয়া রাজনীতিক। উনি তো আর কালকের গজিয়ে ওঠা রাজনীতিকদের মতো নন। তিনি অনেকদিন থেকে রাজনীতিটা করছেন। হঠাৎ করে রাজনীতিবিদ হননি। তিনি মুর্শিদাবাদের ভোট চলাকালীন নিজে বুথে-বুথে ঘুরছেন। আসলে জানতে মনে হয়, এটা হবেই। সেই কারণেই তিনি কারচুপিটা ধরতে পেরেছেন এবং জনসমক্ষে সেটা আনতেও পেরেছেন। এখন আবার সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সব ধরা পড়ছে। আগে তো ধরা পড়ত না। ফল্স ভোট, রিগিং এগুলো ঠিক না। তাই না? এটা যে দলই করুক, সেটা অন্যায়। আর সেলিমদাকে নিয়ে কী বলি! ব্রিগেডে তাঁর বক্তব্য শুনতে আসেন বিরোধীপক্ষের সাপোর্টারাও। সিপিএমএর প্রতিবাদী সত্ত্বা আগেও ছিল। আজকে এটা নিয়ে ডামাডোল হচ্ছে।

এই ভুয়ো পোলিং এজেন্টগুলো ধরা পড়েছে, এটা দেখে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। একটাই কথা বলব–চোরদের হটাও। এই রাজ্যটাকে বাঁচাও। আর এ ফুল ও ফুল নয়। এবার ওয়ার্কিং ক্লাসের সিম্বল কাস্তে-হাঁতুড়ি-তারায় ভোট পড়ুক। আমাদের ক্যাপিটালিজ়ম দরকার। কিন্তু ক্যাপিটালিজ়ম করতে গিয়ে ওয়ার্কিং ক্লাসকে এবার প্রাধান্য দিতে হবে। মানুষকে সেটা বুঝতে হবে। এখন আর লক্ষ্মীর ভাণ্ডারফান্ডার–এই সব সুরসুরি দেওয়া কথায় চিরে ভিজবে না। এগুলো স্রেফ একটা চকচকে মোড়ক। ভিতরটা ফাঁপা। এটা কেউ নিজের কোশাগার থেকে দিচ্ছেন না। এটা গণতান্ত্রিক রাজ্য, গণতান্ত্রিক দেশ। রাজতন্ত্র নয় এটা। আমরা কেউ খাজনা দিচ্ছি না। তাই আজ যা হয়েছে, সেলিমদা যা করেছেন, বেশ করেছেন। হ্যাটস অফ। একটাই কথা বলব, জোশ ইজ় ভেরি হাই!

অনীক দত্ত:

জোশ কিন্তু আমাদের সিপিআইএমের কম ছিল না কোনওকালেই। কিন্তু তার উপর মোষ বসেছিল তো! যদি নির্বাচন ঠিক করে হত, অনেক আগেই অনেক কিছু হতে পারত। একটা স্ট্যান্ডার্ড বিষয় ছিল, ইলেকশনের আগে থেকে গ্রামে-গ্রামে ভয় দেখানো চলছিল। বোমাবাজি চলছিল। নির্বাচনের কাউন্টিংয়ের দিনও সেই ছবি দেখতে পাই। অঢেল ফল্স ভোটিং হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের রীতি হয়ে গিয়েছে, ভোট হলেই মারামারি হবে। গোটা দেশের কাছেই এই বার্তা গিয়েছে–পশ্চিমবঙ্গে নাটক চলে ভোটের নামে। পার্টিকর্মীরা মার খাবেন, সাংবাদিকরাও মার খাবেন–এটা চেনা চিত্র হয়ে গিয়েছে। এবার কিন্তু পরিস্থিতি খানিক ঠান্ডা। কেন্দ্রীয় বাহিনী ভিতরে ঢুকেছে। আর সেলিমের মতো রাজনীতিকরা তো আছেনই। তরুণদের মধ্য়ে সৃজন ভট্টাচার্য, দীপসিতা ধর, মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়দের এবার দাবানো যাবে না। তাঁরা কিন্তু লড়িয়ে দেবেন। ভয় দেখালেই চলে আসবেন, এরকম ছেলেপুলে তাঁরা নন কেউই। লেফ্টের মানুষরা কিন্তু প্রতিবাদী বরাবরই। তাঁরা জানেন কীভাবে নিজেদের ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে হয়। সেলিমদাকে সকাল থেকে দেখছি মুর্শিদাবাদে। ভুয়ো এজেন্টদের দেখছি। পুরো সিস্টেমটাতেই একটা পচন ধরেছে। সেটা পাল্টাতে সেলিমদার মতো একটা বড় ঝাঁকুনি দেওয়ার দরকার ছিল ভীষণ, ভায়োলেন্স ছাড়াই।

বিপ্লব চট্টোপাধ্য়ায়:

সকাল থেকে টিভির পর্দায় বসে-বসে চুরিগুলো দেখছি। সেলিমের এই মূর্তিটা দেখে একটাই কথা বলব–ভাল করেছেন। চোরগুলোকে গুলি করে মেরে ফেলা উচিত। রাগে ফুঁসছি আমি। রাজনীতির যে চেহারাটা দেখছি, তা দেখে মনে হচ্ছে ইলেকশনটাই বন্ধ করে দেওয়া উচিত। সবাই এখন চোর। জনসাধারণের পকেটের টাকা খরচ করে ইলেকশন করার কোনও কারণ নেই আর। কোনও প্রয়োজন নেই। আগে মানুষ ভদ্র হোক, শান্ত হোক। তারপর নির্বাচন করা হোক। ফেয়ার ইলেকশন। যেখানে সেলিমের মতো কাউকে গিয়ে ভুয়ো এজেন্ট ধরতে হবে না।