শুটিং জট: প্রযোজকদের পাশে আর্টিস্ট ফোরাম, অসহযোগিতার হুঁশিয়ারি ফেডারেশনের

শুট ফ্রম হোম বিষয়টি নিয়েই এখন গোল বেঁধেছে বাংলার বিনোদন জগতে। অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের পালা চলছেই। আপাতত পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, সে দিকেই তাকিয়ে সব মহল।

শুটিং জট: প্রযোজকদের পাশে আর্টিস্ট ফোরাম, অসহযোগিতার হুঁশিয়ারি ফেডারেশনের
আর্টিস্ট ফোরামের সাংবাদিক বৈঠক।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 31, 2021 | 10:40 PM

করোনাকালে গোটা বিশ্বে মান্যতা পেয়েছে ওয়ার্ক ফ্রম হোম। গত বছর থেকেই এই ধারা অব্যাহত। বিনোদন জগতও বাদ যায়নি। ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ছাঁচে শুরু হয় ‘শুট ফ্রম হোম’। অমিতাভ বচ্চন অভিনীত শুট ফ্রম হোম শর্টফিল্ম ‘#ফ্যামিলি’র (#Family) কথাই ধরা যেতে পারে। বাড়িতেই বসেই শুটিং করেছিলেন তারকারা। কে ছিলেন না সেখানে। প্রত্যেক রাজ্যের নামজাদা তারকা। বাংলা থেকে প্রসেনজিত্‍ চট্টোপাধ্যায়ও অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেই শুট ফ্রম হোম বিষয়টি নিয়েই এখন গোল বেঁধেছে বাংলার বিনোদন জগতে।

শুট থ্রম হোমকে মান্যতা দিয়ে সোমবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে আর্টিস্ট ফোরাম। সেখানে উপস্থিত ছিলেন একাধিক অভিনেতা। একটি ৬ পাতার প্রেস বিজ্ঞপ্তি পেশ করে আর্টিস্ট ফোরাম। সেখানে ফেডারেশনের প্রতি ক্ষোভ স্পষ্ট। বিজ্ঞপ্তিতে আর্টিস্ট ফোরামের বক্তব্য, “এই পরিস্থিতিতে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী বেসরকারি ক্ষেত্রে বারবার ওয়ার্ক ফ্রম হোমের উল্লেখ করেছেন। তিনি একবারও বলেননি সব কাজ বন্ধ করে দিতে। বরঞ্চ বিকল্প রোজগারে উত্‍সাহ দিয়েছেন। তাঁর সেই দিকনির্দেশকে যখন একপ্রকার অগ্রাহ্য করে কোনও এক স্বার্থান্বেষী মহল আমাদের জগতের ক্ষতি করতে চাইছে, তখন সমগ্র শিল্পী ও কলাকুশলীদের স্বার্থে আমাদের ফোরাম প্রতিবাদ জানাতে এবং নিজেদের অবস্থান সকলের কাছে সুস্পষ্ট করতে বাধ্য হচ্ছে।”

আরও পড়ুন, ‘প্রতিশ্রুতিই সার, টেকনিশিয়ানদের মাত্র ৩০% টাকা দেওয়া হয়েছে’, আবারও ক্ষোভ উগরে দিল ফেডারেশন

আর্টিস্ট ফোরামের সহ কোষাধ্যক্ষ সোহন বন্দ্যোপাধ্যায় TV9 বাংলাকে বলে, “আমাদের কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। গতবার লকডাউনে কাজটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাতে ইন্ডাস্ট্রি বিরাট ধাক্কা খায়। ধারাবাহিক আছে বলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিটা বেঁচে আছে। লকডাউনে সেই ধারাবাহিকের গল্পের তাল কেটে যায়। এখন বিনোদনের হাজারটা মাধ্যম মানুষের কাছে আছে। মানুষ যদি মুখ ফিরিয়ে নেন, তখন খুব অসুবিধের মধ্যে পড়ে যাবে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে, প্রযোজক ও চ্যানেল কর্তৃপক্ষ যদি অন্য রকম মাধ্যম তৈরি করে ফেলেন, সেটা যদি সরকারি বিধিনিষেধ মেনে করা হয়, তাহলে আমরা কেন পালন করব না। প্রযোজকরা তো বলছেন না যে টাকা দেবেন না। সেটা তো গতকাল (রবিবার) প্রেস নোটেই বলে দিয়েছেন তাঁরা। তা হলে আপত্তি কোথায়?”

আর্টিস্ট ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে কেউ যদি এরকম ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করেন, তাহলে ইন্ডাস্ট্রির শিল্পী ও কলাকুশলীদের ক্ষতি করছেন। তাই আমাদের ফেডারেশনের কাছে আবেদন, দয়া করে ইগো ছেড়ে বেরিয়ে আসুন। আর্টিস্ট ও টেকনিশিয়ানদের ভাতের থালায় হাত দেওয়ার অধিকার নেই। কাজের পরিবেশকে বিষিয়ে তোলা হচ্ছে। আর্টিস্ট ও শিল্পীদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি করা চেষ্টা চলছে ইচ্ছাকৃতভাবে বেশকিছু বছর ধরে।” আর্টিস্ট ফোরামের কার্য নির্বাহী সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী শুট ফ্রম হোম হলে অসুবিধে কোথায়? প্রযোজকরা যেখানে লিখিতভাবে টেকনিশিয়ানদের স্বার্থ বিঘ্নিত না হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন, তা হলে কেন ফেডারেশন আপত্তি করছেন।”

আর্টিস্ট ফোরামের আঙুল ফেডারেশনের সভাপতির দিকে। তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, “ফেডারেশনের সভাপতির ভয়, তাঁর কর্তৃত্ব চলে যাচ্ছে। সেই ভয়ে তিনি বলেছেন শুটিং চালু করার জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেবেন। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী জমায়েত বন্ধ করে মানুষকে বাঁচাতে চাইছেন, সেখানে তিনি শুটিং চালু করতে চাইছেন। এটা হলে সবার আগে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আর্টিস্টরা। কারণ তাঁদের মুখে মাস্ক থাকবে না। সেখানে কিন্তু আর্টিস্টদের জীবনের ঝুঁকিটা থেকেই যাচ্ছে। আমাদের বক্তব্য, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী করোনা রুখতে চাইছেন, সেখানে তাঁর উপর এই চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে কেন? কেবলমাত্র কর্তৃত্ব দেখানোর জন্য।”

Swarup-Biswas

সাংবাদিক বৈঠকে স্বরূপ বিশ্বাস।

সোমবার সন্ধ্যায় আরও একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস। সেখানে তিনি বলেন, “প্রযোজকদের পাঠানো চিঠির ভাষা খারাপ আমাদের মনে হয়নি। দরকার হলে আরও একটি চিঠি আমরা দেব। দরকারে নন-কোঅপারেশনে যাব। অল ইন্ডিয়া ফেডারেশনেও আমরা কথা বলেছি। যেটা হচ্ছে সেটা এমওইউ (MOU) বিরোধী কাজ। আমরা মনে করি না ওয়ার্ক ফ্রম হোম আর শুট ফ্রম হোম এক বিষয় নয়। এর জন্য একটা মডিউল দরকার হয়। এরকম কিছু করতে গেলে আলোচনা করতে হয়।” তিনি আরও বলেন, “এতে যদি সুরাহা না হয়, ফেডারেশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। মুখ্যমন্ত্রী এখন করোনা ও ইয়াসের সমস্যা সামলাচ্ছেন। তাঁকে বিব্রত করা ঠিক না। ফলে আলোচনা করা দরকার। কেউ যদি ইগো নিয়ে বসে থাকেন, আমাদেরও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

গত ২৮ মে ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস একটি চিঠি পাঠান কিছু প্রযোজককে। রাজ্যে কার্যত লকডাউন হওয়ার পর বন্ধ শুটিং। সেটি আরও ১৫দিন বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলত, অনেক প্রযোজকই বাড়ি থেকে আর্টিস্টদের শুটিং করাচ্ছে। চিঠির মাধ্যমে শুট ফ্রম হোমের তীব্র বিরোধিতা করে ফেডারেশন।

আরও পড়ুন-‘সামিল হোন টেকনিশিয়ানরাও, নিয়মের হাঁসফাঁসে শুটিং বন্ধ রাখলে ইন্ডাস্ট্রিটা যে মরে যাবে…’

এদিকে প্রযোজক স্নেহাশিস চক্রবর্তী TV9 বাংলাকে জানান, তাঁরই এক টেকনিশিয়ান শুটিংয়ের পোশাক দিতে এসেছিলেন বলে তাঁকে সাসপেন্ড করে ফেডারেশন। ফেডারেশনের চিঠির ভাষার বিরোধিতাও করেন স্নেহাশিস। তাঁদের বক্তব্য, কাউকে বাদ দিয়ে শুটিং করতে চান না। গতবছর দীর্ঘ সময় শুটিং বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছিল চ্যানেল। এবারও সেই ঘটনার পুরনাবৃত্তি হোক, সেটা চান না তাঁরা। টেকনিশিয়ানদের কোনও মতেই বাদ দিয়ে শুটিং করতেও চান না। বাড়িতে বসে মোবাইলে শুটিং করার ফলে কাজের মান নষ্ট হয়েছে। সেই শুট করা ক্লিপগুলি টেলিকাস্ট করার ক্ষেত্রেও আপত্তি নেই চ্যালেনের। কারণ, তাঁরা চান না কাজ আটকে থাকুক। দ্য শো মাস্ট গো অন!রবিবার একটি ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে তেমন কথাই জানিয়েছেন প্রযোজকরা। এও বলেছেন, আর্টিস্টের বাড়ির কাছে যে টেকনিশিয়ান থাকেন, তাঁদের ডেকে শুটিং করা যেতে পারে বাড়িতে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন আপদকালীন পরিস্থিতিতে বাইরে যাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে কর্মীদের ই-পাসেরও ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলে জানিয়েছে প্রোডিউসারস গিল্ড। আর যে সব কলাকুশলী এই মুহূর্তে কাজ করতে পারছেন না তাঁদের আগের বারের মতো প্রাপ্য সাম্মানিকও দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয় তাঁদের তরফে।

আরও পড়ুন-বাড়িতেই চলছে শুটিং, চিঠি পাঠাল ফেডারেশন; পাল্টা জবাব প্রযোজকদের

রবিবার রাতেই স্বরূপ বিশ্বাস এই নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর বক্তব্য, বাড়িতে বসে শুটিং করলে কাজের মান কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বঞ্চিত হচ্ছেন টেকনিশিয়ানরাও। স্বরূপ বিশ্বাস পাল্টা বলেন, “গত বছর শুটিং বন্ধ থাকাকালীন টেকনিশিয়ানদের যে আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার মাত্র ৩০ শতাংশ দেওয়া হয়েছে। কীভাবে ফেডারেশনকে অন্ধকারে রেখে শুটিং করতে পারেন প্রোডিউসাররা?” তাঁর বিস্ফোরক অভিযোগ, ইন্ডাস্ট্রিতে বাজে ভাবে ট্রিট করা হয় টেকনিশিয়ানদের। তাঁদেরকে যে খাবার দেওয়া হয় তা খাওয়া অযোগ্য।

অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের পালা চলছেই। আপাতত পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, সে দিকেই তাকিয়ে সব মহল।

ইজরায়েল যেন রাফায় অভিযান চালিয়ে বিপর্যয় না ডেকে আনে!
ইজরায়েল যেন রাফায় অভিযান চালিয়ে বিপর্যয় না ডেকে আনে!
বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় ইউটিউবার কিরণ দত্তের রচনাকে নিয়ে এ কী মন্তব্য!
বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় ইউটিউবার কিরণ দত্তের রচনাকে নিয়ে এ কী মন্তব্য!
কেন এ রাজ্যে ঘাঁটি গাড়ে জঙ্গিরা?
কেন এ রাজ্যে ঘাঁটি গাড়ে জঙ্গিরা?
দুনিয়ার সবচেয়ে দামী নির্বাচন, কত খরচ ভোটের বিরিয়ানিতে?
দুনিয়ার সবচেয়ে দামী নির্বাচন, কত খরচ ভোটের বিরিয়ানিতে?
প্রখর রোদে প্রসেনজিতের ব্যাপারে কী বললেন ঋতুপর্ণা?
প্রখর রোদে প্রসেনজিতের ব্যাপারে কী বললেন ঋতুপর্ণা?
মহা ফ্যাসাদে ইমন চক্রবর্তী, পাপ যে বেড়েই চলেছে তাঁর!
মহা ফ্যাসাদে ইমন চক্রবর্তী, পাপ যে বেড়েই চলেছে তাঁর!
বাবা নাকি মা কার মতো দেখতে বিরাট-অনুষ্কার ছেলেকে? প্রত্যক্ষদর্শী জানাচ
বাবা নাকি মা কার মতো দেখতে বিরাট-অনুষ্কার ছেলেকে? প্রত্যক্ষদর্শী জানাচ
ইজরায়েলের টার্গেটে ইরানের পরমাণু কেন্দ্র
ইজরায়েলের টার্গেটে ইরানের পরমাণু কেন্দ্র
১৯৫২ থেকে ২০২৪, গণতন্ত্রের নানা চড়াই-উতরাই, নির্বাচনের নানা অজানা গল্প
১৯৫২ থেকে ২০২৪, গণতন্ত্রের নানা চড়াই-উতরাই, নির্বাচনের নানা অজানা গল্প
পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করার বিবৃতি এনেছিল চিন, আর নিজেরাই তা অমান্য করছে
পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করার বিবৃতি এনেছিল চিন, আর নিজেরাই তা অমান্য করছে