AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

‘আফগানিস্তানে গিয়ে কোরান পাঠ করেছিলেন লোকনাথ বাবা, আমার রোজা রাখার ইচ্ছে তো ওঁকে দেখেই’

আজ লোকনাথ বাবার তিরোধান দিবস। একটা দীর্ঘ সময় টেলিভিশনের পর্দায় লোকনাথ বাবার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখেছেন আমাকে মানুষ। এখনও মনে পড়ে প্রথম দিনের কথা।

'আফগানিস্তানে গিয়ে কোরান পাঠ করেছিলেন লোকনাথ বাবা, আমার রোজা রাখার ইচ্ছে তো ওঁকে দেখেই'
ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়
| Updated on: Jun 03, 2021 | 3:43 PM
Share

ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়:  আমি রোজা রেখেছিলাম পাঁচ দিনের জন্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় দৌলতে এ খবর নিশ্চয়ই আপনারা এত দিনে জানেন। তা নিয়ে কিন্তু কম ট্রোল হয়নি। ফেসবুক জুড়ে কত কথা…ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় মুসলিম হয়ে গিয়েছে…গরুর মাংস খাচ্ছে। অনেকে অনেক কিছু লিখেছিলেন। আমি চুপ ছিলাম। মুখ খুললাম অবশেষে…

আজ লোকনাথ বাবার তিরোধান দিবস। একটা দীর্ঘ সময় টেলিভিশনের পর্দায় লোকনাথ বাবার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখেছেন আমাকে মানুষ। এখনও মনে পড়ে প্রথম দিনের কথা। যখন জানাজানি হল, আমি ওই চরিত্রে অভিনয় করছি, ভীষণ ট্রোল্ড হয়েছিলাম। ফেসবুকে পোস্টের পর পোস্ট। আমাকে বাবার চরিত্রে মানাবে না, আমার দেহের গঠন অমন নয়। ভয় পেয়েছিলাম, কিন্তু লোকনাথ বাবার আশীর্বাদ নিয়ে ঢুকেছিলাম সেটে… মাস খানেকের মধ্যেই মানুষ অজান্তেই আমাকে লোকনাথ বাবা রূপে আপন করে নিল। আমার বারে বারে মনে হয়েছিল ওই চরিত্রটি করার আগে মানুষটার ব্যাপারে কিছু পড়াশোনা করা প্রয়োজন আমার।

যেমন ভাবা তেমন কাজ… নেট ঘেঁটে বই খুঁজে আমি তো অবাক। তিনি তো শুধু ধর্মগুরু নন। তাঁর ব্যপ্তি যে বিশাল। আমি জানতে পারলাম সারা বিশ্ব নাকি পায়ে হেঁটে ঘুরেছেন তিনি। যেখানে যেতেন সেখানকার ভাষা শিখে আসতেন লোকনাথ বাবা। অবাক হলাম আরও যখন জানতে পারলাম আফগানিস্তান গিয়ে উনি নাকি কোরান শরিফ শিখেছিলেন আবদুল গফফুর নামক এক ব্যক্তির কাছে। পাঠও করেছিলেন।  হিন্দু-মুসলমান ভেদাভাদ করেননি কখনও। কোনও ধর্মকে ছোট করেননি…কালের নিয়মে লোকনাথ শেষ হল… এ বার ঈদে আমার হঠাৎ মনে পড়ল বাবার কোরান শেখার কথা। মনে হল আমি যদি পাঁচ দিন রোজা রাখি কেমন হয়? রাখলাম। অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করলে নিজের ধর্ম ছোট হয়ে যায় এই শিক্ষা তো পাইনি ওই মানুষটার জীবনী পড়ে।

কিন্তু ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় রোজা রেখেছেন এ খবর প্রচার হতেই ট্রোলে ভরে উঠল সোশ্যাল মিডিয়া। কত লোকের কত কথা। মনে আছে বাংলাদেশের কিছু ভক্ত একদিন বলেছিলেন ওখানে বাবার যে মন্দির আছে সেখানে নাকি হিন্দু-মুসলিম সবাই যান। উনি ধর্মের বাছবিচার করেননি। যারা করছেন, করে থাকেন, কীসের কারণে? লকডাউনে কিছু মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছি আমি। সেখানেও আমাকে শুনতে হয়েছে, ওঁদেরকে কেন খাওয়াচ্ছেন ভাস্বর দা? ওঁরা তো বাংলাদেশি।… রোহিঙ্গা…। আরে যে মানুষটা ক্ষুধার্ত,  খেতে পারছেন না, তাঁকে কি খাবার দেওয়ার আগে আমি জিজ্ঞাসা করব, ‘ও ভাই…তুমি হিন্দু না মুসলিম’? পারব না। বাবা আমাকে সে শিক্ষা দেননি। আজকেও তাঁর তিরোধান দিবস উপলক্ষে কিছু মানুষকে খাইয়ছে পাশের বস্তিতে। ওই যে খাওয়ার পর তাঁদের মুখের হাসিটা…সেটাই অনেক। ওই হাসিতে ধর্মের বিভাজন নেই। আছে শুধু পেটের জ্বালা জুড়িয়ে আসার এক অপার্থিব আনন্দ।

আরও পড়ুন- অমিতাভের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে ইন্ডাস্ট্রি উত্তাল, রেখাকে একদিন বাড়িতে ডেকে জয়া বললেন…

‘জয় বাবা লোকনাথ’ করতে গিয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে আমার মধ্যে। প্রত্যক্ষ করেছি বেশ কিছু মজার ঘটনাও। দীর্ঘদিন ধরে একটি চরিত্রে অভিনয় করলে মানুষ কোথাও গিয়ে অভিনেতাকেই ওই চরিত্রের সঙ্গে কানেক্ট করে ফেলেন। যেমন ধরুন রামচন্দ্র বললে কিন্তু এখনও আমাদের সেই অরুণ গোভিলের মুখটাই মনে ভাসে। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। রাস্তায় দেখা হলেন প্রণাম করতে আসতেন অনেকেই। ছোট ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে দেখা হলে বলত, পরীক্ষার হলে যখন লোকনাথ বাবাকে স্মরণ করি তোমার মুখটাই কিন্তু মনে পড়ে ভাস্বরদা…। কত মানুষ নিজেদের কথা শেয়ার করতে আসতেন। ভাবতেন বাবার মতো অসীম ক্ষমতা হয়তো আমারও রয়েছে।

আমি লোকনাথ বাবা নই, তাঁর অনস্ক্রিন চরিত্র মাত্র। তবে প্যান্ডেমিকের সময় যখন মনে হল মানুষের মুখে একটু খাবার তুলে দেব তখন আমার ইচ্ছের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে এত মানুষ যে শুধুমাত্র আমাকে বিশ্বাস করে অর্থসাহায্য করলেন সে জন্য আমি কৃতজ্ঞ। কোনওদিন মনে হয়নি ওই ত্রাণের টাকা নিয়ে তঞ্চকতা করব। বাবা যে আমাকে সে শিক্ষা দেননি…।