Happy Teacher’s Day: ‘হলিউড মাত্র দু’টো ফ্লাইটের দূরত্বে অবস্থিত… আমার জীবনটাই পাল্টে গেল’, দামিনী বেনি বসু

Daminee Benny Basu: দামিনী সম্পর্কে TV9 বাংলাকে কী বললেন তাঁরই প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা? দামিনীই বা কি বললেন তাঁর নিজের ফ্রেন্ড-ফিলোজ়ফার-গাইড সম্পর্কে? কী বললেন তাঁর গুরু এরিক মরিস সম্পর্কে?

Happy Teacher's Day: ‘হলিউড মাত্র দু’টো ফ্লাইটের দূরত্বে অবস্থিত... আমার জীবনটাই পাল্টে গেল’, দামিনী বেনি বসু
গুরু এরিক মরিসের সঙ্গে বাঙালি অভিনেত্রী দামিনী বেনি বসু।
Follow Us:
| Updated on: Sep 05, 2022 | 11:24 AM

স্নেহা সেনগুপ্ত

আজ শিক্ষক দিবস। অভিনয় জগতেও শিক্ষকরা রয়েছেন। তাঁরা অভিনেতা গড়েন। তাঁরা একাধারে অভিনেতা এবং ফ্রেন্ড-ফিলোজ়ফার-গাইড। জানেন কি তাঁদেরই একজন বাঙালি অভিনেত্রী দামিনী বেনি বসু। ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’, ‘বন্য প্রেমের গল্প’, ‘দুধ পিঠের গাছ’, ‘দ্য পার্সেল’-এর মতো ছবিতে দাপিয়ে অভিনয় করেছেন। সেই দামিনী সম্পর্কে TV9 বাংলাকে কী বললেন তাঁরই প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা? দামিনীই বা কি বললেন তাঁর নিজের ফ্রেন্ড-ফিলোজ়ফার-গাইড সম্পর্কে? কী বললেন তাঁর গুরু এরিক মরিস সম্পর্কে?

তিন বছরে একটা কাজ করেন দামিনী… এর কারণ কী?

জীবনটা খুবই ছোট। শিল্পীদের জীবন আরও ছোট। তার উপর রিজিওনাল আর্টিস্টিক জীবন একেবারে ছোট্ট একটা পুকুরের মতো। সেখানেও যদি বারবার নবরূপে একই মাছ হিসেবে নিজেকে খুঁজে পাই, তা হলে পুকুরটা খুবই বোরিং লাগবে দেখতে। এছাড়া আমি খুবই উন্নাসিক। মনে করি শিল্পীদের শিল্প ছাড়া উন্নাসিকতার জায়গা খুব কম। আমি মধ্যবিত্ত। তাই যেটা আমার এরিয়া অফ এক্সপার্টিজ়, সেখানে স্নুটি হওয়াকে ভাল চোখেই দেখি। ফলে যতক্ষণ না যথেষ্ট চ্যালেঞ্জড হই, অভিনয় করি না। ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকে অভিযোগ করেন, তাঁদের কথা কারও মনে থাকে না। আমার সেই অভিযোগ করার জায়গা নেই। অনেক অফার আসে। একই ধরনের পার্ট বলে ফিরিয়ে দিই। আর যাঁরা আমার অভিনয় পছন্দ করেন, তাঁরা হয়তো এই কারণেই করেন, কারণ তাঁরা দেখতে চান পরবর্তীতে কোন চরিত্রে আমি অভিনয় করব।

দামিনীর ক্লাস অ্যাক্ট…

অভিনেতা গড়ার কারিগরের নাম দামিনী। তাঁকে গড়েছেন হলিউডের অভিনেতা এরিক মরিস। TV9 বাংলার সঙ্গে দামিনী শেয়ার করেছেন তাঁর জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায়। তিনি বলেছেন:

আমি নিজেকে আপগ্রেড করতে ভালবাসি। জীবনের একটা পর্যায়ে এসে জানতে চেয়েছিলাম, অভিনয়ের আর কী নতুন স্টাইল তৈরি হচ্ছে গোটা বিশ্বে। নতুন প্রশিক্ষকদের লেখা, বই, সাক্ষাৎকার পড়তে ও দেখতে শুরু করেছিলাম। তখনই দেখি, বারবার একটা নামই ঘুরে ফিরে আসছে। সকলেই স্বীকৃতি দিচ্ছেন এরিক মরিসকে। তিনি পুরনো দিনের মানুষ। অসম্ভব প্রচারবিমুখ। ৯০ বছর বয়স। হলিউডে তিনি সেনসেশন। গত ৬০ বছরে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। জনি ডেপ, আর্নল্ড সোয়ার্জ়েনেগার থেকে শুরু করে প্রায় সকলেই তাঁর অভিনয়ের মেথডকে অনুসরণ করেন। ২০১২ সাল নাগাদ এরিকের বই পড়তে শুরু করি এবং ভাবতে থাকি ওঁর বাড়ির ঠিকানা কী?

গুরু এরিক মরিসের সঙ্গে দামিনী বেনি বসু…

আমারও সে সময় ব্যক্তিগত জীবনের মোড় ঘুরতে শুরু করেছিল। বিবাহবিচ্ছেদ হয় আমার। তাই-ই হয়তো নিজেকে আরও বেশি করে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছিলাম। ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে শুরু করেছিলাম। এরিকের ই-মেইল অ্যাড্রেস পাই একদিন। তাঁকে একটি ই-চিঠি পাঠিয়ে ফেলি। ৭ দিন ধরে অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু ই-মেইল পাঠানোর সাহস সঞ্চয় করতে পারছিলাম না। ভাবছিলাম, যদি লোকে হাসাহাসি করে। ৭ দিন পর সাহসী হয়ে অবশেষ চিঠি পাঠাই। আমার আজও মনে আছে, রাতেরবেলায় মেইল পাঠিয়েছিলাম। পরদিন দুপুরের মধ্যে এরিক মেইলের উত্তর দিয়েছিলেন। সেটা যখন খুলি, প্রথমেই চোখে পড়ে মেইলের নীচে লেখা ‘sent from iphone of eric morris’। নামটা দেখে ফ্রিজ় করে যাই। মেইল বন্ধ করে দিই। অর্ধেক দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর মেইলটা পড়েছিলাম। এরিক খুবই আগ্রহী ছিলেন। কারণ, ভারতবর্ষ থেকে ওঁকে আগে কেউ মেইল লেখেননি। তারপর থেকে আমি এরিককে মেইল পাঠাতে শুরু করি। পরের দিকে আরও একটু সাহস বেড়ে যাওয়ার পর আমি আমার ছোট-ছোট পারফরম্যান্স ক্লিপস পাঠাতে থাকি তাঁকে। তিনি আমাকে খুবই উৎসাহ দিতে থাকেন। একটা সময় পর আমি বুঝলাম, এটা খুবই মুর্খামি হচ্ছে। কারণ, একই পৃথিবীতে একই সময় উনিও বেঁচে, আমিও বেঁচে। একটু দূরে আছেন ঠিকই। জীবনে অনেক ঝুঁকিই নিয়েছি। ফলে আফসোস নিয়ে থাকতে চাইনি যে, একই গ্রহে থেকে আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করিনি। একদিন জীবনের সব কিছু বাজি রেখে এরিকের থেকে প্রশিক্ষিত হতে ছুট্টে গিয়েছিলাম হলিউড। একটা জিনিসই আবিষ্কার করতে পেরেছিলাম, হলিউড মাত্র দু’টো ফ্লাইটের দূরত্বে অবস্থিত। তারপর আমার জীবনটাই পাল্টে গেল।

হলিউডে কাজের অফার…

আমার প্রচুর বন্ধু কাজ করেন হলিউডে। আমাদের এখানে যেমন ‘এই দাদা আমাকে পছন্দ করেন বলে ছবিতে কাস্ট করেন’, তেমনটা কিন্তু হলিউডে হয় না। সেখানে এজেন্সিই ইন্ডাস্ট্রি। ফলে কোনও অভিনেতাকে পছন্দ থাকলেও, তাঁদের হাত বাঁধা। আমি তো ‘ওয়ার্ক ভিসা’য় যাই না। আমার কাছে যতক্ষণ না ‘ওয়ার্ক পারমিট ভিসা’ আসছে, হলিউডের এজেন্সি নিতে পারব না। আমাকে রিপ্রেজ়েন্ট করতে পারবে না। আইনি সমস্যায় পড়ে যাবে। আমি হলিউডে কাজের অফার পেয়েছি, অর্থাৎ আমার বন্ধুদের নানারকম প্রজেক্ট হয়েছে। সেখানে কাজ করার কথা হয়েছে। ২০২০য় করোনার আগে একটা ওয়েব সিরিজ় নিয়ে আমরা কয়েকজন বন্ধু কাজ করছিলাম। কিন্তু প্যান্ডেমিকের জন্য আটকে গিয়েছিল। আমি এখনও এরিকের ক্লাসেই ফিরে যেতে পারিনি। এরিকের এখন ৯০ বছর বয়স এবং তাঁর কো-মর্বিডিটি রয়েছে। অনলাইনেই ক্লাস নিচ্ছেন। ২০২৩-এ আমি হয়তো আবার ফেরত যাব মার্কিন মুলুকে আমার গুরুর কাছে।

দামিনী নিজেকে ‘লাকি’ মনে করেন

আমি মনে করি এটা আমার কর্মফল। আমার গুরুভাগ্য খুবই ভাল। ছাত্রদেরকে কখনও বলি না আমি তাঁদের টিচার। তাঁদের টিচার এরিক মরিস। আমি কেবলই একজন সিনিয়র স্টুডেন্ট। আমি আমার জার্নি তাঁদের সঙ্গে শেয়ার করি। আর নিজেকে গুরু ভাবার ধৃষ্টতায় আমি এখনও পৌঁছতে পারিনি। আমার গুরু এখনও জীবিত। আসলে আমার ছাত্র-ছাত্রীদের প্রকৃত গুরু এরিক। আমি নই। এরিকই আমার মাধ্যমে ওদের প্রশিক্ষিত করে প্রতিদিন। আজ আরও একটা কথা বলতে চাই, এরিকের মতো গুরু পেয়ে আমি নিজেকে পাল্টাতে পেরেছি। আমি এরকমটা একেবারেই ছিলাম না। যাঁরা আমাকে আগে দেখেছেন, তাঁরা জানেন সেটা। আমি ছাত্রছাত্রীদের প্রচণ্ড বকুনি দিই এবং খুব ভালবাসি…

ছাত্র এবং অভিনেতা রাহুল দেব বসুর সঙ্গের দামিনী…

দামিনী সম্পর্কে কী বলেছেন তাঁর ছাত্র অভিনেতা রাহুল দেব বসু…

দামিনীর অভিনয় শেখানোর পদ্ধতি ভীষণই অন্যরকম। সবকিছুকে অন্য আঙ্গিকে দেখতে চেষ্টা করেন তিনি। তথাকথিত ধাঁচে অভিনয় শেখাতে চেষ্টা করেন না। একজন অভিনেতাকে সামাজিকভাবে আবেগ দিয়ে শেখাতে চেষ্টা করেন। এরিক মরিসের মেথড শেখান তিনি। মনে হয়, আমার টিচার দামিনী ও দামিনীর টিচার এরিক—এঁরা দু’জনেই আমার জীবন পাল্টে দিয়েছেন। আমাকে অনেক ভাল অভিনেতা হতে সাহায্য করছেন তাঁরা।

ছাত্রী এবং অভিনেত্রী ঊষসী রায়ের সঙ্গে দামিনী…

দামিনী সম্পর্কে কী বলেছেন তাঁর ছাত্রী অভিনেত্রী ঊষসী রায়…

ঠিক কোথা থেকে শুরু করব, সত্যিই জানি না। দামিনীদি নিঃসন্দেহে আমার টিচার আর আমি তাঁর ছাত্রী। কিন্তু আমার জীবনে তাঁর অবদান অ-নে-এ-এ-এ-ক-টা বেশি। আমি আজ যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, একজন অভিনেত্রী হিসেবে হোক, একজন মানুষ হিসেবে হোক… সেখানে যতটা অবদান আমার বাবা-মায়ের, ঠিক ততটাই অবদান দামিনীদির। এরকম অনেক সময় হয়েছে, কিছু-কিছু সমস্যা আমি বাবা-মাকে বলতে পারিনি, কিন্তু দামিনীদিকে পেরেছি। তিনিই সেখান থেকে আমাকে সমাধান করে দিয়েছেন। পথ দেখিয়েছেন। তিনি আমার কাছে পিলার অফ স্ট্রেন্থের মতো। আমি ভেঙে পড়লে জানি, দামিনীদি ঠিক আমাকে সামলে নেবেন। আমরা যে পেশা বেছে নিয়েছি, সেটা সহজ নয়। অনেক চড়াই-উৎরাই রয়েছে। সেখানে দামিনীদিই আমাকে সাহায্য় করেন। কোনও চরিত্রে অভিনয় করার আগে দামিনীর সঙ্গে আলোচনা করি। এরকম অনেকবার হয়েছে, তিনি আমাকে নতুন কিছু শিখতে বলছেন, আমার মনে প্রশ্ন জাগছে, কেন বলছেন। কিন্তু দেখেছি, তিন-চার মাস পর কিংবা এক বছর পর সেটা কাজে লেগে গিয়েছে। শিক্ষকরা তো সব আগে থেকে বুঝে যান, তাই নয় কী?