Sleep Deprivation Among Women: পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ঘুম বেশি জরুরি কেন?
International Women's Day 2024: দিনের পর দিন ঘুম না হওয়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, হজমের গোলমালের মতো নানা ক্রনিক অসুখ ডেকে আনতে পারে। অনেক সময় রাত জেগে পড়াশোনা করতে হয় কিংবা অফিসের কাজ থাকে। ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম হয় না। কী করবেন?

মেঘা মণ্ডল
ঘুম—অনিদ্রায় ভুগলেও খুব বেশি আলোচনা হয় না এই বিষয় নিয়ে। তবু, ঘুম জরুরি। আপনার খাবার খাওয়া আর নিঃশ্বাস নেওয়ার মতোই এই বিষয়টা জরুরি। তার উপর আপনি যদি মহিলা হয়ে থাকেন, আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে ঘুমকে। রাত ১১টায় বিছানায় শুয়ে পড়েন। কিন্তু চোখের পাতায় ঘুম আসতে-আসতে রাত ১টা বেজে যায়। মাঝরাতে বার বার ভেঙে যায়। দিনের বেলায় যেখানে-সেখানে ঘুমিয়ে পড়েন। রাতের পর রাত ভাল করে ঘুম হচ্ছে না। ঘুমের ঘোরে জোরে জোরে নাক ডাকছেন। মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকছে। এমন হাজারো সমস্যায় ভুগছে নারীরা। অধিকাংশের বেশি মানুষই জানেন না, তাঁদের শরীরে ঘুম কতটা দরকার।
প্রতি বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। এই বিশেষ দিনটাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের সচেতনমূলক অনুষ্ঠানও হয়, যেখানে নারী সুরক্ষা থেকে স্ত্রীরোগও থাকে আলোচনার বিষয়। মেন্সট্রুয়াল হেলথ থেকে সার্ভাইক্যাল ক্যানসার নিয়ে মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা হয়। তবে সেখানে ঘুম নিয়ে খুব একটা আলাপ-আলোচনা হতে শোনা যায় না। কিন্তু পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের দেহে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। বাইরের কাজের সঙ্গে বাড়ির অধিকাংশ কাজের দায়িত্ব নারীর কাঁধে থাকে। তাঁদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য ঘুম অপরিহার্য। তাই এই বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে নারী দিবসের ঠিক আগের দিন, ৭ মার্চ, বৃহস্পতিবার বেথুন কলেজের ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের নিয়ে ‘ইনস্টিটিউট অফ স্লিপ সায়েন্স’ আয়োজন করেছিল একটি ওয়ার্কশপ। উপস্থিত ছিলেন ‘ইনস্টিটিউট অফ স্লিপ সায়েন্স’-এর প্রধান সোমনাথ মাইতি, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ইন্দ্রাণী লোধ, মনোচিকিৎসক ডাঃ ভার্গভি চট্টোপাধ্যায় ভট্টাচার্য, পালমোনোলজিস্ট ডাঃ শিভারেশমী উন্নিথান এবং অন্যরা।
এই অনুষ্ঠানের আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল মহিলাদের মধ্যে স্লিপ অ্যাপনিয়া। এইমসের (AIMS) গবেষকদের দাবি, ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’-য় আক্রান্ত ভারতীয়ের সংখ্যা কিছু দিনের মধ্যে ১০ কোটি ছাড়াতে পারে। সেখানে মহিলারাও রয়েছেন। ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা তারই লক্ষণ। পালমোনোলজিস্ট ডাঃ শিভারেশমী উন্নিথান বলেন, “ঘুমের মধ্যে অস্থিরতা, কম ঘুমও স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ। মূলত ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হলে এই অবস্থা তৈরি হয়। পুরুষদের তুলনায় মহিলারা ঘুমের মধ্যে কম নাক ডাকেন। তাই খুব বেশি পাত্তা দেন না স্লিপ অ্যাপনিয়াকে। কিন্তু স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হলে নাক নাও ডাকতে পারেন।” তাই ঘুম না হওয়া, ঘুমের মধ্যে অস্থিরতাকে হাওয়া উড়িয়ে দিতে বারণ করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
দিনের পর দিন ঘুম না হওয়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, হজমের গোলমালের মতো নানা ক্রনিক অসুখ ডেকে আনতে পারে। অনেক সময় রাত জেগে পড়াশোনা করতে হয় কিংবা অফিসের কাজ থাকে। ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম হয় না। কী করবেন? বিশেষজ্ঞরা কোয়ালিটি অফ স্লিপ (Quality of Sleep) ও কোয়ান্টিটি অফ স্লিপের (Quantity of Sleep) উপর জোর দিয়েছেন। অর্থাৎ, আপনার যদি ৫ ঘণ্টা গাঢ় ঘুম হয়, তখন আর কিছুর দরকার নেই। কিন্তু ৭ ঘণ্টা ঘুমের মধ্যেও যদি বার বার ঘুম ভাঙতে থাকে, তাহলে সাবধান হওয়ার দরকার। এছাড়া রাতে কম ঘুম হলে দিনের মধ্যে যে কোনও সময় আপনি পাওয়ার ন্যাপ নিয়ে নিতে পারেন।
এছাড়াও মানসিক স্বাস্থ্য কীভাবে আপনার ঘুমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে তা-ও আলোচনা করা হয় বেথুন কলেজে অনুষ্ঠিত ওই আলোচনাসভায়। আজকাল বেশিরভাগ মেয়েরাই পিসিওডি-এর সমস্যায় ভুগছেন। নেপথ্যে অস্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল দায়ী থাকলেও, এই অবস্থায় হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। এর জেরে বাড়ে ডিপ্রেশন, অ্যানজ়াইটি। আর এই মানসিক অবস্থা আপনার ভাল ঘুমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কীভাবে বেরোবেন এই অবস্থা থেকে? এ প্রসঙ্গে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ইন্দ্রাণী লোধ বলেন, “আজকাল স্কুল-কলেজে সাইকোলজিস্ট থাকেন। এমনকি যে কোনও ক্লিনিক, নার্সিংহোমে সাইকোলজিস্ট থাকেন। তাঁদের কাছে যান। মনের কথা বলুন। ঠিক কী কারণে মনের মধ্যে অস্বস্তি চলছে, সেটা বোঝার চেষ্টা করুন।” আজকাল ভীষণ ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্যকে। মহিলাদের ক্ষেত্রে যেহেতু হরমোন ইমব্যালান্স খুব পরিচিত, সেখানে মানসিক চাপ বেড়ে যাওয়াও কোনও নতুন ঘটনা নয়। বরং, নারীদের এই জটিলতা কাটাতে হবে। তবেই ভাল ঘুম হবে এবং সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন।
কীভাবে ভাল ঘুমের সাইকেল বজায় রাখবেন, সেই টিপস শেয়ার করেছেন বিশেষজ্ঞেরা:
***নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোতে যাওয়া এবং নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন।
***ফোন, সোশ্যাল মিডিয়াকে দূরে রেখে ঘুমোতে যান। বিছানা থেকে কমপক্ষে ৫ ফিট দূরে ফোন রেখে ঘুমোন।
***চোখের পাতায় ঘুম না এলে বই পড়ুন, গান শুনুন। কিন্তু স্ক্রিনের দিকে তাকাবেন না।
***বিকালের পর চা-কফি এড়িয়ে চলুন। এসব পানীয়ে থাকা ক্যাফেইন যৌগ আপনার রাতের ঘুম কাড়তে পারে।
***মানসিক চাপ কমান। দুশ্চিন্তাকে দূরে সরিয়ে ঘুমান।
***রোদে দাঁড়ান। দেহে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিও ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
***ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলুন।





