IVF And Pregnancy: অনেক মহিলা IVF-এর দিকে ঝুঁকছেন, কেন?

Healthy Pregnancy Tips: আইপিল (I-pill) একটি অত্যন্ত খারাপ ওষুধ, শরীরে অনেক রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। যেখান থেকে পরবর্তীতে গর্ভধারণ সমস্যার হয়ে যায়। প্রয়োজনে কোনও ফার্টিলিটি ক্লিনিকে গিয়েও পরামর্শ নিতে পারেন

IVF And Pregnancy: অনেক মহিলা IVF-এর দিকে ঝুঁকছেন, কেন?
৩৫-এর পর মাতৃত্ব?
Follow Us:
| Updated on: Mar 13, 2024 | 6:31 AM

রেশমী প্রামাণিক

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় সুন্দর একটি পোস্ট করে নিজের প্রেগন্যান্সির খবর শেয়ার করেছেন দীপিকা পাড়ুকোন (রণবীর সিং-ও সন্তানসম্ভবা দীপিকার সেই পোস্ট শেয়ার করেছেন)। এই খবর প্রকাশ্যে আসার পর শুভেচ্ছার বন্যায় ভেসেছেন তাঁরা। দেশের সবচেয়ে বেশি চর্চিত হাই-প্রোফাইল প্রি-ওয়েডিংয়ে মঞ্চে একসঙ্গে পারফর্ম করতেও দেখা গিয়েছে দীপিকা-রণবীরকে। অনুষ্ঠানে সপরিবারে দেখা গিয়েছে রণবীর কাপুর-আলিয়া ভাটকে। সঙ্গে ছিল কন্যা রাহাও। এরপরই সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। আলিয়া ভাট আর দীপিকা পাড়ুকোনের ছবি জুড়ে একটি কোলাজ বানানো হয়েছে। আলিয়ার ছবির উপর লেখা: ‘Normal Becoming a Mother at 29’ (‘স্বাভাবিক একজন মা হচ্ছেন ২৯-এ’), দীপিকা পাড়ুকোনের ছবির উপর লেখা: ‘Also Normal Becoming a Mother at 38’ (‘এটাও স্বাভাবিক যে একজন মা হচ্ছেন ৩৮-এ’)। ছবি ২টির তলায় লেখা: ‘The right age of becoming a mother is when the woman decides she wants to!’ (‘মা হওয়ার সঠিক বয়স সেটাই, যখন একজন মহিলা মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন’)। এই লেখাটিতে অধিকাংশ মহিলাই সহমত পোষণ করেছেন।

কেউ লিখেছেন: এখন অনেকেই ‘Childless’ (সন্তানহীন) থাকতে চাইছেন এবং এটা সম্পূর্ণভাবে একজন নারী (এবং পুরুষের) নিজস্ব সিদ্ধান্ত। কেউ চাইছেন, দত্তক নিতে। মেয়েরা যে শুধুমাত্র সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র নন, এই মধ্যযুগীয় ধারণা থেকে অনেকেই এখন বেরিয়ে এসেছেন। সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখানোর সিদ্ধান্ত দম্পতির একান্ত সিদ্ধান্ত। তবুও কিছু প্রশ্ন সকলের মনে থেকেই যায়। আর সেইসব প্রশ্ন নিয়েই TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয় Consultant Gynecologist & Obstetrician তথা বিশিষ্ট চিকিৎসক মিতালি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে।

প্রশ্ন: গর্ভধারণের সঠিক বয়স কোনটি?   

ডাঃ মিতালি: ২১-৩০ বছর পর্যন্ত সময়টিকে মহিলাদের গর্ভধারণের আদর্শ বয়স বলে ধরা হয়। তবে এখন পড়াশোনা, কেরিয়ার গড়ে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে তবেই মহিলারা বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন। সেক্ষেত্রে ৩০-এর আগে মহিলারা বিয়েই করেন না। আর তাই এখন বহু মহিলাই আছেন, যাঁরা প্রথমবার মা হচ্ছেন ৩৫ বছর বয়সে এসে বা ৩৫-এর পরে।

প্রশ্ন: ৩৫ বছর বয়সের পর গর্ভধারণের ক্ষেত্রে কী-কী ঝুঁকি থাকে?

ডাঃ মিতালি: ৩৫ পেরোলে মহিলাদের শরীরে হরমোনঘটিত নানা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চলতে থাকে। আজকাল সুগার, প্রেশার, থাইরয়েড, কোলেস্টেরল এসব সমস্যা ঘরে-ঘরে। ৩০ পেরোনোর আগেই অবশ্য এসব রোগব্যাধি চেপে বসছে। হবু মায়ের যদি সুগার বা হাইপার টেনশন থাকে, সেখান থেকে একটু ঝুঁকি থাকে বই কী! এছাড়াও ৩৫ বছর বয়সে এসে মা হলে গর্ভস্থ সন্তানের অনেক রকম ঝুঁকি থাকে। ডাউন সিনড্রোম, জিনগত সমস্যা, হরমোনাল ইমব্যালান্সের সমস্যা হতে পারে। বাড়ে হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সির ঝুঁকিও।

প্রশ্ন: আজকাল অধিকাংশ মেয়েই PCOS এর সমস্যায় ভুগছেন। তাঁদের ক্ষেত্রে সফল গর্ভধারণ কি সম্ভব?

ডাঃ মিতালি: PCOS-থাকলে সেখান থেকে গর্ভধারণের সমস্যা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিসক্যারেজের ঝুঁকি থাকে। PCOD-হল লাইফস্টাইল ডিজিজ, যা কখনও সম্পূর্ণ সারে না। অনিয়মিত পিরিয়ড, সাইকেল ঠিক না-থাকলে, ওজন বাড়লে গর্ভধারণে সমস্যা হয়। পরীক্ষা করলে Biochemical Pregnancy আসে। অর্থাৎ টেস্ট পজিটিভ হলেও ২ মাস পর মিসক্যারাজ হয়ে গেল। অজান্তেই মিসক্যারাজ হয়, আর এটা বার বার হতে থাকে। তবে চিকিৎসকের সুপরামর্শ মেনে চললে গর্ভধারণ সম্ভব।

প্রশ্ন: PCOS-এর সমস্যায় অনেককেই একটানা pill খেতে হয়। কতখানি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে?

ডাঃ মিতালি: PCOS-এর পিরিয়ড অনিয়মিত হয়। ডিম্বাণু তৈরি হয় না। এই সময় শরীরে হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। হরমোনের মধ্যে সমতা আনতেই এই ওষুধ দেওয়া হয়। নইলে পিরিয়ডের সাইকেল স্বাভাবিক হয় না। যে কোনও ওষুধেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। তাই চেষ্টা করতে হবে শুধুমাত্র ওষুধের ভরসায় না-থেকে নিজের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার। সুষম আহার, ফল-সবজি বেশি খাওয়া, রোজ ঘড়ি ধরে শরীরচর্চা ছাড়া উপায় নেই। ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকলে তবেই সমস্যার সমাধান হবে।

প্রশ্ন: অনেক মহিলাই এখন IVF-এর দিকে ঝুঁকছেন। নেপথ্য কারণ কি স্ট্রেসফুল লাইফস্টাইল?

ডাঃ মিতালি: অনেকাংশেই তাই। মেয়েরা যথোপযুক্ত বয়সে বিয়ে করছেন, শারীরিক নানা সমস্যা থাকছে, বার বার মিসক্যারেজ হচ্ছে, PCOD-র সমস্যা থাকছে। এই সব কারণ থেকেই IVF-এর দিকে ঝুঁকছেন মহিলারা। অনেকের জন্মগতভাবে ইউটেরাসে ত্রুটি থাকে, আর্লি মেনোপজ়-এর (Early Menopause)-ও ইতিহাস থাকে পরিবারে। কারোও হয়ত দুটো ফ্যালোপিয়ান টিউবেই ব্লকেজ থাকে। তখন তাদের  IVF-ছাড়া গতি থাকে না। অনেকেই এখন এন্ডোমেট্রিওসিসের শিকার। তাঁদেরও গর্ভধারণে বারবার বাধা আসে।

প্রশ্ন: সুস্থ ও স্বাভাবিক প্রেগন্যান্সির জন্য মেয়েরা কী-কী মেনে চলবেন?

ডাঃ মিতালি: কোন বয়সে মা-হতে চান এটা যে কোনও মেয়ের স্বাধীন সিদ্ধান্ত। তবে তার আগে নিজের খেয়াল রাখা, সুস্থ থাকা, সুগার-প্রেশার-কোলেস্টেরল এই সব লাইফস্টাইল ডিজ়িজ় থেকে দূরে থাকতে হবে। নিজেকে কর্মক্ষম থাকতে হবে। নিয়মিত যোগব্যায়াম, শরীরচর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা আর ক্যালোরি মেপে খাবার খাওয়া এটা করতেই হবে। ওজন বাড়লেই সমস্যার শুরু। সারাদিনের পরিশ্রম শেষে ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরে একপ্লেট বিরিয়ানি আর একটা এগরোল খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া একদম উচিত না। আবার অনেকে অবশিষ্ট বিরিয়ানি বা ফাস্টফুড দিয়ে পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট সারেন। এই অভ্যাস থেকে এখনই বেরিয়ে আসুন।

প্রশ্ন: প্রেগন্যান্সিতে প্রি-প্ল্যানিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

ডাঃ মিতালি: এখনকার লাইফস্টাইলে প্রি-প্ল্যানিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তো বলব, বিয়ের পর পরই স্বামী-স্ত্রীর একসঙ্গে কোনও গাইনোকোলজিস্টের কাছে যাওয়া উচিত। একটা বেসিক প্রি-চেকআপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের কোনও শারীরিক সমস্যা আছে কি না, প্রয়োজনীয় রক্তপরীক্ষা, ঠিক কত বছর পর তাঁরা সন্তান চাইছেন, গর্ভনিরোধক সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা প্রয়োজন। অনেকেই অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ এড়াতে আইপিল (I-pill) খান।  একটি অত্যন্ত খারাপ ওষুধ, শরীরে অনেক রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। যদি একান্তই খেতে হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খান। অনেক সময় আইপিল খাওয়ার পরও গর্ভধারণের সম্ভাবনা থেকে যায়।  প্রয়োজনে কোনও ফার্টিলিটি ক্লিনিকে গিয়েও পরামর্শ নিতে পারেন।

প্রশ্ন: Egg Freezing-এর চলও বাড়ছে শহরাঞ্চলে। কতটা উপযোগী এই পদ্ধতি? সমস্যাই বা কী-কী?

ডাঃ মিতালি: খুবই ভাল উদ্যোগ। যিনি আগে থেকে জানতে পারছেন যে, তাঁর কোনও শারীরিক সমস্যা রয়েছে, কোনও কারণে কেমোথেরাপি হলে অথবা পারিবারিক ইতিহাসে আর্লি মেনোপজ থাকলে আগে থেকে ডিম্বাণু সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। যাঁরা ৩৫-এর পর মা-হতে চাইছেন, এমন অনেকেই ডিম্বাণু সংরক্ষণ করছেন। এর জন্য সময় থাকতে থাকতেই ফার্টিলিটি ক্লিনিকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

প্রশ্ন: আর কী-কী পরামর্শ দেবেন?

ডাঃ মিতালি: ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, বাড়তে দিলে চলবে না। পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত ব্লিডিং, পেটব্যথা এসব সাধারণ বলে উপেক্ষা নয়। প্রথম থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বছরে অন্তত একবার করে USG করাতে পারলে ভাল। নিজের সচেতনতা বাড়ান। কোনও কিছু চেপে রাখবেন না। আপনি সুস্থ থাকলে তবেই পরিবারের সকলে ভাল থাকবেন।