Alzheimer’s disease: ঢাকের আওয়াজে ফিরে আসবে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি, অ্যালঝাইমার্স ও ডিমেনশিয়া কি সারে?

Dementia: পছন্দের সুরে মন ভাল হয়। আবার কখনও বিশেষ কোনও গানের সুরে মন শান্ত হয়। এমনকী গান স্মৃতি ফেরাতেও সাহায্য করে...

Alzheimer's disease: ঢাকের আওয়াজে ফিরে আসবে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি, অ্যালঝাইমার্স ও ডিমেনশিয়া কি সারে?
কেন বাড়ছে মানসিক রোগ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 22, 2022 | 9:48 PM

বাড়ি, ঘর, ঠিকানা কিছুই নেই স্মৃতিতে, একই ওষুধ ভুল করে দিনের মধ্যে বার পাঁচেক খেয়ে ফেলা। দুপুর নাকি বিকেল ঠাওর করতে না পারা, চেনা মানুষকে বেমালুম চিনতে না পারা—এসবই হল অ্যালঝাইমার্সের লক্ষণ। গতকাল, বুধবার ছিল বিশ্ব অ্যালঝাইমার্স দিবস। মূলত প্রবীণরাই এই সমস্যার শিকার। সম্পূর্ণভাবে এই রোগ যে সারানো যায় না, একথা চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞরা একাধিকবার বলেছেন। তবে আগে থেকে সতর্ক হলে এই সমস্যা কিছুটা এড়ানো সম্ভব বলে মত চিকিৎসকদের। কোভিড-পরবর্তী সময়ে এই সমস্যা বেড়েছে বলে মত চিকিৎসকদের। দীর্ঘদিন ঘর বন্দি, পরিচিতজনদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎও নেই।

যে কারণে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, বাড়ির বাইরে বেরোতে। সকলের সঙ্গে মেলামেশা করতে। সামাজিক হলে তবে কিছুটা সমাধান হবে সমস্যার। কলকাতা চ্যাপ্টার অফ অ্যালঝাইমার্স অ্যান্ড রিলেটেড ডিসঅর্ডার সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার (ARDSI) সম্পাদক নীলাঞ্জনা মৌলিক সম্প্রতি ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে বলেছেন, “গত দু’বছরে মানুষের সঙ্গে মানুষদের দেখা সাক্ষাৎ নেই। মন খুলে কথা বলা, আড্ডা নেই। যে কারণে বাড়ছে ডিমেনশিয়া। শরীর এবং মনেও তার প্রভাব পড়ছে। যত বেশি মানুষ মানুষের সঙ্গে মিশবে, কথা বলবে, ততই মস্তিষ্কের কোষ সচল থাকবে। কোভিড-পর্বের পর দেখা গিয়েছে অধিকাংশ মানুষ বাড়িতে থাকতেই পছন্দ করছেন। এখানেই ক্ষতি হচ্ছে। যত দ্রুত মানুষ আবার আগের জীবনে ফিরে আসতে পারবেন, ততই মঙ্গল। মন ভাল থাকবে, শরীর ভাল থাকবে।”

অ্যালঝাইমার্স এবং ডিমেনশিয়ার চিকিৎসায় ইন্সটিটিউট অফ নিউরো-সায়েন্স (কলকাতা) মিউজিক থেরাপি ব্যবহার করে। প্রাথমিকভাবে যে সব রোগীরা অ্যালঝাইমার্সের সমস্যা নিয়ে আসেন, তঁদের এই ক্লিনিক্যাল ট্রিটমেন্টের মধ্যেই রাখা হয় মিউজিক থেরাপি। ৫০ শতাংশ অ্যালঝাইমার্স এবং ডিমেনশিয়ার সমস্যা বেড়েছে কোভিড-পরবর্তী সময়ে। ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’-র প্রতিবেদনে এর উল্লেখ রয়েছে।

কী এই মিউজিক থেরাপি পছন্দের সুরে মন ভাল হয়। আবার কখনও বিশেষ কোনও গানের সুরে মন শান্ত হয়। এমনকী গান স্মৃতি ফেরাতেও সাহায্য করে। গবেষকদের মতে, তেমনভাবে শোনাতে পারলে হতাশার রোগী ভুলে যেতে পারেন তাঁর কষ্টের কথা, ব্যথা–বেদনায় ভারাক্রান্ত মানুষ সাময়িকভাবে হলেও চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারেন৷ অনিদ্রার রোগীর চোখে নেমে আসতে পারে শান্তির ঘুম৷ মনের অসুখও সারাতে সাহায্য করে এই মিউজিক থেরাপি। পছন্দের সুর, গান সরাসরি আঘাত করে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশে। আবেগ নিয়ন্ত্রিত হয় এই অংশ থেকেই। যে কারণে পছন্দের গানে স্নায়ু উদ্দীপিত হয়। সুরে যখন মন নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন ওষুধের মাত্রাও কমে যায়। আজকাল অধিকাংশ মানুষ স্ট্রেস, টেনশনে ভুগছেন। আর এই স্ট্রেস থেকে মুক্তি দিতেও ব্যবহার করা হয় মিউজিক থেরাপি। আর তা-ই অ্যালঝাইমার্সের চিকিৎসায় মিউজিক থেরাপিতেই ভরসা রাখছেন চিকিৎসকেরা। এই থেরাপি কাজ করে ম্যাজিকের মতো, প্রমাণও পেয়েছেন তাঁরা।

বিশ্ব অ্যালঝাইমার্স দিবসে বিশেষ একটি কর্মশালার আয়োজন করেছিল ইন্সটিটিউড অফ নিউরোসায়েন্স (কলকাতা)। সেখানেই নিউরোলজিস্ট ডা. সিদ্ধার্থশঙ্কর আনন্দ জানান, বিশেষ শব্দের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে নির্দিষ্ট স্মৃতি। যে কারণে অ্যালঝাইমার্সের রোগীদের ঢাকের আওয়াজ শোনানোর নিদান দিয়েছেন তিনি। ঢাকের আওয়াজে ফিরে আসবে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি। সেই সঙ্গে প্রতি চার থেকে পাঁচ মাস অন্তর চিকিৎসকের কাছে অবশ্যই যেতে হবে, নিয়মমাফিক খেতে হবেন ওষুধও।

সাম্প্রতিক তথ‌্য অনুযায়ী, ভারতবর্ষে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩৮ লক্ষ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতবর্ষে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হবেন প্রায় ১ কোটি ৬৩ লক্ষেরও বেশি মানুষ। রাজ্যেও বাড়ছেন আক্রান্তের সংখ্যা। এর পিছনে মূল কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়েছে অসচেতনতাকে। বয়স যত বাড়ে, ততই ক্ষয় হতে থাকে স্নায়ুকোষের। এখান থেকেই আসে স্মৃতিভ্রংশের সমস্যা। চিকিৎসা পরিভাষায় এই রোগই হল ডিমেনশিয়া, যা অ্যালঝাইমার্সের অন্যতম কারণ।