Pre-eclampsia: রক্তচাপজনিত ভয়ঙ্কর অসুখ প্রি-এক্লাম্পজিয়া! প্রেগন্যান্সির সময়ে কী করবেন?

Blood Pressure Disorder: বিশেষজ্ঞরা এও বলছেন, প্রিএক্লাম্পজিয়ার মতো ভয়ানক পরিস্থিতি শরীরের অভ্যন্তরীণ নানা অঙ্গের বিস্তর ক্ষতিসাধন করে থাকে। সবচাইতে বড় ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে গর্ভস্থ ভ্রূণের।

Pre-eclampsia: রক্তচাপজনিত ভয়ঙ্কর অসুখ প্রি-এক্লাম্পজিয়া! প্রেগন্যান্সির সময়ে কী করবেন?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 15, 2022 | 11:30 PM

উচ্চ রক্তচাপজনিত ভয়ঙ্কর অসুখ প্রিএক্লাম্পজিয়া (Pre-eclampsia)। প্রেগন্যান্সির (Pregnancy) সময়ে এই রোগ হানা দিতে পারে। অসুখটি এতটাই জটিল যে অনেক সময়েই সন্তানসম্ভবা মহিলা এবং গর্ভস্থ ভ্রূণের জীবন সংশয় ঘটে। সাধারণত প্রেগন্যান্সির ২০ সপ্তাহ পর অসুখটি আক্রমণ শানাতে পারে। তবে বাচ্চার ডেলিভারি হওয়ার পরে সেই দিনেই অথবা একসপ্তাহের মধ্যে অসুখটি বিদায় নেয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রেগন্যান্সির শুরু থেকেই যাঁর কাছ থেকে সন্তানসম্ভবা মহিলা পরামর্শ নিচ্ছেন বা সংশ্লিষ্ট গাইনিকোলজিস্ট এবং অবস্টেট্রিশিয়ানের উচিত সন্তানসম্ভবার নিয়মিত রক্তচাপ (Blood Pressure ) পরীক্ষা করানো।

চিকিৎসকরা এও বলছেন, প্রিএক্লাম্পজিয়া একাধিক কারণে হতে পারে। বেশি বয়স, সন্তানসম্ভবার রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়ের অসুখটি হয়ে থাকলে, প্রেগন্যান্ট মহিলার আগেও প্রিএক্লাম্পজিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা থাকলে, একাধিক সন্তানধারণের ইতিহাস থাকলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

অবশ্য, প্রিএক্লাম্পজিয়া কেন হয় তার কোনও নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় নি। তবে কিছু কিছু বিষয় প্রিএক্লাম্পজিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। উদাহরণ হিসেবে প্রেগন্যান্সি আসার আগে থেকেই কোনও মহিলার স্থূলত্ব, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির অসুখ থাকলে তা প্রিএক্লাম্পজিয়ার ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ হিসেবেই গণ্য করা হয়। এছাড়া ‘অটো ইমিউন ডিজিজ’ যেমন লুপাস বা অ্যান্টিফসফোলিপিড সিনড্রোমের মতো সমস্যাও প্রিএক্লাম্পজিয়ার আশঙ্কা বাড়ায়। পূর্ববর্তী প্রেগন্যান্সিতে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বেগ দিয়ে থাকলে পরবর্তী প্রেগন্যান্সিতে তা প্রিএক্লাম্পজিয়ার আশঙ্কাও বাড়িয়ে তোলে।

বিশেষজ্ঞরা এও বলছেন, প্রিএক্লাম্পজিয়ার মতো ভয়ানক পরিস্থিতি শরীরের অভ্যন্তরীণ নানা অঙ্গের বিস্তর ক্ষতিসাধন করে থাকে। সবচাইতে বড় ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে গর্ভস্থ ভ্রূণের।

এক নজরে প্রিএক্লাম্পজিয়ার রিস্ক ফ্যাক্টর

• একাধিকবার সন্তানধারণ।

• পূর্ববর্তী প্রেগন্যান্সির সময়ে প্রিএক্লাম্পজিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস।

• দীর্ঘদিনের হাইপারটেনশন।

• দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস।

• প্রেগন্যান্সির সময়ে ডায়াবেটিস বা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া।

• থ্রম্বোফিলিয়া (রক্ত জমাট বাঁধার অসুখ)

• সিস্টেমিক লুপাস।

• প্রেগন্যান্সির আগে থেকেই ৩০ এর বেশি বিএমআই।

• অ্যান্টিফসপোলিপিড অ্যান্টিবডি সিনড্রোম।

• গর্ভবতী মায়ের বয়স ৩৫ বা তারও বেশি।

• কিডনির অসুখ।

• অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাকটিভ টেকনোলজি।

• অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া।

প্রিএক্লাম্পজিয়ার লক্ষণ

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন প্রিএক্লাম্পজিয়া সম্পূর্ণভাবেই প্রেগন্যান্সির সময়কালীন সমস্যা। মূল লক্ষণ— উচ্চ রক্তচাপ এবং ইউরিনে উচ্চ মাত্রার প্রোটিনের উপস্থিতি যা কিডনি ড্যামেজের দিকে ইঙ্গিত করে (প্রোটিনিউরিয়া)। এছাড়া এই ঘটনা অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতির দিকেও ইশারা করে।

প্রিএক্লাম্পজিয়া হঠাৎ করে হাজির হলেও কয়েকদিন আগে থেকেই কিছু উপসর্গ এই রোগ হাজির হওয়ার ব্যাপারে আগাম জানান দেয়। তাই ওই ধরনের লক্ষণগুলির দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে সন্তানসম্ভবা ও তাঁর আত্মীয়দের। প্রশ্ন হল কী কী লক্ষণ…

• প্রোটিনিউরিয়া বা ইউরিনে মাত্রাতিরিক্ত প্রোটিনের উপস্থিতি। এছাড়া কিডনি ডিজিজের অন্যান্য লক্ষণও গর্ভাবস্থায় প্রি এক্লাম্পজিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার দিকে ইঙ্গিত দেয়।

• রক্তে অণুচক্রিকার স্বল্পতা বা প্লেটলেট কাউন্ট কম হওয়া (থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া)।

• লিভার এনজাইমের মাত্রাবৃদ্ধি।

• মাথাব্যথা।

• দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়া। উদাহরণ হিসেবে সাময়িকভাবে ঝাপসা দৃষ্টি বা আলোর প্রতি অতিসংবেদনশীলতা।

• ফুসফুসে ফ্লুইডের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার দরুণ শ্বাসকষ্ট।

• পেটের উপরিভাগে ডান পাঁজরের নীচে বেদনা।

• মাথা ঘোরা ও বমিবমি ভাব।

উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে ইউরিনে উচ্চমাত্রার প্রোটিনের উপস্থিতিতে এই ধরনের উপসর্গ দেখা যেতে পারে সন্তানসম্ভবার শরীরে। এছাড়া মুখ ও হাতে ফোলাভাবের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট হওয়াও প্রিএক্লাম্পজিয়ার অন্যতম পরিচিত লক্ষণ। চিকিৎসকরা এও জানাচ্ছেন, উচ্চ রক্তচাপ সঙ্গে ফ্লুইড জমে পা ফোলাও কিন্তু প্রিএক্লাম্পজিয়ার উপসর্গ হতে পারে। কিছু কিছু রোগীর অবশ্য উক্ত উপসর্গের সঙ্গে ঘাড়ে ব্যথা, আছন্নভাব, শ্বাসকষ্ট, ঝাপসা দৃষ্টির সমস্যাও থাকে। উপসর্গের বাড়বাড়িতে মা ও গর্ভস্থ সন্তানের প্রাণ নিয়ে টানটানি পড়ে যেতে পারে। ন্যাশনাল এক্লাম্পজিয়া রেজিস্ট্রি’তে নথিভুক্ত তথ্য অনুসারে ৫৭ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রিএক্লাম্পজিয়ার কোনও নির্দিষ্ট উপসর্গ ছিল না। তাই চিকিৎসকের পরামর্শমতো চলা, সময়ে সময়ে টেস্ট করাই একমাত্র সাবধানতার পথ।

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

প্রিএক্লাম্পজিয়ার সেভাবে কোনও চিকিৎসা নেই। রোগটি দেখা দিলে চিকিৎসকরা রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দেন ও সবসময় রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখেন। উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসাও করেন। এছাড়া গর্ভস্থ ভ্রূণের যাতে কোনও ক্ষতি না হয় ও সে যাতে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে তার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা হয়।

তবে যে কোনও অসুখ হওয়ার আগে তার প্রতিরোধ করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। এই কারণে প্রেগন্যান্সি আসার পর ১১ সপ্তাহ থেকেই নিয়মিত স্ক্রিনিং করিয়ে যেতে হবে।

এসএফএলটি/পিএলজিএফ রেশিও নামের উন্নত টেস্টের মাধ্যমে এই রোগের ঝুঁকি সম্পর্কে অনেকটাই ধারণা করা যায়। এছাড়া সাধারণভাবে ইউরিক অ্যাসিড, হেমাটোক্রিট, ইউরিন প্রোটিন, লিভার এবং কিডনি ফাংশন টেস্ট, ইউএসজি, ডপলার টেস্ট করেও প্রিএক্লাম্পজিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে অনেকটাই আন্দাজ করা সম্ভব হয়। তাই প্রেগন্যান্সিতে চিকিৎসকের পরামর্শে চলুন। সুস্থ থাকুন।