Cervical cancer vaccine: কেন জরায়ুমুখের ক্যানসার মহিলাদের জন্য সবথেকে মারাত্মক? যেভাবে সতর্ক হবেন…
qHPV: আমাদের দেশে ১৫-৪৪ বছর বয়সীদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বাধিক সাধারণ ক্যানসার হল জরায়ুমুখের ক্যানসার। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ৩০ বছরের পর থেকে মহিলারা আক্রান্ত হন এই ক্যানসারে
গত কয়েক বছরে বেড়েছে নানা স্ত্রী রোগ। এর মধ্যে তালিকায় একেবারেই উপরে রয়েছে জরায়ুমুখের ক্যানসার। সেই সঙ্গে পলিসিস্টিক ওভারি, এন্ডোমেট্রিয়োসিসের নানা সমস্যা তো আছেই। এই জরায়ুর ক্যানসার ঠেকাতে দেশে প্রথম তৈরি হল কোয়াড্রিভালেন্ট হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) ভ্যাকসিন। উন্নত প্রযুক্তি কাজে লাগিয়েই বানানো হয়েছে এই ভ্যাকসিন। এর আগে ভ্যাকসিনের জন্য নির্ভর করতে হত বিদেশের উপরেই। দেশের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অগস্টেই সার্ভিক্যাল ক্যানসারের বিরুদ্ধে দেশেই উন্নত টিকা তৈরির জন্য অনুমোদন দিয়েছিল সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া-কে।
কেন মহিলাদের জন্য মারাত্মক এই ক্যানসার?
NCBI-এর রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের প্রতি ৫৩ জন মহিলার মধ্যে ১ জন ভুগছেন সার্ভিক্যাল ক্যানসারে। যা উন্নত দেশগুলির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এখানে ১০০ জন মহিলার মধ্যে ১ জন এই ক্যানসারের সঙ্গে যুঝছেন। বর্তমানে ৩০-৬৯ বছর বয়সী প্রচুর মহিলার মৃত্যুর জন্য ১৭ শতাংশ দায়ী হল এই জরায়ুমুখের ক্যানসার। আর তাই এই টিকা খুব জরুরি ছিল। সব মহিলারই উচিত এই সার্ভিক্যাল ক্যানসারের টিকা নেওয়া। যদিও টিকা আগে থেকেই ছিল। বর্তমানে দেশেও তৈরি হচ্ছে এই টিকা। এই টিকা যে সম্পূর্ণভাবে জরায়ুমুখের ক্যানসার রুখে দিতে পারবে এ বিষয়ে নিশ্চিত বিশেষজ্ঞরাও।
সার্ভিক্যাল ক্যানসার বা জরায়ুমুখের ক্যানসার কী?
সার্ভিক্যাল হল মহিলাদের জরায়ুমুখের ক্যানসার। যোনিমুখ থেকে শুরু হয়ে এই ক্যানসার সহজেই মূত্রাশয়, মলদ্বার আর ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যৌনাঙ্গের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হল সার্ভিক্স। যা নির্দিষ্ট ধরণের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) এর দ্বারা সৃষ্ট দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ। আর এই সংক্রমণই হল জরায়ু ক্যানসারের মূলে। তবে HPV সাধারণ ভাইরাস, যা যৌনতার মাধ্যমেই একজনের থেকে অন্যজনের শরীরে সংক্রমিত হয়।
সার্ভিক্যাল ক্যানসারের লক্ষণ
তীব্র পিঠে ব্যথা
নাভির নীচে প্রায়শই ব্যথা থাকা
যোনি থেকে অস্বাভাবিক রক্তপাত
যৌন মিলনের সময় ব্যথা
মেনোপজের পর ব্লিডিং
যোনি স্রাব
প্রস্রাবের সময় ব্যথা
আমাদের দেশে ১৫-৪৪ বছর বয়সীদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বাধিক সাধারণ ক্যানসার হল জরায়ুমুখের ক্যানসার। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ৩০ বছরের পর থেকে মহিলারা আক্রান্ত হন এই ক্যানসারে। যাঁদের মধ্যে রোগ-প্রতিরোধক ক্ষমতা বেশ ভালো সেই সব মহিলাদের জরায়ুমুখের ক্যানসার হতে ১৫-২০ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। যাঁদের শরীরে আগে থেকেই নানা রোগ সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে ৫-১০ বচর হল আক্রান্তের সময়সীমা। অর্থাৎ ইমিউনিটি কম থাকলে অনেক সহজেই আক্রান্ত হওয়া যায় এই হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসে। ২০১৯ সালে ভারতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ মারা গিয়েছেন এই ক্যানসারে।
কীভাবে প্রতিরোধ করবেন এই ক্যানসার
জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত কিনা তা জানতে নিয়মিত ভাবে স্ক্রিনিং জরুরি। ২২ বছরের পর থেকে বছরে একবার এই স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক। নিয়মিত ভাবে চেকআপ করালে এই ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই এড়ানো যায়। এছাড়াও সব মহিলারই উচিত এই ভ্যাকসিন নিয়ে নেওয়া।
HPV ভ্যাকসিন কী ?
সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (SII) এবং ডিপার্টমেন্ট অফ বায়োটেকনোলজি (DBT)-এর যৌথ প্রয়াসে তৈরি হয়েছে কোয়াড্রিভালেন্ট হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস ভ্যাকসিন ( qHPV)। qHPV-ভ্যাকসিনের মধ্যে CERVAVAC একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবডি। যা যোনিমুখের ক্যানসার ঠেকাবে। এই টিকার মূল্য ধার্য করা হবে ২০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। তবে এখনও চূড়ান্ত মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। বর্তমানে আমাদের দেশে যে তিন বিদেশী কোম্পানি তাদের তৈরি এই সার্ভিক্যাল ক্যানসার প্রতিরোধী ভ্যাকসিন বিক্রি করে তাদের প্রতি ডোজের দাম ৪০০০ টাকারও বেশি।
কতটা কার্যকর এই ভ্যাকসিন?
ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনের তরফে প্রকাশিত ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল অ্যান্ড পেডিয়াট্রিক অঙ্কোলজির একটি রিপোর্ট অনুসারে, গত ৩ বছর ধরে এই HPV ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণায় দেখা গিয়েছে তার কার্যকারিতা ৯৫.৮%। এই ভ্যাকসিন মহিলাদের জরায়ুমুখ ক্যানসারের থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি যোনি ক্যানসার ( Vulvar Cancer) এর হাত থেকে রক্ষা করতে ১০০ শতাংশ কার্যকর।
সরকারের তরফে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ৯-১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের জন্য শুরু করা হবে জাতীয় টিকাকরণ কর্মসূচী। ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার তরফে গত ১২ জুলাই মাসে এই টিকাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল।