করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ক্রমশ বাড়ছে আক্রান্ত, পরিস্থিতি ঠিক কেমন? কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

নতুন বা পুরনো স্ট্রেন যাই হোক না কেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কার্যকারিতা বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার জন্য ভাইরাসও নিজের চরিত্র বদলায়, যেটা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ক্রমশ বাড়ছে আক্রান্ত, পরিস্থিতি ঠিক কেমন? কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Apr 10, 2021 | 11:20 PM

রাজ্যে হাজির করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। অন্যান্য ক্ষেত্রে দেখা যায়, মিউটেশনের পর সাধারণত ভাইরাসের মারণক্ষমতা কমে যায় অর্থাৎ ভাইরাস দুর্বল হয়ে যায়। কিন্তু এবার ঠিক কী হচ্ছে? এছাড়াও শীতকালে দেখা যায় সংক্রমণ বাড়ে। কিন্তু এক্ষেত্রে ঘটছে উল্টো ঘটনা। কিন্তু কেন? সর্বোপরি ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তাহলে এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের ঠিক কী কী করণীয়?

এইসব প্রসঙ্গেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করেছে TV9 বাংলা।

সংক্রমণ ক্ষমতা বা রোগ ছড়ানোর ক্ষেত্রে বর্তমান পরিস্থিতিটা ঠিক কেমন?

শুদ্ধসত্ত্ব- নতুন স্ট্রেনের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ছোঁয়াচে ভাব বেশি। বিশেষ করে যাঁরা বয়স্ক মানুষ এবং যাঁদের হাই ব্লাড প্রেশার, সুগার, কিডনির সমস্যা, হার্টের রোগ, ক্যানসার, এইচআইভি— ইত্যাদি কোমর্বিডিটি রয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা মারণরোগের আকার নিচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে শ্বাসযন্ত্রে প্রভাব ফেললেও পরবর্তী কালে লিভারের এনজাইম নিঃসরণ বাড়িয়ে দেওয়া, কিডনি বিকল হওয়া, হার্টের সমস্যা এমনকি ব্রেন স্ট্রোক… অর্থাৎ মাল্টি অরগ্যানে প্রভাব পড়তে পারে। নতুন বা পুরনো স্ট্রেন যাই হোক না কেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কার্যকারিতা বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার জন্য ভাইরাসও নিজের চরিত্র বদলায়, যেটা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।

মিউটেশনের পর সাধারণত ভাইরাসের মারণক্ষমতা কমে যায় অর্থাৎ ভাইরাস দুর্বল হয়ে যায়। কিন্তু এবার ঠিক কী হচ্ছে?

শুদ্ধসত্ত্ব- কিছু স্ট্রেনের ক্ষেত্রে তেমনটা হয়ে ছিল। তার জন্যই ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দেখা গিয়েছিল সংক্রমণ কমছে। পুজোয় অনেক নিয়মবিধি না মানা পরও তেমন মারাত্মক অবস্থা হয়নি। কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই মিউটেশনের পর ভাইরাস আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসতে পারে। যেটা এখন হচ্ছে।

ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এটা কেন হচ্ছে?

শুদ্ধসত্ত্ব- যেকোনও ভ্যাকসিনের প্রতিরোধ ক্ষমতা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। অর্থাৎ ১০ থেকে ২০ শতাংশের ক্ষেত্রে আদৌ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে নাও তুলতে পারে। তাছাড়া এই ভ্যাকসিনগুলো আজ থেকে ৬ মাস আগে তৈরি হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যে নতুন স্ট্রেনগুলো এসেছে, হয়তো তার জন্য হয়তো এই ভ্যাকসিন ততটা কার্যকরী নয়। সব স্ট্রেন সম্পর্কে জানতে হলে অনেক বেশি গবেষণা এবং ভ্যাকসিন তৈরির জন্য আরও সময় প্রয়োজন। হয়তো এখন যে স্ট্রেনগুলো এসেছে তার ভ্যাকসিন তৈরি করতে আরও ৬ মাস লাগবে। সেই সময়ের মধ্যেই হয়তো আরও নতুন স্ট্রেন তৈরি হয়ে যাবে। ভাইরাস নিজের চরিত্র বদলে ফেলবে।

সংক্রমণ সাধারণত শীতকালে বাড়ে। এক্ষেত্রে উল্টো হচ্ছে কেন?

শুদ্ধসত্ত্ব- এই ভাইরাসের চরিত্রই অদ্ভুত। শীতপ্রধান দেশে বেশি ঠাণ্ডায় প্রভাব বাড়ছে। আর গরম যে দেশে বেশি সেখানে গরমের সময়েই প্রভাব বাড়ছে। যেমন আমাদের এখানে এখন গরম, সেখানে ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। অথচ শীতে অর্থাৎ ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে সংক্রমণ কম ছিল। অন্যদিকে বিশ্বের নিরিখে এখন ফ্রান্সে সংক্রমণ সর্বোচ্চ। অথচ সেখানে এখন যথেষ্ট ঠাণ্ডা।

নতুন কোনও উপসর্গ দেখা দিয়েছে?

শুদ্ধসত্ত্ব- অনেকের ক্ষেত্রে খুব তাড়াতাড়ি জ্বর বেড়ে যাচ্ছে। চোখে প্রভাব পড়ছে, এটা আগে ছিল না। অনেকের ক্ষেত্রে স্বাদ পাচ্ছেন কিন্তু গন্ধ নেই। উল্টোটাও হচ্ছে। বয়স্কদের মধ্যে প্রভাবটা সবচেয়ে বেশি। খুব দ্রুত অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এর মূল কারণ চেস্ট অর্থাৎ বুকের অংশে ‘ডিফিউস কোয়াগুলেশন’। এটা আগেও ছিল, কিন্তু এতটা মারাত্মক ছিল না। এখন একজন উপসর্গহীন অর্থাৎ অ্যাসিম্পটোম্যাটিক রোগী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভেন্টিলেশনে চলে যাচ্ছেন।

এই পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী?

শুদ্ধসত্ত্ব- মাস্ক পরা, বারবার হাত ধোওয়া, ৬ ফুটের কাছাকাছি দূরত্ব রাখা এবং যতটা সম্ভব বাড়িতে থাকা। একান্ত প্রয়োজন না হলে বাইরে যাবেন না। বয়স্কদের যেতে না দেওয়াই ভাল। এর পাশাপাশি সাবানজল হোক বা স্যানিতাইজার, বারবার হাত ধুয়ে নিন।