SC on EWS Reservation: আর্থিক অনগ্রসরদের ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বৈধ, ঐতিহাসিক রায় সুপ্রিম কোর্টের

SC on EWS: সংরক্ষণ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। এই রায় নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

SC on EWS Reservation: আর্থিক অনগ্রসরদের ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বৈধ, ঐতিহাসিক রায় সুপ্রিম কোর্টের
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 07, 2022 | 1:23 PM

নয়া দিল্লি: সোমবার চাকরি, শিক্ষা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংরক্ষণ নিয়ে ঐতিহাসিক রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, আর্থিক ভাবে দুর্বল শ্রেণির জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বৈধ। সুপ্রিম কোর্টের ৫ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ সোমবার এই রায় দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি ইউইউ ললিত, বিচারপতি দীনেশ মহেশ্বরী, বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভাট, বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী এবং বিচারপতি জেবি পর্দিওয়ালার সাংবিধানিক বেঞ্চ ৩:২ অনুপাতে আজকের এই রায় দিয়েছে। অর্থাৎ সাংবিধানিক বেঞ্চের ৫ বিচারপতি মধ্যে তিন বিচারপতি যথাক্রমে বিচারপতি দীনেশ মহেশ্বরী, বিচারপতি বেলা ত্রিবেদী, বিচারপতি জেবি পর্দিওয়ালা ১০৩ তম সংবিধান সংশোধনীর পক্ষে রায় দিয়েছেন। দুই জন বিচারপতির মধ্যে বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভাট সংরক্ষণের বিপক্ষে রায় দেন। তাঁর বক্তব্য, সংরক্ষণ কোনও স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। আর সেই রায় সমর্থন করেন প্রধান বিচারপতি ইউইউ ললিত।

কোন পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে মামলা?

দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসে চাকরি, শিক্ষা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে অনগ্রসরদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। সংসদে বিল পাশ করে তা আইনে পরিণত করেছিল কেন্দ্র। দেশের কোনও রাজনৈতিক দলই খোলাখুলি এর বিরোধিতা করেনি। কিন্তু ২০১৯ সালে ১০ শতাংশ সংরক্ষণের বিরোধিতা করে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা-সহ অনেকে সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হয়। মোট ৪০টি পিটিশন দাখিল হয়েছিল। দাখিল করা পিটিশনে বলা হয়েছিল, সংবিধানের ৪৬ নম্বর ধারায় শিক্ষাগতভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির কথা বলা হয়েছে, আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির কথা বলা হয়নি।

ঠিক কী বলেছে আদালত?

সুপ্রিম কোর্টের কাছে দায়ের করা পিটিশনে এই সংরক্ষণ আইনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। ৩ জন বিচারপতির বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়েছিল। এতদিন এসসি, এসটি ও ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণ ছিল। ২০১৯ সালে ১০৩ তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে আর্থিকভাবে অনগ্রসরদের ১০ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়া নিয়ে সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় পাঁচ সদস্যের বৃহত্তর সাংবিধানিক বেঞ্চে মামলাটি যায়। সোমবার সেই মামলার সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে এখন থেকে আর্থিকভাবে অনগ্রসরদের সংরক্ষণে কোনও সমস্যা রইল না। রায়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, এই সংরক্ষণের বিষয়টি কোনওভাবেই অবৈধ নয়।

এক নজরে সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়

বিচারপতি দীনেশ মহেশ্বরী তাঁর রায়ে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর উপর জোর দিয়েছেন। এক, আর্থিকভাবে অনগ্রসরদের সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ১০৩তম সংবিধান সংশোধনী মূল সংরক্ষণ পরিকাঠামোর পরিপন্থী। দুই, আর্থিকভাবে অনগ্রসরদের সংরক্ষণ থেকে বঞ্চিত গরিব তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের সংরক্ষণ পরিপন্থী এই আইন। তিন, ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের বিষয়টিও লঙ্ঘিত করছে এই আইন।

এ দিন রায় দেওয়ার সময় বিচারপতি দীনেশ মহেশ্বরী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এই তিনটি বিষয় কোনওভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে না ১০৩তম সংবিধান সংশোধনীতে। একই মত পোষণ করেন বিচারপতি বেলা ত্রিবেদী ও বিচারপতি জেবি পর্দিওয়ালা।

এক নজরে সংখ্যালঘু রায়

প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিত এবং বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভট তাঁদের রায়ে জানিয়েছেন, আর্থিকভাবে অনগ্রসরদের সংরক্ষিত বিষয়টি সংবিধান লঙ্ঘিত না করলেও, এই সংরক্ষণ থেকে তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া গরিব সম্প্রদায়দের অন্তর্ভুক্তি না হওয়ায় বৈষম্য তৈরি করে। তাঁদের রায়ে বিচারপতিরা বলেছেন, “আমাদের সংবিধান কোনও কিছুর বহিষ্করণে বিশ্বাস করে না। এই সংবিধান সংশোধনী সামাজিক ন্যায়কে সঠিক মূল্যায়ণ করে না। সংরক্ষণের সুবিধার অর্থ ফ্রি পাশ নয়, সমাজের পরিকাঠামোকে মেরামত করার মাধ্যম।”

কী বলছেন রাজনীতিক ও আইনজীবীরা?

এই রায় প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “আর্থিকভাবে অনগ্রসরদের জন্য সংরক্ষণ যথার্থই ছিল। আমরা আগেও বলেছিলাম, সামাজিক ভিত্তির সঙ্গে অর্থনৈতিক ভিত্তিগুলিকেও দেখা উচিত। আমাদের রাজ্যে EWS সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা বারবার বলা সত্ত্বেও কার্যকর হয়নি। আশা করব এখন রাজ্য সরকারের সম্বিত ফিরবে এবং সার্টিফিকেট প্রদানের বন্দোবস্ত করা হবে।”

এই রায় প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবী তথা সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “এই রায়ের মধ্যে বিস্ময়কর কিছু নেই। সংবিধান সংশোধন করে আর্থিক অনগ্রসর শ্রেণিকে সংরক্ষণ দেওয়ার যে আইন করা হয়েছিল, তার পিছনে যে উদ্দেশ্যেই থাকুক, তা অসংবিধানিক নয়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আরও একবার এটা প্রমাণিত।”

কংগ্রেস নেতা তথা বিশিষ্ট আইনজীবী অরুণাভ ঘোষও এই রায় নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “রায় ঠিকই আছে। শীর্ষ আদালত বলেছে দুর্বল শ্রেণিকে সরকার সংরক্ষণের আওতায় আনতে পারবেন। সংবিধানে কোনও বাধা নেই, এটাই সুপ্রিম কোর্ট বলেছে। সংরক্ষণের মাপকাঠি সরকার নির্ধারণ করেছে।”