Chintan Shivir: আবার কি ফিরছেন রাহুল? কী বার্তা দিল কংগ্রেসের ‘চিন্তন শিবির’?

Congress Chintan Shivir: কংগ্রেসের 'চিন্তন শিবির'এর সিদ্ধান্তগুলি থেকে মিলছে একটিই ইঙ্গিত - ফের সভাপতি পদে ফিরছেন রাহুল গান্ধী।

Chintan Shivir: আবার কি ফিরছেন রাহুল? কী বার্তা দিল কংগ্রেসের 'চিন্তন শিবির'?
ছবি: সংবাদ সংস্থা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 16, 2022 | 9:15 PM

রাকেশ দিক্ষিত

উদয়পুরে কংগ্রেসের তিনদিনের ‘চিন্তন শিবির’ থেকে পাঁচটি বিষয় স্পষ্ট – এক, সংগঠনের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা ছাড়া দলের নেতাদের অন্যান্য সমস্ত পরামর্শে গ্রহণে সম্মত গান্ধী পরিবার। দুই, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে বিজেপির সঙ্গে সরাসরি লড়াইয়ে থাকবে কংগ্রেস, সেই সব নির্বাচনে আঞ্চলিক দলগুলির কংগ্রেসের জোট বাঁধার কোনও সম্ভাবনা নেই। তিন, সনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে হিন্দুত্ববাদের বনাম ধর্মনিরপেক্ষতা বিষয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই বিষয়ে দ্বিধা ঝেরে ফেলতে প্রস্তুত কংগ্রেস। চতুর্থত, রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস সভাপতি পদে পুনর্নির্বাচিত হওয়া প্রায় নিশ্চিত। পাঁচ, ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত সংস্কারগুলিকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করার বিষয়ে আগের থেকে অনেক বেশি আগ্রহী কংগ্রেস।

উদয়পুর ‘চিন্তন শিবির’ শুরুর আগে, কংগ্রেসের বিদ্রোহী নেতারা আশা করছিলেন, কংগ্রেস পার্লামেন্ট বোর্ড-কে ফের চালু করবেন সনিয়া গান্ধী। সেই সঙ্গে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে নির্বাচনের ঘোষণা করবেন। পরিবর্তে সনিয়া কার্যকরী সমিতিকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছেন। তবে, কমিটির পরামর্শ গ্রহণ করাটা কার্যকরী সমিতির জন্য বাধ্যতামূলক নয়। উপদেষ্টা কমিটিতে সম্ভবত গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ নেতারাই সুযোগ পাবেন। ফলে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা গান্ধীদের হাতেই থাকবে।

আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোটের বিষয়ে, উদ্বোধনী ভাষণে কিছুই বলেননি সনিয়া। তবে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে, বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে যে কংগ্রেস একাই লড়বে, সমাপ্তি ভাষণে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। তিনি বলেছেন, কংগ্রেসের মত সর্বভারতীয় আদর্শ নেই আঞ্চলিক দলগুলির। আঞ্চলিক দলগুলির বিরুদ্ধে তিনি জাত-পাতের রাজনীতি করার অভিযোগ করেছেন। সম্প্রতি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শরদ পওয়ার, কে চন্দ্রশেখর রাও-এর মতো আঞ্চলিক দলের নেতার কংগ্রেস ছাড়াই বিরোধী জোট গঠনের আওয়াজ তুলেছিলেন। তবে, অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলির অনুৎসাহের কারণে, সেই প্রচেষ্টা বেশি দূর এগোয়নি।

উদয়পুর ঘোষণাপত্রে কংগ্রেস তার ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েও স্পষ্ট বিবৃতি দিয়েছে। বিজেপির সঙ্গে আদর্শগত লড়াইয়ে যে আর তাদের দ্বিধা নেই, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। শোনা যায়, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেসকে হিন্দুত্বের বিষয়গুলি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন ভোট কুশলি প্রশান্ত কিশোর। তবে, তাঁর ভাষণে সনিয়া গান্ধী স্পষ্টতই সেই উপদেশকে অবজ্ঞা করেছেন। উদয়পুরে দলীয় প্রতিনিধিদের সামনে বলতে উঠে তিনি, ‘মেরুকরণের স্থায়ী রাষ্ট্র’, ‘সংখ্যালঘুদের উপর নৃশংসতা’ এবং ‘রাজনৈতিক বিরোধীদের হুমকি দেওয়ার’ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তীব্র আক্রমণ করেন। রাহুল গান্ধীও বিজেপি এবং আরএসএস-এর বিরুদ্ধে আদর্শিক লড়াইয়ের তীক্ষ্ণতা বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন। আট বছর আগে কংগ্রেস ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সনিয়াকে এত জোরালো এবং প্রত্যক্ষ আক্রমণ শানাতে দেখা যায়নি।

আর এই বিজেপি বিরোধী লড়াই-এর কর্মসূচীর একেবারে শুরুতেই রয়েছে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত প্রস্তাবিত ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা। ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে এই যাত্রার সূচনা হবে। আশা করা হচ্ছে, তার আগেই কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে এবং রাহুল গান্ধীই আবার সভাপতি নির্বাচিত হবেন। ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রায় একেবারে সামনের সারিতেই রাহুল থাকবেন বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস।

সংস্কারের জন্য কংগ্রেস দলে আপাতত দারুণ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। তবে, ‘চিন্তন শিবিরে’র এই উদ্দীপনা কতদিন ধরে রাখা যাবে, সেটাই সবথেকে বড় প্রশ্ন। অতীত রেকর্ড বলছে, দল যে নীতি নিয়েছিল, তার সঙ্গে কর্মসূচীর মিল ছিল না। তাই ‘চিন্তন শিবিরে’র ফলাফল নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। তবে, দলের অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী যেভাবে ‘চিন্তন শিবিরে’ অংশ নেওয়া কংগ্রেস প্রতিনিধিদের আত্মদর্শন এবং সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন, তাতে বোঝা যায় কংগ্রেস অতীতের ভুলগুলি থেকে শিক্ষা নিয়েছে। এর আগে, কংগ্রেসের সমাবেশগুলিতে দলের অন্যান্য নেতারা একই ধরণের পরামর্শ দিতেন। সনিয়া সেগুলি ধৈর্য সহকারে শুনতেন। এবার পরিবর্তনের জন্য ডাক দিলেন তিনিই।