কেউ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত, কারোর আবার এনসেফালাইটিস, এক হাসপাতালেই ভর্তি কমপক্ষে ১৭০ শিশু!

সম্প্রতি বন্যা হওয়ায় অধিকাংশ জায়গাই জলে ডুবে ছিল দীর্ঘদিন। সেই জমা জল থেকেই ডেঙ্গু, এনসেপালাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো রোগ দেখা দিচ্ছে।

কেউ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত, কারোর আবার এনসেফালাইটিস, এক হাসপাতালেই ভর্তি কমপক্ষে ১৭০ শিশু!
হাসপাতালে এক একটি শয্যাতেই ভর্তি রয়েছে দু-তিনজন শিশু। ছবি:ANI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 05, 2021 | 5:57 PM

প্রয়াগরাজ: হাসপাতালে ফাঁকা নেই কোনও বেড, অভাব দেখা দিচ্ছে অক্সিজেনেরও।  প্রয়াগরাজের মোতিলাল নেহেরু হাসপাতালে কমপক্ষে ১৭০ শিশু ভর্তি রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অধিকাংশ শিশুরই ক্রনিক রোগ বা ভাইরাল জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছে।

রবিবার প্রয়াগরাজের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নানক সরন জানান, রাজ্য়ে আচমকাই শিশুদের অসুস্থ হওয়ার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এনসেফালাইটিস, নিউমোনিয়ার মতো একাধিক জটিল রোগ দেখা দিচ্ছে তাদের শরীরে। তিনি বলেন, “কয়েকদিন আগেই আমি মোতিলাল নেহেরু হাসপাতালের পরিদর্শনে যাই। সেখানে শিশুদের ওয়ার্ডে গিয়ে দেখি, ১২০টি শয্যা থাকলেও রোগীর সংখ্যা ১৭১। বাধ্য হয়ে এক বেডে দুই-তিনজন শিশুকে রাখতে হয়েছে। এখানে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম হলেও এনসেফালাইটিস ও নিউমোনিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকাংশেরই সর্বক্ষণ অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ছে।”

তিনি জানান, ২০০ শয্যার একটি শিশুদের ওয়ার্ড তৈরি করা হচ্ছে। শিশুদের চিকিৎসার জন্য সবরকমের ব্য়বস্থাই করা হচ্ছে। সম্প্রতি বন্যা হওয়ায় অধিকাংশ জায়গাই জলে ডুবে ছিল দীর্ঘদিন। সেই জমা জল থেকেই ডেঙ্গু, এনসেপালাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো রোগ দেখা দিচ্ছে।

ওই হাসপাতালে দেখা যায়, একই শয্যায় চারজন করে শিশুকে ভর্তি রাখা হয়েছে। বিছানায় জায়গা না হওয়ায় ওয়ার্ডের মেঝেতে গদি পেতেও শিশুদের চিকিৎসা চলছে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা শিশুদের পরিবারের তরফ থেকেও চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই হাসপাতালেই ভর্তি থাকা এক শিশুর বাবা জানান, ভর্তি নিলেও চিকিৎসকরা কোনও দেখভালই করছেন না। কোনও শয্যাও ফাঁকা নেই। হাসপাতাল থেকে যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, তা দেখে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা।

উত্তর প্রদেশের একাধিক জেলায় বিগত দুই সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গুর উপদ্রবও দেখা দিয়েছে। গত ১০ দিনে ৫০ জন শিশু সহ কমপক্ষে ৬০ জনের মৃত্য়ু হয়েছে। শিশুমৃত্য়ুর কারণ জানতে কেন্দ্রের তরফে একটি বিশেষ দলও পাঠানো হয়েছিল। তারা জানিয়েছেন, ডেঙ্গু সংক্রমণ শুরু হয়েছে উত্তর প্রদেশের পূর্বাংশে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, ফিরোজাবাদ ও তার আশেপাশের এলাকা থেকে প্রায় ২০০ জনের দেহের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশের রিপোর্টই ডেঙ্গু পজেটিভ এসেছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ওই অঞ্চলে ডেঙ্গু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সূত্রের খবর, ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের ছয় সদস্যের যে দলটি পাঠানো হয়েছে, তার রিপোর্টে ডেঙ্গুর পাশাপাশি স্ক্রাব টাইফাস বা বুস টাইফাসের কারণে জ্বর আসার প্রমাণ মিলেছে। পরীক্ষায় একাধিক নমুনায় সবজি বা ঝোপঝাড়ে পাওয়া যাওয়া এই পোকার উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। ফিরোজাবাদ ছাড়াও মথুরা, আগ্রা উত্তর প্রদেশের পূর্বাংশের একাধিক জায়গায় অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। হাসপাতালগুলির অবস্থাও শোচনীয়। অধিকাংশ জায়গাতেই বেড পাওয়া যাচ্ছে না, অসুস্থ রোগীদের মাটিতে শুইয়ে রেখে চিকিৎসা চালানো হচ্ছে। মথুরার  একটি গ্রামে বিগত ১৫ দিনেই ১১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।  দু-তিনদিনের জ্বরেই মৃত্যু হচ্ছে ছোট বাচ্চাদের। আরও পড়ুন: ২ স্বাস্থ্যকর্মীর দেহেও দেখা দিল নিপার উপসর্গ, কিশোর মৃত্যুর পরই অতি তৎপর স্বাস্থ্যমন্ত্রী