Bahanaga: ‘লাশের স্কুলে’ আর পড়ব না, বাহানাগা হাই স্কুল ভেঙে ফেলার আর্জি শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের
Bahanaga High School: ওড়িশার বাহনাগায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস-সহ তিনটি ট্রেনের দুর্ঘটনার পর, বাহানাগা হাই স্কুলে তৈরি করা হয়েছিল অস্থায়ী মর্গ। তবে, এখন আর স্কুলে কোনও দেহ নেই, সাফ-সাফাই করা হয়েছে। কিন্তু, তারপরও স্কুলে ফিরতে ভয় পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বাবা-মায়েরাও তাদের স্কুলে পাঠাতে চাইছেন না।
বালেশ্বর (৮ জুন): ওড়িশার বাহনাগায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস-সহ তিনটি ট্রেনের দুর্ঘটনার পর প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। ২ জুনের সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর, সংলগ্ন বাহানাগা হাই স্কুলের শ্রেণিকক্ষগুলি পরিণত হয়েছিল অস্থায়ী মর্গে। এই ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৮৮ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এত দেহ রাখার মতো জায়গা ছিল না ওই এলাকার হাসপাতালের মর্গগুলিতে। তাই ঘটনাস্থল থেকে দেহগুলি উদ্ধার করে বডি ব্যাগে ভরে, প্রথমে এই হাইস্কুলের বিভিন্ন কক্ষেই রাখা হয়েছিল। পরে, সব দেহ স্কুল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ভুবনেশ্বরে। ঘটনার ছয়দিন পর, স্কুলে আর কোনও দেহ নেই। দেহ সরানোর পর, গোটা স্কুল বাড়িটি ভালভাবে পরিষ্কার করা হয়েছে, স্যানিটাইজ করা হয়েছে। কিন্তু, সমস্যা হল এই মর্মান্তিক ঘটনার স্মৃতি জড়িয়ে থাকা স্কুলে ফিরতে ভয় পাচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। এমনকি, অভিভাবকরাও তাঁদের ছেলে-মেয়েদের ওই স্কুলে আর পাঠাতে চাইছেন না। এই অনীহা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, স্কুল পরিচালন কমিটি ৬৫ বছরের পুরোনো এই স্কুলবাড়িটি ভেঙে ফেলার অনুরোধ জানিয়েছে!
Team BMC is in action in Bahanaga High School field, #Balasore.#BalasoreTrainAccident#TrainMishap pic.twitter.com/Jo6dDbcO4Y
— BMC (@bmcbbsr) June 3, 2023
বাহনাগা হাই স্কুলে এখন গরমের ছুটি চলছে। ১৬ জুন ফের স্কুল খুলবে। কিন্তু, গত কয়েকদিনে শিক্ষার্থীরা টিভিতে তাদের স্কুল ভবনে সার সার দিয়ে পড়ে থাকা মৃতদেহের ছবি দেখেছে। আর তারপরই ভয়ে-আতঙ্কে আর তারা স্কুলে আসতে চাইছে না। প্রধান শিক্ষিকা প্রমিলা সাঁই বলেছেন, “বাচ্চারা স্কুলে আসতে ভয় পাচ্ছে। তাদের ভয় কাটাতে স্কুলের পক্ষ থেকে আধ্যাত্মিক ক্রিয়াকর্ম এবং কিছু আচার অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।” অথচ, স্কুলের কিছু উঁচু ক্লাসের শিক্ষার্থীরা এবং এনসিসি ক্যাডেটরা ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহতদের উদ্ধারে হাত লাগিয়েছিল। জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার পরে অস্থায়ী মর্গ খোলার কথা হলে, স্কুল পরিচালন কমিটি প্রথমে এই উদ্দেশ্যে মাত্র তিনটি শ্রেণিকক্ষ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল। পরে জেলা প্রশাসন লাশ শনাক্তকরণের জন্য স্কুলের হলঘরটিও ব্যবহার করেছে। দেহগুলি সরানোর পর, স্কুলটি ভালভাবে পরিষ্কার করা হলেও শিক্ষার্থীরা বলেছে, “আমাদের স্কুল ভবনে যে এতগুলি লাশ রাখা হয়েছিল, তা ভুলে যাওয়া কঠিন।” অভিভাবকরা বলেছেন, “আমাদের বাচ্চারা স্কুলে যেতে চাইছে না। এদের মায়েরাও এখন ওদের স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী নয়। কেউ কেউ সন্তানদের অন্য স্কুলে ভর্তি করবেন বলেও ভাবছেন।”
Yesterday accident was tragic.. But my NCC cadets bravely rescued injured persons. Bahanaga Railway Station Accident Dt. 2.06.2023. ANO- RASHMI RANJAN DAS GOVT. HIGH SCHOOL, BAHANAGA 7 O BN NCC, ODISHA DIRECTORATE@dgncc_india @NccIndia_ @CMO_Odisha pic.twitter.com/NCIJczbMAM
— रश्मिरंजन दास (@RRanjan1351) June 3, 2023
বাহনাগা হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের এই ভয়ের কথা কানে গিয়েছে বালেশ্বরের জেলাশাসকের কানেও। বৃহস্পতিবারই স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন জেলাশাসক দত্তাত্রেয় ভাউসাহেব শিন্ডে। তিনি বলেছেন, “আমি স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য, প্রধান শিক্ষিকা, অন্যান্য কর্মচারী এবং স্থানীয় লোকজনদের সঙ্গে দেখা করেছি। তারা পুরনো ভবন ভেঙে নতুন করে গড়তে চাইছেন। বাড়িটির সংস্কার করতে চাইছেন, যাতে বাচ্চাদের ক্লাসে যেতে কোনও ভয় বা শঙ্কা না থাকে। এই বিষয়ে তাঁদের প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দিতে বলেছি। স্কুল ভবনটি বেশ পুরনো এবং প্রায়ই বন্যার সময় লোকজন এই ভবনে আশ্রয় নেন। কাজেই স্কুলটির সংস্কার করা যেতেই পারে।”
এই বিষয়ে বুধবার স্কুল পরিচালন কমিটি এবং স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন বালেশ্বর জেলার শিক্ষা আধিকারিক বিষ্ণুচরণ সুতার। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মন থেকে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা দূর করার জন্য কী পদক্ষেপ করা যায়, সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেছেন, “এই দুর্ঘটনার কারণে কোনও শিক্ষার্থী যাতে এই স্কুল ছেড়ে না যায়, সেটা আমরা নিশ্চিত করব। ট্রেন দুর্ঘটনার সময় উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় এই স্কুল এবং স্থানীয় জনগণের ব্যাপক অবদান রয়েছে। বাহনগাবাসী তাঁদের সাহসের প্রমাণ দিয়েছেন।”