শত্রুরা সাবধান! প্রতিরক্ষার ‘এলিট ক্লাসে’ ঢুকে পড়ছে ভারত, আর পথ পাবে না পালানোর…
India Defence System: দুনিয়ার মাত্র ৫টা দেশ যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি করতে পারে - আমেরিকা, রাশিয়া, চিন, ব্রিটেন ও ফ্রান্স। কাবেরি ইন-ফ্লাইট সফল হলে চলতি মাসেই তালিকায় ঢুকে পড়বে ভারত।
প্রায় সাড়ে তিন দশকের ব্যর্থতা। কম করেও সাত থেকে আটবার মুখ থুবড়ে পড়া। বাতিল হতে হতেও টিকে থাকা। এতকিছুর পর যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন নিয়ে তৈরি নিয়ে হতাশা ছাড়া আর কিছুই পড়ে থাকে না। কাবেরি ইঞ্জিনের ক্ষেত্রেও ঠিক সেটাই হয়েছে। কাবেরির কথা খুব একটা কারও মনেই ছিল না। তবে, এবার থেকে মনে রাখতে হবে। গ্যাস টার্বাইন রিসার্চ এসটাবলিস্টমেন্ট বা GTRE-জানাচ্ছে, কাবেরি ইঞ্জিন ইন-ফ্লাইট টেস্টিংয়ের জন্য তৈরি। কাবেরি ইঞ্জিন নিয়ে আকাশে উড়বে রাশিয়ার তৈরি ইলুসিন টু। উড়বে এবং ৭০ ঘণ্টা ধরে ইন-ফ্লাইট টেস্টিং পর্ব চলবে। পরীক্ষা সফল হলেই কেল্লাফতে। যুদ্ধবিমান তৈরির এলিট ক্লাবে ঢুকে পড়বে ভারত।
ডিআরডিও সূত্রে খবর, পরীক্ষায় সফল হলে ভারতে তৈরি নজরদার বিমান ও দূরপাল্লার ড্রোনে বসবে কাবেরি ইঞ্জিন। ডিআরডিও-র আশা, সবকিছু ঠিকঠাক চললে আর তিন – চার বছরের মধ্যেই কাবেরিকে বুকে নিয়ে উড়বে তেজস এমকে-ওয়ান ও বা এমকে টু’র মতো উন্নত যুদ্ধবিমান।
দুনিয়ার মাত্র ৫টা দেশ যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি করতে পারে – আমেরিকা, রাশিয়া, চিন, ব্রিটেন ও ফ্রান্স। কাবেরি ইন-ফ্লাইট সফল হলে চলতি মাসেই তালিকায় ঢুকে পড়বে ভারত। যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরির কাজটা খুব কঠিন। তাই বহু দেশ চেষ্টা করলেও পাঁচটির বেশি দেশ সাফল্য পায়নি। কেন যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি এত কঠিন? ভারত মহাকাশে নিজস্ব প্রযুক্তিতে এত কিছু করতে পারে আর যু্দ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি করতে পারে না?
প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীদের কথায় তিনটি বিষয় উঠে এসেছে। প্রথমত, মহাকাশ বিজ্ঞান আর প্রতিরক্ষা গবেষণা এক নয়। যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরির জন্য টার্ফ -টু-সার্ফ প্রযুক্তি প্রয়োজন। ইঞ্জিনের উপর প্রচন্ড চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এর প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন নিয়ে গবেষণা ও পরিকাঠামো তৈরিতে বিপুল টাকার প্রয়োজন। হাজার, হাজার কোটি টাকা। টাকা ঢাললেও সাফল্য আসবে কীনা ঠিক নেই। গবেষণা ও প্রস্তুতিতে কয়েক দশক সময় লাগে। ভারত সেই কাজে হাত দিয়েছে অনেক পরে, ১৯৮৫ সাল নাগাদ। ফল, এখনও যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি করা যায়নি।
তৃতীয়ত, কাবেরি ইঞ্জিন তৈরির প্রকল্পে বারবার ব্যর্থতা এসেছে। দুই দশকে অন্তত সাত- আটবার। একসময় তো গোটা প্রকল্পটাই হিমঘরে চলে গিয়েছিল। পরে আবার কাবেরি নিয়ে কাজ করে গ্যাস টার্বাইন রিসার্চ এসটাবলিস্টমেন্ট বা GTRE. এটি ডিআরডিও-র অধীনস্থ একটি সংস্থা।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুনিয়ার উন্নত দেশগুলি ইঞ্জিন তৈরিতে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এগিয়েছে। বা বেসরকারি সংস্থাগুলোই ইঞ্জিনের গবেষণা ও উত্পাদনে টাকা ঢেলেছে। যেমন আমেরিকার জেনারেল ইলেকট্রিক, প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি, ব্রিটেনের রোলস-রয়েস, ফ্রান্সের সাফ্রোন ইত্যাদি, ইত্যাদি। ভারতে তেমন কিছু হয়নি, বা কোনও সংস্থা যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরিতে আগ্রহ দেখায়নি।
নিজস্ব প্রযুক্তিতে যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন কতটা প্রয়োজন, তা প্রতি মুহূর্তে মালুম হচ্ছে। শুধু ভারত নয়, তুরস্ক, গ্রিস সহ বহু দেশ ইঞ্জিন পেতে হা-পিত্যেশ করে অপেক্ষায়। সেটা আঁচ করেই ভারত কাবেরি প্রকল্পকে ঝেড়ে ফেলে দেয়নি। অনেক ব্যর্থতা, বহু অপেক্ষার পর অবশেষে আশার আলো কাবেরির হাত ধরে।