Rakesh Jhunjhunwala: তাঁর স্পর্শে ফলত সোনা, ১ দিনে ৯০০ কোটি আয় করেও কেন ‘ভাল সময়’কে ভয় পেতেন ঝুনঝুনওয়ালা?
Rakesh Jhunjhunwala: বিপুল সম্পত্তির মালিক হলেও, কোনওদিন ভাগ্যে বিশ্বাসী ছিলেন না তিনি। বরং কঠোর পরিশ্রম ও সাহসেই সাফল্য আসে বলে মনে করতেন তিনি।
মুম্বই: দালাল স্ট্রিটের বিগ বুল ছিলেন তিনি। আগের সপ্তাহের রবিবারই স্বপ্নের উড়ান শুরু করেছিল তাঁর এয়ারসলাইন্স ‘আকাশা এয়ার’, আর ঠিক পরের রবিবারই থমকে গেল তাঁর জীবনের উড়ান। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন ধনকুবের রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা। এদিন ভোর ৬টা ৪৫ মিনিটে তাঁকে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন তাঁকে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি হার্ট, কিডনির সমস্য়ায় ভুগছিলেন বলে জানা গিয়েছে। রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার হঠাৎ প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও।
আকস্মিকতায় ভরপুর ছিল রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার জীবন। হঠাৎ চলে যাওয়ায়ও হয়তো তাঁরই একটি অংশ। কীভাবে সাধারণ একটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা অম্বানী-আদানির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেছিলেন, সেই কাহিনী জেনে নিন-
জন্ম ও শৈশব-
১৯৬০ সালের ৫ জুলাই হায়দরাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব নিজামের শহরে কাটলেও, তাঁর বেড়ে ওঠা বাণিজ্যনগরীতে। মুম্বইয়ের সিডেনহাম কলেজ থেকে স্নাতক হন তিনি। এরপরে ভর্তি হন ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস অব ইন্ডিয়ায়। বাবা ছিলেন ইনকাম ট্যাক্স অফিসার। তাই ছোট থেকেই শেয়ার বাজার, আয়কর সহ ব্যবসা বাণিজ্যের খুটিনাটির সঙ্গে পরিচয় ছিল তাঁর। কলেজ জীবনে প্রবেশ করতেই শেয়ার মার্কেটে নিজের কপাল যাচাই করার সিদ্ধান্ত নেন রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা। এই ঝুঁকি নিতে তাঁকে সাহস জুগিয়েছিলেন তাঁর বাবা ও বন্ধুরা।
সাহস জুগিয়েছিল টাটার শেয়ার-
শেয়ার বাজারে কীভাবে বিনিয়োগ করতে হয়, সূচকের উত্থান-পতন নিয়ে শিক্ষা দিলেও, বিনিয়োগের জন্য কখনও এক টাকা দেননি রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার বাবা। তাঁর কথায়, জীবনে ঝুঁকি নিতে হলে, তা নিজের যোগ্যতায় নাও। বাবার থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই ১৯৮৬ সালে টাটা টি-র ৫ হাজার শেয়ার কেনেন মাত্র ৪৩ টাকা দিয়ে। তিন মাস পার হতেই সেই শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১৪৩ টাকায়। ব্যস, আর কিছু ভাবেননি রাকেশ, স্থির করে নেন এই শেয়ার বাজারের “বুল”কেই নিজের হাতের মুঠোয় আনবেন তিনি। পরের তিন বছরেই তিনি ২৫ লক্ষ টাকা উপার্জন করেছিলেন শেয়ার বাজার থেকে।
যা ছুঁতেন, তাতেই ফলত সোনা-
শেয়ার বাজারের ‘বেতাজ বাদশা’ সেনসেক্সের নাড়িনক্ষত্র এতটাই ভালভাবে বুঝে গিয়েছিলেন যে যেখানে বিনিয়োগ করতেন , সেখানেই লাভের মুখ দেখতেন। ১৯৮৫ সালে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বিনিয়োগ শুরু করেছিলেন, ২০১৮ সালে সেই টাকার অঙ্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১১ হাজার কোটি টাকায়। বর্তমানে তিনি প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকার মালিক। সম্প্রতি একটি জুতোর কোম্পানির শেয়ার কিনেও একদিনেই কয়েকশো কোটি টাকা উপার্জন করেছিলেন।
ভাগ্য় নয়, সাহসে বিশ্বাসী-
বিপুল সম্পত্তির মালিক হলেও, কোনওদিন ভাগ্যে বিশ্বাসী ছিলেন না তিনি। বরং কঠোর পরিশ্রম ও সাহসেই সাফল্য আসে বলে মনে করতেন তিনি। বাবার পর তাঁর শিক্ষাগুরু ছিলেন দামানি গ্রুপের কর্ণধার রাধাকৃষ্ণ দামানি। তাঁর কাছ থেকেই শেয়ার বাজারের হাওয়া কোন দিকে,তা বুঝতে শিখেছিলেন। খুলেছিলেন নিজের স্টক ট্রেডিং ফার্ম রেয়ার এন্টারপ্রাইজ। প্রত্যেক মরশুমেই তাঁর উপার্জন কয়েকশো কোটি টাকা হত। বিনিয়োগ করার পাশাপাশি একাধিক সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। অ্যাপটেক লিমিটেড ও হাঙ্গামা ডিজিটাল মিডিয়া এন্টারটেইনমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান ছিলেন রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা। গত সপ্তাহেই উড়ান শুরু করে তাঁর ‘আকাশা এয়ারলাইন্স’। করোনাকালের পর যখন উড়ানশিল্পের করুণ দশা, সেই সময় এত বড় উদ্য়োগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি জানিয়েছিলেন যে ঝুঁকি নিতে যেমন ভয় পান না, তেমনই ব্যর্থতাকেও ভয় পান না।
ভাল সময়কেই ভয় পেতেন রাকেশ-
করোনাকালে যেখানে অধিকাংশ বড় বড় সংস্থাই লোকসানের মুখে পড়েছিল, সেখানে কেবল নিজের অভিজ্ঞতার উপরে ভরসা রেখেই ১৪০০ কোটি টাকা উপার্জন করেছিলেন রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা। টাইটান, স্টার হেলথ, টাটা মোটরস, মেট্রো, ক্রিসিল সহ একাধিক সংস্থায় তিনি বিনিয়োগ করেছিলেন। ২০১৭ সালে টাইটানে বিনিয়োগ করার পর একদিনেই তিনি ৯০০ কোটি টাকা উপার্জন করেছিলেন। তিনি সর্বদাই বলতেন, “যখন সকলে আপনার প্রশংসা করবে, তখনই আপনার সতর্ক হওয়া উচিত। কারণ ভাল সময়েই মানুষ সবথেকে বড় ভুলগুলি করে।”