নাবালিকার হাত ধরে গোপনাঙ্গ প্রদর্শন পকসো আইনে যৌন নিগ্রহ নয়: বম্বে হাইকোর্ট
আদালতের তরফে বিচারপতি পুস্প গনেদিওয়ালা বলেন, "পকসো আইনে যৌন নির্যাতনের সংজ্ঞা হিসাবে বলা হয়েছে যদি যৌন ইচ্ছা নিয়ে শিশুদের গোপনাঙ্গ স্পর্শ করা হয় বা শিশুটিকে যৌনাঙ্গ স্পর্শ করানো হয়, তবে তা যৌন নির্যাতনের আওতায় পড়ে।"
নয়া দিল্লি: এক সপ্তাহ আগেই বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চ বলেছিল, ত্বকের সঙ্গে ত্বকের স্পর্শ না করে যদি নাবালিকার স্তন স্পর্শ করা হয়, তবে তা পকসো (POCSO Act) আইনের আওতায় পড়বে না। গতকালই সেই পর্যবেক্ষণে স্থগিতাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট। আজ ফের একই ধরনের একটি মামলায় বম্বে হাইকোর্টের তরফে বলা হল, “কোনও নাবালিকার হাত ধরা ও প্যান্ট খুলে যৌনাঙ্গ প্রদর্শন পকসো আইনের আওতায় যৌন নিগ্রহ হিসাবে গ্রাহ্য হয় না”।
৫০ বছরের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাঁচ বছরের এক শিশুকে যৌন নিগ্রহ (sexual assault)-র অভিযোগের মামলা দাখিল করা হয়। নাবালিকার মার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি দায়ের করা হয়। তিনি জানান, ঘটনার দিন তিনি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তাঁর মেয়ের হাত ধরে থাকতে এবং প্যান্টের চেইন খোলা অবস্থায় দেখেছিলেন। পরে তাঁর মেয়েও তাঁকে জানায়, ওই ব্যক্তি প্যান্ট থেকে যৌনাঙ্গ প্রদর্শন করে তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতেও প্রস্তাব দিয়েছিল।
১২ বছরের কম বয়সী শিশুর বিরুদ্ধে অপরাধ হওয়ায় আদালতের তরফে পকসো আইনের ১০ নম্বর ধারায় “যৌন নিপীড়ন” হিসাবে গণ্য করে পাঁচ বছরের সাজা ও ২৫ হাজার টাকার জরিমানা ঘোষণা করে। অভিযুক্ত ব্যক্তি এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে বম্বে হাইকোর্টে (Bombay High Court) আবেদন জানান।
আরও পড়ুন: রাম মন্দির নির্মাণ ট্রাস্ট-কে এক কোটি টাকার চেক যোগীর
আদালতের তরফে বিচারপতি পুস্প গনেদিওয়ালা বলেন, “পকসো আইনে যৌন নিগ্রহের সংজ্ঞা হিসাবে বলা হয়েছে যদি যৌন ইচ্ছা নিয়ে শিশুদের গোপনাঙ্গ স্পর্শ করা হয় বা শিশুটিকে যৌনাঙ্গ স্পর্শ করানো হয়, তবে তা যৌন নির্যাতনের আওতায় পড়ে।”
আদালতের তরফে বলা হয়, “যৌন নিগ্রহের সংজ্ঞা অনুযায়ী যৌন উদ্দেশ্যে শারীরিক স্পর্শ অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে, এক্ষেত্রে যেহেতু কেবল অভিযোগকারীর হাত ধরা হয়েছে বা প্যান্টের চেইন খোলা হয়েছে, কোনও শারীরিক স্পর্শ হয়নি, তা যৌন নির্যাতনের অধীনে পড়ে না। বরং এটি ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪-এ(১) ধারার অধীনে যৌন হেনস্থা (Sexual Harassment) হিসাবে গ্রাহ্য হয়।”
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি বিচারপতি পুস্প গনেদিওয়ালা বলেছিলেন, “ত্বক স্পর্শ না করে নাবালিকার বুকে চাপ দেওয়া পকসো আইনের আওতায় পড়ে না। যার অর্থ ত্বকে-ত্বকে সংস্পর্শ না হলে সেই ঘটনাকে পকসো আইনের অধীনে ধরা যাবে না।” বম্বে হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই সুপ্রিম কোর্ট এই পর্যবেক্ষণে স্থগিতাদেশ জারি করে। অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল বলেছিলেন, “হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণ বিপজ্জনক নজির সৃষ্টি করতে পারে”।
পকসো আইনের অধীনে শিশুদের যৌন নির্যাতন নিয়ে একটি বিতর্কিত পর্যবেক্ষণে সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ জারি করার পরের দিনই ফের বম্বে হাইকোর্টের তরফে একইধরনের বিতর্কিত মন্তব্য করা হল। এই বিষয়ে শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ার পার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, “আগেও বলেছি, আবারও বলছি, বিচারপতি পকসো আইন পড়েননি।”
আরও পড়ুন: ‘আপনাদের সাহসিকতায় গর্বিত’, আহত পুলিসকর্মীদের সঙ্গে দেখা করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী