‘CAA কার্যকর হওয়া, ৫০০ বছর পর রামের ঘরে ফেরার মতো’
CAA implementation: ২০১৩ সালে ধর্মীয় নিপীড়ন সহ্য করতে না পেরে ভারতে পালিয়ে এসেছিলেন দেহরাজ ভিল। বর্তমানে রাজস্থানের যোধপুরে থাকেন তিনি। সিএএ আইন কার্যকর হওয়ার পর, কী বলছেন তাঁরা?
জয়পুর: “ভগবান রামের ঘরে ফিরতে ৫০০ বছর সময় লেগেছে। সেদিন হিন্দুদের কেমন মনে হয়েছিল? কেমন লেগেছিল সেই দিন? সোমবার, আমরা একই আবেগ অনুভব করেছি। এটা আরও একটা ২২ জানুয়ারির (অযোধ্যা রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠার দিন) মতো ছিল।” নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ কার্যকর হওয়ার পর, আবেগে ভাসছেন পাকিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে পালিয়া আসা হিন্দুরা। তাদেরই একজন দেহরাজ ভিল। পাক সীমান্ত থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে, রাজস্থানের যোধপুরে থাকেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, আইন কার্যকর হওয়ার পর বেশ কয়েকটা দিন পেরিয়ে গেলেও, তাঁদের উদযাপন চলছেই।
বর্তমানে ‘সেনা ন্যায় উত্থান’ নামে এক এনজিও-র হয়ে কাজ করেন তিনি। এই এনজিও পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের পুনর্বাসনে সহায়তা করে। দেহরাজ জানিয়েছেন, সিএএ কার্যকর হওয়ার খবর পেয়ে পাগলের মতো এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছেন। এই আইন কার্যকর হওয়ার পর, তাঁরা দ্রুত ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন বলে আশা করছেন তিনি। এই আইন প্রণয়নের জন্য ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন দেহরাজ। তবে, ২০১৩ সালের আগে জীবন এতটা সহজ ছিল না দেহরাজ এবং তাঁর মতো পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা আরও উদ্বাস্তুদের। তীর্থযাত্রী ভিসায় পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশ থেকে ভারতে এসেছিলেন দেহরাজ। কিন্তু, মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলেন, আর পাকিস্তানে ফিরবেন না। কেন? দেহরাজের দাবি, তাঁর জন্মের আগে থেকেই তাঁর পরিবারের উপর নিপীড়ন শুরু হয়েছিল।
১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরপরই তাঁর জন্ম হয়েছিল। তাঁর বাবা এক বেনিয়া পরিবারের বাড়ির দেখভাল করতেন। ওই বাড়ির পাঁচিলের মধ্যেই একটা কুঁড়ে ঘরে থাকতেন তাঁরা। একাত্তরের যুদ্ধের পর পাকিস্তানে থাকা হিন্দুদের উপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়েছিল। ওই বেনিয়া পরিবার ভারতে চলে এসেছিল। তার আগে ওই বাড়ি ও জমি বিনামূল্যে দেহরাজের বাবাকে দিয়ে দিতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু ওই জমি-বাড়ির মালিকানা পাওয়া ছিল তাঁর কল্পনাতীত। তাই, বিনয়ের সঙ্গে সেই প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বানিয়া এক মুসলিম ধনি প্রতিবেশীকে ওই জমি-বাড়ি দিয়ে গিয়েছিলেন। শর্ত ছিল, দেহরাজ ভিলদের পরিবারকে সেখানে থাকতে দিতে হবে। কিন্তু, চুক্তি হওয়ার পরই ভিলদের সেখান থেকে তাড়িয়ে ওই জমি বিক্রি করে দিয়েছিল সেই মুসলিম ব্যক্তি। পাক আদালতের দরজায় কড়া নেড়েও লাভ হয়নি।
এখানেই অত্যাচারের শেষ নয়। দেহরাদের ভাই পাকিস্তানে ট্যাক্সি চালাতেন। ২০১১ সালে একদিন ভোর চারটে নাগাদ চার-পাঁচজন লোক এসে তাঁর ট্যাক্সি ভাড়া নিয়েছিলে। তাদের প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের এক জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন দেহরাজের ভাই। গাড়ি থেকে নেমে তারা টাকা না দিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। দেহরাজের ভাই, ভাড়ার জন্য চাপ দিলে, তারা তাঁকে সেখানেই হত্যা করেছিল। পাক বিতার ব্যবস্থার প্রতি তখনও আস্থা ছিল দেহরাজের। কিন্তু, থানায় গিয়ে ভাইয়ের হত্যার অভিযোগ জানাতে গিয়ে ফের একবার ধাক্কা খেতে হয়েছিল তাঁকে। দেহরাজের অভিযোগ, পাক পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিল, তারা এই ধরনের অভিযোগ করার সাহস কোথা থেকে পেল? স্থানীয় সাংসদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু, তিনিও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কথা বলে তাঁর পাশে দাঁড়াননি।
দেহরাজ জানিয়েছেন, ওই দিনই তিনি ঠিক করেছিলেন, পাকিস্তানে আর থাকা যাবে না। এরপর থেকে তিনি অর্থ সংগ্রহ করা শুরু করেছিলেন। কয়েকটি সোনার গয়নাও তৈরি করান। মহিলাদের সেগুলি পরিয়ে, তীর্থযাত্রীর ভিসা নিয়ে ভারতে পাড়ি দিয়েছিলেন। ভারতে এসে তাঁরা নতুন করে ঘর বাঁধার জন্য ওই সোনার গয়নাগুলি বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু, এতদিন পর্যন্ত এই দেশে থাকার জন্য তাঁদের কোনও বৈধ নাগরিকত্ব ছিল না। এবার সেই সমস্যা মিটতে চলেছে। পাকিস্তানের অবস্থা নিয়ে দেহরাজ বলেছেন, “কারও উপরে ভরসা করার উপায় নেই। হিন্দুদের ভালবাসার কেউ নেই ওখানে। সন্ধ্যা ৬টার পর কোন হিন্দু সাইকেল চালাতে পারে না। হিন্দু দোকানি হলে অধিকাংশ মানুষ টাকা দিতে চায় না।”