ব্রিটেনের মতো ভারতেও করোনার ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ, কেন্দ্রের খবরে কতটা বাড়ল দুশ্চিন্তা?
কনসর্টিয়াম অফ জিনোমিক্সের তদন্ত বলছে, বুধবার পর্যন্ত দেশে মোট ৭৩৬টি করোনা নমুনায় বিলিতি স্ট্রেনের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। ৩৪টি নমুনায় মিলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা স্ট্রেনের খোঁজ। একটি নমুনাতে ব্রাজিলের স্ট্রেনের অস্তিত্ব মিলেছে। এর সঙ্গে যোগ হল নতুন ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টও।
কমলেশ চৌধুরী: করোনা(COVID-19)-র হাত থেকে এখনই মিলছে না নিস্তার। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রতিদিনই ঊর্ধ্বমুখী করোনার গ্রাফ। তার মধ্যেই মিলল আরও দুশ্চিন্তার খবর। ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিলের মতো করোনা ভ্যারিয়েন্ট(New Variant of COVID-19)-র খোঁজ মিলল ভারতেও। দেশের প্রথম সারির ১০টি গবেষণাগারের কনসর্টিয়াম অফ জিনোমিক্সের তদন্তে উঠে এসেছে এই তথ্য।
করোনা সংক্রমণের নিরিখে দেশের মধ্যে শোচনীয় অবস্থা মহারাষ্ট্রে। সেখানে দৈনিক গড়ে ২৮ থেকে ৩০ হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। দেশের করোনার গ্রাফ হঠাত্ই বদলে গিয়েছে। এই পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে কিছুটা আভাস দিয়েছেন কনসর্টিয়ামের বিজ্ঞানীরা। তাঁদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ডিসেম্বরের পরই গবেষকদের নজরে এসেছিল মহারাষ্ট্রের দু’টি নতুন মিউটেশন। এগুলি হল E484Q এবং L452R। দু’টি মিউটেশনই অতি সংক্রামক, যা ভ্যাকসিনকেও ফাঁকি দিতে পারে। অন্তত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ নমুনায় এই মিউটেশনের অস্তিত্ব পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এর আগে যে ক’টি “ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্ন” নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তাতে এই মিউটেশন দেখা যায়নি। সেই কারণেই মহারাষ্ট্রের এই জোড়া মিউটেশনকে ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্নের তালিকায় ফেলা হয়েছে। সে দিক থেকে দেখলে এই দু’টি মিউটেশনই দেশের প্রথম ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্ন।
তবে এখানেই শেষ নয়। ভ্যারিয়েন্ট অফ ইনভেস্টিগেশনের তালিকাতেও রাখা হয়েছে একটি মিউটেশনকে। যার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি মিলেছে কেরলে। সে রাজ্যের ১১ জেলায় ১২৩টি নমুনায় মিলেছে N440K মিউটেশন। এর আগে অন্ধ্র প্রদেশ, তেলাঙ্গানাতেও এর উপস্থিতি পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। কনসর্টিয়ামের বিজ্ঞানীদের দাবি, এই মিউটেশন করোনার ভ্যাকসিনকেও ফাঁকি দিতে পারে। এই মিউটেশনকে এখনও ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্নের তালিকায় না ফেললেও, তদন্তের আতসকাঁচের নীচে রাখা হয়েছে।
ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্ন কী? দুশ্চিন্তাই বা কেন?
জিনোম নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার উত্স চিন। কিন্তু সেই ভাইরাস বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বারবার নিজের চেহারা বদলেছে। এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। চিন থেকে যে করোনা ছড়িয়েছিল, সেটিকে “ওয়াইল্ড স্ট্রেন” হিসেবে ধরা হয়। এর পর বহু মিউটেশন হয়েছে ভাইরাসে। কিন্তু সব মিউটেশনের জন্যই করোনার চরিত্রে বড়সড় বদল হয়নি। স্বল্প সংখ্যক মিউটেশনের কারণেই করোনা অতি সংক্রামক হয়ে উঠেছে। এমনকি ভ্যাকসিনকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতাও তৈরি হয়েছে এই অভিযোজিত ভাইরাসের।
অভিযোজিত ভাইরাসের এই তালিকায় সবার প্রথমেই রয়েছে বিলিতি স্ট্রেন। B.1.17 স্ট্রেনটিকে প্রথম ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্ন বলা হয়েছিল। এটি অতি সংক্রামক তো বটেই, একইসঙ্গে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতাও সামান্য কমিয়ে দিয়েছে। ব্রিটেনের সাম্প্রতিক দুরবস্থার জন্যও এই স্ট্রেনই দায়ী। মার্কিন মুলুকেও ঘুম কেড়েছে এই স্ট্রেন। অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেনটির নাম B.1.135। এটিও অতি সংক্রামক। ভ্যাকসিনকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা আরও বেশি। ভারতে যে কোভিশিল্ড দেওয়া হয়েছে, আফ্রিকার ট্রায়ালে তা প্রায় অকেজো হিসেবে গণ্য হয়েছে। ব্রাজিলের স্ট্রেনটিকে ডাকা হচ্ছে P.1 নামে। করোনাকে শক্তিশালী করে তুলেছে এই স্ট্রেনটিও।
তবে কিছু বিক্ষিপ্ত গবেষণা ছাড়া কোথাওই এই স্ট্রেনগুলির মারণ ক্ষমতা বেড়ে যাওয়া সম্পর্কে কোনও তথ্যই পাওয়া যায়নি। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বেশি মানুষ আক্রান্ত হলে পাটিগণিতের নিয়মেই মৃতের সংখ্যা বাড়বে। তাই করোনাবিধি মেনে চলা জরুরি। নাহলে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ চেহারা ধারণ করবে, ঠিক যেমনটা হয়েছিল একশো বছর আগের স্প্যানিশ মহামারীর ক্ষেত্রে।
কনসর্টিয়াম অফ জিনোমিক্সের তদন্ত বলছে, বুধবার পর্যন্ত দেশে মোট ৭৩৬টি করোনা নমুনায় বিলিতি স্ট্রেনের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। ৩৪টি নমুনায় মিলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা স্ট্রেনের খোঁজ। একটি নমুনাতে ব্রাজিলের স্ট্রেনের অস্তিত্ব মিলেছে। এর সঙ্গে যোগ হল নতুন ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টও।
এই পরিস্থিতিতে সাবধানতা অবলম্বন করবেন নাকি লাগামছাড়া হবেন, সবটাই সাধারণ মানুষের হাতেই। কারণ যে ভ্যারিয়েন্টই হোক না কেন, মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে কোনও ভ্যারিয়েন্টেই সংক্রমিত হবেন না।
আরও পড়ুন: Corona Cases and Lockdown News: আরও ‘বেপরোয়া’ করোনা, লকডাউন জারি হল বীড জেলায়