Parliament Discussion: বাইরে ধরনা, ভিতরেও হই-হট্টগোল, মুলতুবি; ইস্যুভিত্তিক আলোচনা-বিতর্কের সময় কই?

Parliament Winter Session: বিজেপি নেতা ভৈরন সিং শেখাওয়াত রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি প্রতিদিন সেরা বক্তা বিধায়ককে বেছে নেওয়ার একটি ঘরোয়া রীতি শুরু করেছিলেন। মূলত যাঁরা ভীষণভাবে সরকারের সমালোচনা করতেন, বিরোধীদের মধ্যে থেকে এমন কাউকে বেছে নেওয়া হত।

Parliament Discussion: বাইরে ধরনা, ভিতরেও হই-হট্টগোল, মুলতুবি; ইস্যুভিত্তিক আলোচনা-বিতর্কের সময় কই?
সংসদে করোনার হানা। ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 06, 2021 | 7:26 PM

বিজয় ত্রিবেদী: রাজস্থান বিধানসভার একটি ঘটনার কথা মাথায় আসছে, যখন বিজেপি নেতা ভৈরন সিং শেখাওয়াত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সেরা বক্তা বিধায়ককে বেছে নেওয়ার একটি ঘরোয়া রীতি শুরু করেছিলেন। মূলত যাঁরা ভীষণভাবে সরকারের সমালোচনা করতেন, বিরোধীদের মধ্যে থেকে এমন কাউকে বেছে নেওয়া হত। ওই বিধায়কও আবার সন্ধ্যায় মিষ্টি বিতরণ করতেন এবং সবাই স্পিকারের ঘরে সেগুলি খেতেন। এতে সারাদিনের তিক্ততারও অবসান ঘটত এবং সেই সঙ্গে বিধানসভার পরিবেশ এবং তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্কেরও উন্নতি করেছিল। রাজ্যসভায় ১২ জন সাংসদের সাসপেন্ড হওয়া নিয়ে সংসদে যে হট্টগোলের পরিস্থিতি চলছে, তাতে এই রীতির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।

শেখাওয়াত যখন উপরাষ্ট্রপতি হিসাবে রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন হয়েছিলেন এবং কিছু বিষয়ে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে মতানৈক্যের কারণে রাজ্যসভা মুলতবি করতে হয়েছিল, তখন তিনি বিরোধী সাংসদ এবং সরকারের প্রতিনিধিদের নিজের চেম্বারে ডাকতেন। তাঁদের গরম গরম গুলাব জামুন খাওয়াতেন। অধিবেশন মুলতবি থাকাকালীন, তিনি সরকারকে বিরোধীদের তাদের বিষয়গুলি উত্থাপনের সুযোগ দেওয়ার জন্য এবং বিরোধীদের সংসদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে রাজি করাতেন। কিন্তু সেই ভাবনাটাই আজকাল হারিয়ে যাচ্ছে। বাদল অধিবেশনে হট্টগোল ও চেয়ারপার্সনের সামনে বিক্ষোভ নিয়ে সরকারের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী দলের সাংসদদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। ক্ষমা চাওয়ার বিনিময়ে সাসপেনশন প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিলেও বিরোধী সাংসদরা নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে নড়তে রাজি হননি।

মূলত, রাজ্যসভায় শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম সপ্তাহে কোনও কাজকর্মই হয়নি। সাসপেন্ড সাংসদরা সংসদ ভবনের বাইরে গান্ধীর মূর্তির সামনে ধর্নায় বসেন। সংসদের ভিতরে বিরোধী সাংসদদের হট্টগোলের কারণে প্রতিদিনই বারবার মুলতবি করা হয়েছে অধিবেশন। শুক্রবার, বিজেপি সাংসদরা বিরোধী সাংসদের আচরণের বিরুদ্ধে আম্বেদকরের মূর্তির কাছে বিক্ষোভ করেন। বর্ষীয়ান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল আবারও জানিয়েছেন, বিরোধী সাংসদরা ক্ষমা চাইলে স্পিকার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করবেন। অন্যথায় এ হেন কাজ মার্শালদের সঙ্গে অনুপযুক্ত আচরণ এবং দুর্ব্যবহারকে উৎসাহিত করার সমতুল্য বলে বিবেচিত হবে। এদিকে আবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী প্রশ্ন তুলেছেন কেন বিরোধী সাংসদদের জনসাধারণের সমস্যা তুলে ধরার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। স্পষ্টতই, উভয় পক্ষই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিতর্ক, আলোচনা এড়াতে এটিকে একটি বড় ইস্যু বানিয়েছে।

দেশে জোট সরকারের আমলের পর থেকেই সংসদে হট্টগোল সরকারের কার্যক্রমকে ব্যাহত করার জন্য চাপের কৌশল হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। এই হাতিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ জোট সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়, তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করানোর জন্য। কিন্তু ২০১৪ সালে যখন মোদী সরকার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে, তখন তারা এই চাপের-রাজনীতির কাছে নতি স্বীকার করতে অস্বীকার করে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সবসময়ই বলে এসেছেন, তিনি সংসদে আলোচনা চান। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে মনমোহন সিং সরকারের আমলের তুলনায়, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল এবং পরবর্তী সময়ে সংসদে প্রায় ৩২ শতাংশ বেশি আলোচনা হয়েছে। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিতর্ক ছাড়াই বেশ কয়েকটি বিল পাস হয়। বিতর্কিত কৃষি আইনের সময়েও রাজ্যসভার ছয় বিরোধী সাংসদকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। এরপর ডেপুটি স্পিকার আন্দোলনরত সাংসদদের চা চক্রে ডেকে অচলাবস্থা কাটানোর চেষ্টা করলেও তাতে বরফ গলেনি।

এই সময়ে, যখন বিরোধী সাংসদরা রাজ্যসভার চেয়ারপার্সনকে অগণতান্ত্রিক বলে অভিযুক্ত করেছিলেন। এটিই সাসপেন্ডের প্রথম ঘটনা নয়। ষাটের দশকে প্রথম সাসপেন্ড করা হয়েছিল দেওয়া হয়। এরপর থেকে এ পর্যন্ত এগারো দফায় সাংসদদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। ওই সব চেয়ারপার্সন কি অগণতান্ত্রিক ছিলেন? এখন পর্যন্ত, ২জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি নিয়ে ২০১০ সালে সংসদভবন সবচেয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সাক্ষী থেকেছে। সেই বছর, লোকসভায় মাত্র ২ শতাংশ কাজ হয়েছিল এবং রাজ্যসভায় ৬ শতাংশ কাজ হয়েছিল। সেই সময়ের শাসক দল কংগ্রেস এবং বিরোধী বিজেপি সাংসদদের মধ্যে তুমুল হই-হট্টোগোল শুরু হয়েছিল।

প্রথম সাসপেন্ড করা হয়েছিল ১৯৬৩ সালে। রাষ্ট্রপতি ডঃ রাধাকৃষ্ণন সংসদের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। সেই সময় কয়েকজন সাংসদ ওয়াকআউট করার আগে হট্টগোল সৃষ্টি করেন। এরপর সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন লোকসভার স্পিকার।

১৯৮৯ সালে, ঠক্কর কমিশন রিপোর্টের উপর আলোচনার সময়, হট্টগোলের কারণে মোট ৬৩ জন সাংসদকে লোকসভা থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল।

২০১০: যখন একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজ্যসভায় মহিলাদের সংরক্ষণ সংক্রান্ত একটি বিল পেশ করছিলেন, তখন ক্ষুব্ধ সাংসদরা মন্ত্রীর হাত থেকে বিলের কপি ছিনিয়ে নেন। সাময়িক সাসপেন্ড করা হয়েছে ৭ সাংসদকে।

২০১৩: তেলাঙ্গানা রাজ্য গঠনের বিরোধিতায় ৯ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। পরে আরও ১২ জন সাংসদকে সাময়িক সাসপেন্ড করা হয়।

২০১৪: অন্ধ্র প্রদেশের ইস্যুতে হট্টগোলের সময়, একজন কংগ্রেস সাংসদ সংসদের সাধারণ সম্পাদকের টেবিলে একটি গ্লাস ছুড়ে দেন। তেলাঙ্গানা গঠনের বিরোধিতায় ১৬ জন সাংসদকে পুরো অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে।

২০১৫: লোকসভার স্পিকার ২৫ জন কংগ্রেস সাংসদকে বরখাস্ত করেছিলেন।

২০১৯: অন্ধ্র প্রদেশের জন্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করার সময় হট্টগোল সৃষ্টি করার জন্য ৪৫ জন লোকসভা সাংসদকে এক দিনের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছিল।

২০২০: কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি এবং টিএমসির সদস্যরা তিনটি কৃষি আইনের প্রতিবাদ করেন। কয়েকজন সাংসদ সাধারণ সম্পাদকের টেবিলে উঠে পড়েন। আট সাংসদকে এক সপ্তাহের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে।

২০২১: বিরোধী সাংসদরা বাদল অধিবেশন চলাকালীন বিশৃঙ্খলার অবলম্বন করেছিলেন। লোকসভায় ৬ টিএমসি সাংসদকে একদিনের জন্য সাসপেন্ড করা হয়।

২০২১: শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন, ১২ জন রাজ্যসভা সাংসদকে পুরো অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছিল। এই সাংসদদের বিরুদ্ধে কৃষি আইন এবং পেগাসাস কেলেঙ্কারি নিয়ে আলোচনার সময় হট্টগোল করার অভিযোগ আনা হয়েছে। ছয়জন কংগ্রেস সাংসদ, টিএমসি ও শিবসেনার দুজন করে সাংসদ এবং একজন করে সিপিআই ও সিপিএম সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

সংসদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য উভয় কক্ষের জন্য নিয়ম রয়েছে। এই নিয়মে সাংসদরা অন্যের বক্তব্য চলাকালীন বাধা দিতে পারবেন না। এই নিয়মগুলি ১৯৮৯ সালে সংশোধন করা হয়েছিল। এখন সাংসদের অধিবেশন কক্ষে স্লোগান তোলা, প্ল্যাকার্ড দেখানো, সরকারি কাগজপত্র ছিঁড়ে ফেলা এবং ক্যাসেট বাজানো ইত্যাদি নিষিদ্ধ। অসদাচরণের জন্য  সংসদ থেকে বহিষ্কার করার অধিকারের কথাও উল্লেখ করা রয়েছে। তাহলে তো এখন যা পরিস্থিতি সারাদিনই সংসদের বাইরেই থাকতে হবে সাংসদদের। খুব বেশি অশোভন আচরণের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান সেই সদস্যকে তার নাম ধরে ডাকতে পারেন। তারপর, সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ওই সাংসদকে সাময়িক বরখাস্ত করার জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারেন এবং সংসদের অনুমোদন সাপেক্ষে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়।

আরও পড়ুন : Supreme Court rebukes West Bengal: করোনায় মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণে কেন ঢিলেমি? পশ্চিমবঙ্গ সহ ৩ রাজ্যকে ‘সুপ্রিম’ ভর্ৎসনা