Dr Nityanand passes away: দিয়েছিলেন যৌনতা উপভোগের স্বাধীনতা, চলে গেলেন ‘মহিলাদের সহেলি’
Dr Nityanand passes away: ভারতীয় মহিলাদের হাতে তিনি তুলে দিয়েছিলেন 'সহেলি'। যা ভারতের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় মহিলাদের জনস্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটিয়েছিল। পাশাপাশি, বদলে দিয়েছিল ভারতের যৌনতার কাহিনিও। শুধুমাত্র পরবর্তী প্রজন্মের জন্ম দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে, যৌনতা হয়ে উঠেছিল মহিলাদের উপভোগের বিষয়। কীভাবে? সহেলীই বা কী? আসুন জেনে নেওয়া যাক, ভারতীয় এই বিজ্ঞানী সম্পর্কে
লখনউ: প্রয়াত ডা. নিত্যানন্দ। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) লখনউয়ের এসজিপিজিআই হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৯৯ বছর। গত বছরের ২৯ নভেম্বর তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছিল। সেই সময়ই এসজিপিআই হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু, কে এই ডাক্তার? কেনই বা তাঁকে নিয় আলোচনা করছি? বর্তমান সময়ের মানুষ হয়তো তাঁর নাম জানে না। তাই, অনেকটা নিঃশব্দেই চলে গেলেন তিনি। কিন্তু, আধুনিক ভারতের গঠনে তাঁর অবদান কখনও ভোলার নয়। ভোলা উচিত নয়। তাঁকে বলা হত ভারতীয় ‘মহিলাদের সহেলি’। বস্তুত, ভারতীয় মহিলাদের হাতে তিনি তুলে দিয়েছিলেন ‘সহেলি’। যা ভারতের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় মহিলাদের জনস্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটিয়েছিল। পাশাপাশি, বদলে দিয়েছিল ভারতের যৌনতার কাহিনিও। শুধুমাত্র পরবর্তী প্রজন্মের জন্ম দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে, যৌনতা হয়ে উঠেছিল মহিলাদের উপভোগের বিষয়। কীভাবে? সহেলিই বা কী? আসুন জেনে নেওয়া যাক, ভারতীয় এই বিজ্ঞানী সম্পর্কে –
একটা সময় ভারতে জন্মনিয়ন্ত্রণের কোনও ধারণাই ছিল না। কোনও দম্পতির ৮-১০ জন পর্যন্ত সন্তান হওয়াও কোনও আশ্চর্যের বিষয় ছিল না। মহিলাদের, স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়ার অধিকার তো ছিলই না, উপায়ও ছিল না। অনেক সময়ই তাঁদের নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধেও গর্ভবতী হতে হত। এতে, তাদের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ত। কিন্তু প্রতিরোধের কোনও উপায় ছিল না। আর, যৌনতাকে উপভোগ করা, তাও হত না। এমন পরিস্থিতিতে ডক্টর নিত্যানন্দ ও তাঁর গবেষণা দল তৈরি করেথিলেন বিশ্বের প্রথম নন-স্টেরয়েড গর্ভনিরোধক বড়ি। পরবর্তীকালে যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সহেলি’।
ড. নিত্যানন্দের জন্ম হয়েছিল ১৯২৫ সালের ১ জানুয়ারি, পাকিস্তানের লায়ালপুরে। যে শহরের বর্তমান নাম ফয়জলাবাদ। স্বাধীনতার সময় দেশভাগের আঘাত নেমে এসেছিল এই বিজ্ঞানীর উপরও। সপরিবারে পালিয়ে মুম্বই চলে এসেছিলেন। আর তারপর, স্বাধীন ভারতকে তিনি ওষুধ বিজ্ঞানে বিশ্বের শীর্ষে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, এই ক্ষেত্রে স্বাধীন ভারতকে বহু দূর তুলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জীববিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি ভারতে ফিরে আসেন। ১৯৫১ সালে তিনি সেন্ট্রাল ড্রাগ রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা সিডিআরআই-এ যোগদান করেন। সিডিআরআই-এর গবেষণাগারেই একের পর এক যুগান্তকারী গবেষণা চালিয়েছেন তিনি। ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৪ – দশ বছর তিনি এই সংস্থার ডিরেক্টর পদেও ছিলেন।
1/2 Born on January 1, 1925, in #Lyallpur now #Faislabad, #Pakistan, #DrNityaNand, was a medicinal chemist who worked for @CSIR_CDRI #Lucknow since its inception in 1951 and also served as the director of the #Central_Drug_Research_Institute #Lucknow from 1974 to 1984. pic.twitter.com/8WPTJBD7xH
— CSIR-CDRI (@CSIR_CDRI) January 27, 2024
সিডিআরআইয়ে থাকার সময় ডা. নিত্যানন্দর সবথেকে বড় আবিষ্কার ছিল নন-স্টেরয়েড গর্ভনিরোধক বড়ি। তিনি এই বড়ির নাম দেন অরমেলোক্সিফেন (Ormeloxifene)। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর নাম দেয় সেন্টক্রোমান (Centchroman)। পরবর্তীকালে বাণিজ্যিকভাবে ‘সহেলি’ নামে বিক্রি হয় এই বড়ি। সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে এখনও এই বড়ি বিনামূল্যে দেওয়া হয়, নাম ‘ছায়া’।
স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছিল। সরকার স্লোগান দিয়েছিল, ‘হাম দো, হামারে দো’। অর্থাৎ, দম্পতি প্রতি সর্বোচ্চ ২টি করে সন্তান ধারণের। কিন্তু, শুধুমাত্র স্লোগান দিয়ে এই লক্ষ্য পূরণ সম্ভব ছিল না। এই পরিস্থিতিতে গর্ভনিরোধক বড়ি, ‘সহেলি’ দেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিল। ভারতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এই বড়ি। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতে এই বড়ি পাওয়া যায়। অর্মালিন, নোভেক্স-ডিএস, সেন্ট্রন, সেভিস্টালের মতো বিভিন্ন বাণিজ্যিক নামেও এই বড়ি পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে এই ওষুধ গর্ভনিরোধক হলেও, এটি জরায়ুর রক্তপাত এবং স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও কার্যকর ভূমিকা নেয়। আর ‘সহেলি’ হাতে পাওয়ার পর, ভারতের মহিলারাও যৌনতা পুরোপুরি উপভোগ করতে শুরু করেন।
1/3 In 2005, the Indian Pharmacopoeia Commission (IPC) appointed him as the chairman of its scientific committee. In 2012, he was awarded the #PadmaShri by the Indian government. pic.twitter.com/g4Gn8fWCuk
— CSIR-CDRI (@CSIR_CDRI) January 27, 2024
এছাড়াও ম্যালেরিয়া, কুষ্ঠ ও টিবি-র মতো বিভিন্ন রোগ নিয়েও গবেষণা করেন ডা. নিত্যানন্দ। এই রোগগুলির ওষুধ তৈরিতেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাঁকে জেনেরিক ফার্মার জনকও বলা হয়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ডা. নিত্যানন্দের এই বিপুল অবদানের প্রেক্ষিতে, ২০১২ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত করেছিল।