Education System: এ কেমন পড়াশুনা! নম্বরের ইঁদুর দৌড়ে ৬০ শতাংশ পড়ুয়াই মনে করছে জীবন বৃথা
Result evaluation, নম্বর পাওয়ার এই ধরনে শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। কিসের ভিত্তিতে তারা শিক্ষার্থীদের এই বিপুল পরিমাণ নম্বর দিচ্ছেন সেটা যাচাই করে দেখাও প্রয়োজনীয়। একটি প্রবন্ধ মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে কোন মাপকাঠিতে তারা আবেদনকারীদের নম্বর দিচ্ছেন, যে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ঔদ্ধত্যের সঙ্গে জানিয়ে দিতে পারে যে তোমার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা বন্ধ
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনের বেশিরভাগ কলেজে ভর্তি হতে গেলে যে পরিমাণ নম্বর থাকতে হয় কোনও সাধারণ মানের ছাত্রছাত্রদের কাছে সেই পরিমাণ নম্বর শুধু দুঃখের নয়, রীতিমতো হাস্যকর। একটা সময় এমন ছিল যখন, পরীক্ষায় ৯৯ শতাংশ নম্বর পাওয়ার কথা কেউ দিবা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারতো না। কলা বিভাগে এই পরিমাণ নম্বর পাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব। সেই সময় পরীক্ষর ফলাফলে ৬০ শতাংশ নম্বর পাওয়াকেও সসম্মানে উত্তীর্ণ হওয়া বলে মনে করা হত। কারণ ৬০ শতাংশ নম্বরকে এখনও প্রথম বিভাগ বলে মনে করা হয়। কিন্তু এখন কেউ এই পরিমাণ নম্বর পেয়ে পাশ করলে আমাদের এই সমাজ তাঁকে ট্যারা চোখে দেখে।
অনেক শিক্ষাবিদই মনে করেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় এই উদ্ভট নম্বর বিভাজন সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাকেই হাসির খোরাকে পরিণত করেছে। এই চিন্তাধারা এতটাই ঠুনকো যে ইদুর দৌঁড়ে অংশগ্রহন করে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি কিশোর কিশোরীর ভবিষ্যৎ বিপন্ন হতে পারে। কারণ এই শিক্ষা ব্যবস্থা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে প্রথম থেকেই তারা এই পদ্ধতিকে অবলম্বন করতে গিয়ে বাড়তি পরিশ্রম করতে থাকে যা আদতে ভবিষ্যতে কোনও কাজেই লাগেনা। ১০০ শতাংশ নম্বর নিয়ে যারা পাশ করে থাকেন, এটা জানার পর হয়তো তারা ভবিষ্যতে হতাশ হয়ে পড়বেন কারণ তাদের পাওয়া এই বাড়তি নম্বর কেরিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে কোনও রকম নিশ্চয়তা দিতা পারবে না। এর ফলে তাদের হতাশা গ্রস্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। শিক্ষা ব্যবস্থার এই নেতিবাচক দিক ছাত্রছাত্রীদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকিয়ে দিয়েছে, তারা ঠিক এবং এই জগতে তাদের জানার মতো আর কোনও কিছু বাকি নেই।
নম্বর পাওয়ার এই ধরনে শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। কিসের ভিত্তিতে তারা শিক্ষার্থীদের এই বিপুল পরিমাণ নম্বর দিচ্ছেন সেটা যাচাই করে দেখাও প্রয়োজনীয়। একটি প্রবন্ধ মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে কোন মাপকাঠিতে তারা আবেদনকারীদের নম্বর দিচ্ছেন, যে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ঔদ্ধত্যের সঙ্গে জানিয়ে দিতে পারে যে তোমার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা বন্ধ।
সব থেকে অবাক করার মতো বিষয়, স্কুল গুলি এই ধরণের নির্বুদ্ধিতাকে প্রশ্রয় দেয়। তারা বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই আত্মশ্লাঘা জাগিয়ে তোলে, “তুমিই সেরা, তুমি নিখুঁত” এই চিন্তাধারার সঙ্গে রূঢ় বাস্তবের যে আদতে কোনও মিল নেই, সেটা বুঝতে বুঝতে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়।
শিক্ষা ব্যবস্থায় আবার সুস্থতা ফিরিয়ে আনার সময় এসেছে। আট ও নয়ের দশকে যে সমস্ত ছেলেমেয়েরা সম্মানজনক নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন, নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের করা যাবতীয় পরিশ্রম উপেক্ষিত হয়েছে। এটা কি প্রতিভার অপচয় নয়? যে বিশ্ব বিদ্যালয় শুধুমাত্র একটি কাগজে ছাপানো মার্কশিটকে প্রাধান্য দেয় তাদের বিরুদ্ধে মানসিক আঘাত করার অভিপ্রায়ের অভিযোগ আনা উচিৎ।
সব থেকে দুর্দশার মুখোমুখি হন মা বাবারা। তারা যখন দেখেন তার ছেলে বা মেয়ে ৯৬ শতাংশ নম্বর পেয়েও কাঁদছে অথবা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে, তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনও উপায় খুঁজে পেতেই তারা হিমশিম খেয়ে যান।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের করা একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে এই নম্বর বিভাজন পদ্ধতির ফলে ৭৯ শতাংশ ছাত্রছাত্রী উদ্বেগে, ৭৫.৮ শতাংশ ছাত্রছাত্রী মানসিক হতাশায় ভুগছেন। তাদের মধ্যে ৫৯.২ ছাত্রছাত্রী মনে করেন তাদের দ্বারা এ জীবনে কিছুই হবেনা। স্কুল ও অনেকের ক্ষেত্রে মানসিক বিড়াম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ধরণের মানসিক অবস্থা তাদের সামাজিক জীবন ও ভবিষ্যৎ গঠনের পক্ষে বাধার সৃষ্টি করে। এমনকি এই হতাশা শারীরিক স্বাস্থ্যকেও বিঘ্নিত করতে পারে।
যখন শিক্ষা ব্যবস্থায় ৫০ শতাংশ ও ৯০ শতাংশের মধ্যে গুণগত কোনও ফারাক থাকবেনা তখন এই বলা যেতে পারে স্থিতাবস্থা ক্রমেই ফিরে আসছে। এই ব্যবস্থা ফিরে যাওয়া আদৌ সম্ভব কিনা সেই নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। এরপর যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য ১০০ নম্বরের মধ্যে ১২০ পেতে বলা হয় তাতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। সমাজে কি এমন কেউ নেই যে বা যার শিক্ষা ব্যবস্থার এই ধরনকে আশীর্বাদ নয় অভিশাপ হিসেব চিহ্নিত করবে? প্রশ্ন রয়েই গেল।
আরও পড়ুন Kolkata Cyber Crime: করোনা মহামারীতে পাঁচগুন বেড়েছে সাইবার অপরাধ, চিন্তায় কলকাতা পুলিশ