Ernakulam blast: কেরলের ঘটনায় ব্যথিত রাজ্যপাল বোস, নিন্দা সব মহল থেকে
Ernakulam blast: প্রাথমিকভাবে এই বিস্ফোরণ আইইডি ব্যবহার করে ঘটানো হয়েছে, অর্থাৎ, সন্ত্রাসবাদী হামলা বলেই জানিয়েছে কেরল পুলিশ। মামলার তদন্তের তারা এক বিশেষ তদন্ত দল গঠন করেছে। তদন্ত করছে এনআইএ-ও। রাজনৈতিক রঙ নির্বিশেষে এই হামলার নিন্দা করেছেন বিভিন্ন দলের নেতারা।
এর্নাকুলাম: রবিবার সকালে কেরলের এর্নাকুলামে এক ধর্মীয় প্রার্থনা সভায় পরপর তিনটি বিস্ফোরণে অন্তত এক জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও ৩৬ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রাথমিকভাবে এই বিস্ফোরণ আইইডি ব্যবহার করে ঘটানো হয়েছে, অর্থাৎ, সন্ত্রাসবাদী হামলা বলেই জানিয়েছে কেরল পুলিশ। মামলার তদন্তের তারা এক বিশেষ তদন্ত দল গঠন করেছে। তদন্ত করছে এনআইএ-ও। রাজনৈতিক রং নির্বিশেষে এই হামলার নিন্দা করেছেন বিভিন্ন দলের নেতারা।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস আদতে কেরলের বাসিন্দা। এই ঘটনার নিন্দা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, “কোচির কালামাসেরিতে ধর্মীয় সমাবেশে বিস্ফোরণের ঘটনা শুনে অত্যন্ত মনকষ্ট পেয়েছি। যে নির্দোষ মানুষগুলিএই ঘটনার শিকার হয়েছেন এবং তাঁদের পরিবারের পাশে আছি আমি। এই মর্মান্তিক ঘটনায় আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।” হতাহতদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানও। রাজ ভবনের জনসংযোগ আধিকারিকের মাধ্যমে এক বিবৃতি প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, “কালামাসেরিতে এক ধর্মীয় সমাবেশে বিস্ফোরণের কথা শুনে আমি শোকাহত। একজন নিহত এবং ২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। হতাহতদের আত্মীয়দের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা রইল। আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি।”
রাজ্যে যখন এই রকম বড় মাপের নাশকতার ঘটনা ঘটল, সেই সময় কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ছিলেন নয়া দিল্লিতে, প্যালেস্তিনীয় নাগরিকদের প্রতি সংসহতি প্রকাশ করে সিপিআইএম-এর আয়োজিত এক সভায়। সেখান থেকেই তিনি বলেছেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমরা ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছি। রাজ্যের সব শীর্ষ আধিকারিকরা এর্নাকুলামে রয়েছেন। ডিজিপিও ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন। আমরা এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছি। আমি ডিজিপির সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্তের পর আমরা আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে পারব।”
অন্যদিকে, কেরল বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ভিডি সাথিসান বলেছেন, “আমি জানতে পেরেছি, দুটি বিস্ফোরণ হয়েছে এবং ঘটনাস্থলে আগুন লেগে গিয়েছে। প্রথমটি একটি বড় বিস্ফোরণ ছিল। দ্বিতীয়টি ছিল ছোটখাটো। একজন মহিলার মৃত্যু হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে ২৫ জনকে। এই ২৫ জনের মধ্যে ৬ জন আইসিইউ-কে আছেন।” ব্যক্তিগতভাবে ঘটনার নিন্দা করার পাশাপাশি, এই হামলার ঘটনার নিন্দা করার জন্য সমস্ত ধর্মীয় নেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন কেরলের কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, “কেরলের ধর্মীয় সমাবেশে বোমা হামলার খবরে আমি শোকাহত এবং আতঙ্কিত। আমি এই ঘটনার নিন্দা জানাই এবং দ্রুত পুলিশি ব্যবস্থার দাবি জানাই। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। আমার রাজ্যে হত্যা ও ধ্বংসের মানসিকতা বাড়তে দেখাটা দুঃখজনক। আমি সমস্ত ধর্মীয় নেতাদের ঐক্যবদ্ধভাবে এই ধরনের বর্বরতার নিন্দা করতে আহ্বান জানাই। তাঁদের অনুগামীদের শেখানো উচিত, হিংসা আরও হিংসা ছড়ায়, তাছাড়া হিংসা দিয়ে আর কিছু লাভ করা যায় না।”
বিদেশ বিষয়ক ও সংসদ বিষয়ক দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী ভি মুরালিধরন বলেছেন, “কোচিতে এক প্রার্থনা সভায় বোমা বিস্ফোরণ, এক মর্মান্তিক ঘটনা। কেরল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতিমধ্যেই কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমারও টেলিফোনে কথা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি। আমি নিশ্চিত, কে বা কারা এই ঘটনার পিছনে রয়েছে, এবং কী কারণে এই হামলা চালান হল, তারা ঠিক খুঁজে বের করবে। আহতদের সব ধরনের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার জন্য আমি রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করছি। তদন্ত শেষ হওয়ার জন্য আমরা অপেক্ষা করব। তারপরই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কেরলের বিজেপি নেতা আলফোনস কেজে এই হামলার পিছনে বাম-কংগ্রেসকেদায়ী করেছেন। তাঁর দাবি, দুই দলই সন্ত্রাসবাদকে মদত দেয়। সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে তিনি বলেছেন, “একাধিক বিস্ফোরণ ঘটেছে…পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক…আমি দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছি, কেরলে ডান-বাম দুই পক্ষই সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করছে…কেরালায় এটা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে…আজ কেরল সন্ত্রাসবাদের কবলে পড়েছে। এটা বন্ধ করতেই হবে।”
অন্যদিকে, কেরলের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিআই-এম নেতা এমএ বেবি বলেছেন, “প্রাণহানির ঘটনা খুবই দুঃখজনক। কয়েকজন গুরুতর আহতও হয়েছেন। কালামাসেরির বিধায়ক পি রাজীব সিপিআইএম সদস্য, তিনি একজন প্রতিমন্ত্রীও। তিনি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও। তিনি দিল্লিতেই ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে অবিলম্বে কেরলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ইতিমধ্যে রওনা দিয়েছেন। ত্রিবান্দ্রমে যে মন্ত্রীরা ছিলেন, তাঁরাও এর্নাকুলাম যাচ্ছেন। পুলিশকে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন অবিলম্বে এই ঘটনার নির্ভুল তদন্ত করতে। কেরল পুলিশ এই ধরনের বিষয়ে অনুসন্ধানে অত্যন্ত দক্ষ। তবে, কেন্দ্রীয় সরকার, এনআইএ যদি কেরল পুলিশকে সাহায্য করতে চায়, তবে অসুবিধা নেই।”