Floating stone Mainpuri: অবাক কাণ্ড! নদীতে ভেসে যাচ্ছে ‘রাম নাম লেখা পাথর’, গ্রামবাসীদের দাবি ‘রামসেতু’র অংশ
নদীর জলে ভাসছে পাথর, গায়ে লেখা শ্রীরামের নাম। এমনই দাবি উত্তরপ্রদেশের মৈনপুরী জেলার ঈশান নদীর পার্শ্ববর্তী এক গ্রামের বাসিন্দাদের। দেখুন ভিডিয়ো।
লখনউ: রামায়ণের কাহিনি অনুসারে, ত্রেতাযুগে ভগবান রাম লঙ্কায় যাওয়ার জন্য সমুদ্রের উপর একটি ভাসমান পাথরের সেতু তৈরি করেছিলেন। সেতুর প্রতিটি পাথরের গায়ে শ্রীরামের নাম লেখা ছিল। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের মৈনপুরী জেলার ঈশান নদীতেও এরকই নাকি একটি পাথরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, এমনি দাবি স্থানীয় গ্রামবাসীদের। তাঁদের দাবি, কয়েকজন রাখাল প্রথম ওই পাথরটিকে নদীতে ভাসতে দেখেছিল। তারাই সেটিকে তুলে আনে। এই নিয়ে আশপাশের এলাকায় হইচই পড়ে গিয়েছে। পাথরটিকে দেবজ্ঞানে পুজো করার দাবি উঠেছে। কারণ, তাঁদের দাবি, এটি পৌরাণিক রামসেতুরই অংশ। জলে পাথর ভাসার অবশ্য বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে। তবে, তার আগে জেনে নেওয়া যাক, ঘটনাটি ঠিক কী ঘটেছে।
‘অমরউজালা’র এক প্রতিবেদন অনুসারে পাথরটি পাওয়া গিয়েছে মৈনপুরী জেলার কুসমারা এলাকার আহমলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে। গ্রামের পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে ঈশান নদী। প্রতিবেদন অনুসারে, গত শনিবার কয়েকজন রাখাল ছেলে ওই নদীর চরে গবাদি পশু চড়াতে গিয়েছিল। সেই সময় তারা নদীতে “কালো কিছু একটা” ভাসতে দেখেছিল। কৌতূহলবশত, তারা নদী সাঁতরে গিয়ে ওই বস্তুটির কাছে গিয়েছিল। সেটি একটি পাথর দেখে তারা অবাক হয়েছিল। সেটিকে তুলে এনে তারা গ্রামের প্রধান ও অন্যান্য বিশিষ্টজনদের খবর দেয়।
রাখালদের কথা যাচাই করতে পঞ্চায়েত প্রধান নীতিন পান্ডের উপস্থিতিতে একটি গামলায় জল ভরে পাথরটি তাতে ডোবানো হয়েছিল। কিন্তু তা ভেসে উঠেছিল। হাত দিয়ে গামলার জলের নিচে যতবার পাথরটিকে চেপে ধরা হয়েছে, চাপ সরিয়ে নিতেই তা ভেসে উঠেছে। তা দেখে গ্রামবাসীরা হতবাক হয়ে গিয়েছেন। দ্রুত আশপাশের এলাকায় ওই রামনাম লেখা ভাসমান পাথরের খবর ছড়িয়ে পড়ে। পাথরটির জলে ভাসার ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভাইরাল হয়েছে। ‘ইন্ডিয়াটুডে’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাথরটির ওজন প্রায় ৫.৭ কেজি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, পাথরটি ‘রাম সেতু’-র সথে জড়িত। তাঁদের দাবি পাথরটি তামিলনাড়ুর রামেশ্বর থেকে ভেসে এসেছিল। রামায়ণ মহাকাব্যের কাহিনি অনুসারে, রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়ার সময় রামেশ্বরেই ওই পৌরাণিক সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। গ্রাম প্রধান নীতিন পান্ডে বলেছেন, “হ্যাঁ, নদীতে একটি পাথর ভাসতে দেখা গিয়েছে, যার উপরে রাম নাম লেখা আছে। আমরা সেটি একটি ঘরে রেখেছি। কেউ কেউ বলছেন, এটি রামেশ্বরের পাথর, যেখানে সেতুটি তৈরি করা হয়েছিল। প্রত্যেকেরই নিজের নিজের মতামত আছে।”
পাথরটি রামসেতুর অংশ কি না, সেই বিতর্কে ঢুকতেই চাইছেন না গ্রামবাসীরা। তাঁরা তাঁদের বিশ্বাস অনুযায়ী পাথরটিকে পুজো করতে চান। তাঁদের ইচ্ছে, সেটিকে কোনও মন্দিরে স্থাপন করা হোক। তাঁদের দাবি মেনে গ্রাম প্রধানও জানিয়েছেন, কুসমরা রামলীলা ময়দানে একটি হনুমান মন্দির আছে। সেখানেই একটি কুণ্ডি তৈরি করে এই “অলৌকিক” পাথরটিকে স্থাপন করা হবে। সেখানেই “রামনাম লেখা ভাসমান পাথর”টিকে পূজাপাঠ করা হবে।
প্রসঙ্গত ২০২১ সালের জুনে আগ্রার যমুনা নদীতেও এরকম ভাসমান পাথর পাওয়ার দাবি উঠেছিল। তবে বিজ্ঞানীরা বলেন, শ্রীরামের নাম লেখা না থাকলেও জলে পাথর ভাসতে বাধা নেই। এর পিছনে আসলে একটা বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। তাঁদের মতে, কোনও কিছু জলে ভাসবে না ডুববে তা নির্ভর করে বস্তুটির বায়োন্সি (Buoyancy) বা প্লবতার উপর। যে পাথরগুলিকে জলে ভাসতে দেখা যায়, সেগুলির বাইরে আর পাঁচটি পাথরের মতো হলেও, সেগুলির অভ্যন্তরীণ গঠন অনেকটা স্পঞ্জের মতো হয়। ভিতরে এয়ার পকেট বা বাতাসের থলি থাকে। ফলে, পাথরগুলো ওজনে ভারি হওয়া সত্ত্বেও ঘনত্ব অনেক কম হয়। ফলে, সেগুলির প্লবতাও অনেক বেশি হয়। এই কারণেই সেগুলি জলে ভাসতে পারে।