‘কুমিরের কান্না’! মমতাকে নাম না করেই আক্রমণ নির্মলার
রাজ্যকে কৃষক সম্মাননিধি প্রকল্প নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, "কুমিরের কান্না কেঁদে লাভ নেই। টাকা পড়ে রয়েছে, অথচ তা কৃষকদের পেতে দেওয়া হচ্ছে না।"
নয়া দিল্লি: করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে দেশ, তবুও থেমে থাকেনি উন্নয়নও। শনিবার লোকসভায় বাজেটের জবাবি ভাষণে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন (Nirmala Sitharaman) বললেন, “করোনাকালেও প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়নের কোনও সুযোগ ছাড়েননি। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠে এই বাজেট দেশকে আত্মনির্ভর হওয়ার পথেই এগিয়ে যাবে।” একইসঙ্গে রাজ্যকে কৃষক সম্মাননিধি প্রকল্প নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, “কুমিরের কান্না কেঁদে লাভ নেই। টাকা পড়ে রয়েছে, অথচ তা কৃষকদের পেতে দেওয়া হচ্ছে না।”
রাজ্যসভার অধিবেশন বাতিল হয়ে যাওয়ায় লোকসভার অধিবেশন আজ সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়। সেখানেই তিনি জবাবি ভাষণে জানান, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার জন্যই আগামী অর্থবর্ষের বাজেট সুচিন্তিত পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে। এই বাজেট শুধুমাত্র স্বল্পমেয়াদী সমাধানই নয়, দীর্ঘকালীন সমাধান, যা দেশের অর্থনীতিকে দ্রুত বাড়তে সাহায্য করবে।
সরকারের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “করোনা সংক্রমণের মতো কঠিন সময়ও সরকার দেশের উন্নয়ন বজায় রেখেছে। আত্মনির্ভর ভারত গড়ার লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপও করা হয়েছে।” অর্থনীতির সংস্কারের কথা উল্লেখ করে নির্মলা জানান, এই সংস্কারগুলি কেবল সাধারণ পরিবর্তনই ছিল না। দেশের অর্থনীতিকে বিশ্বের সেরা অর্থনীতি হিসাবে গড়ে তোলার কার্যক্রমও পরিবর্তিত নীতিগুলিতে প্রতিফলিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বড় বদল, বিহার থেকে শিক্ষা নিয়েই এই পদক্ষেপ
নতুন বাজেটে “লাইসেন্স কোটা রাজত্ব”-ও শেষ করা হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আগে ব্যবসার ছাড়পত্র নিয়ে যে বেআইনি কারবার চালানো হচ্ছিল। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল ছোট ও মাঝারি মাপের ব্যবসাগুলি। প্রধানমন্ত্রী নিজে যখন ৯০-র দশকে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন নতুন বিভিন্ন নিয়ম এনে সেই কোটা রাজত্ব দূর করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই অভিজ্ঞতাকেই কাজে লাগিয়ে বাজেটে ব্যবসায় অনুমোদন নিয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে।”
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ নিয়ে নির্মলা সীতারামন জানান, দেশবাসীর স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখেই দেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়নের প্রচেষ্টা করছে সরকার। কৃষিক্ষেত্রে আর্থিক বরাদ্দ তিনি বলেন, “পিএম স্বনিধি যোজনায় প্রায় ১০ কোটিরও বেশি কৃষকদের মোট ১.১৫ লাখ কোটি টাকার আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে।” বিরোধীদের কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “যারা বলেন যে আমরা স্বার্থান্বেষী কিছু গোষ্ঠীর জন্য কাজ করি, তাদের জানিয়ে রাখি এই স্বনিধি প্রকল্প স্বার্থান্বেষীদের জন্য নয়।”
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)-কেও প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি প্রকল্প নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি অর্থমন্ত্রী। নাম না করেই তিনি বলেন, “কৃষকদের সাহায্যের জন্য টাকা পড়ে রয়েছে, এ দিকে কৃষকদের জন্য কুমিরের কান্না কাঁদা হচ্ছে। এতে কোনও লাভ হবে না।”
একইসঙ্গে বিরোধীদল কংগ্রেসকে আক্রমণ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “দেশের অর্থনীতির অগ্রগতিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল কংগ্রেস। ১৯৪৮ সাল থেকে ভারতের অর্থনীতিতে যে পরিবর্তনগুলির প্রয়োজন ছিল, তা আটকে রেখেছিল কংগ্রেস।” তিনি আরও বলেন, “আমরা কংগ্রেসের মতো নই, আমরা অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনার উপরই বিশ্বাসী। বিজেপিই ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় স্বাধীনতা দিয়েছিল।”
কৃষি আইন নিয়ে রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, “আমি ভেবেছিলাম রাহুল গান্ধী হয়তো বলবেন যে কৃষি আইন নিয়ে কংগ্রেস কেন ইউ টার্ন নিল। নিজের প্রচারপত্রে ওনারা কৃষিক্ষেত্রে পরিবর্তন নিয়ে কথা বললেও এখন সেই আইনেরই প্রতিবাদ করছেন। ভোটের জন্য তাঁরা কৃষি ঋণের লোভ দেখালেও মধ্য প্রদেশের মতো বহু রাজ্যেই সেই প্রকল্প চালু করা হয়নি।”
আরও পড়ুন: যৌন হেনস্থা নিয়ে বিতর্কিত রায়, পুষ্প গনেড়িওয়ালার মেয়াদ কমল এক বছর