সকলকে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা কখনওই বলেনি সরকার: কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব
যাঁরা ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গিয়েছে, তাঁদের আদৌই ভ্যাকসিনের প্রয়োজন রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে সমগ্র বিশ্বজুড়েই আলোচনা চলছে।
TV9 বাংলা ডিজিটাল: করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন (Coronavirus Vaccine) নিয়ে উত্তেজনা দেশজুড়ে। কোন ভ্যাকসিন আগে আসবে, কোনটির কার্যকারিতা কত-এই বিষয়েই যখন আলোচনায় ব্যস্ত দেশবাসী, সেই সময় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ (Rajesh Bhushan) জানিয়ে দিলেন, গোটা দেশের মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা মোটেই বলেনি সরকার।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)-র ভ্যাকসিন প্রস্তুতির বিষয়ে অগ্রগতি যাচাই করে দেখার তিনদিনের মধ্যেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিল স্বাস্থ্যমন্ত্রক (Health Ministry)। মঙ্গলবার একটি সাংবাদিক বৈঠকে রাজেশ ভূষণ করোনা ভ্যাকসিন বন্টন সম্পর্কে বলেন,”আমি বারংবার বলেছি, বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনার আগে সত্য তথ্য জানা প্রয়োজন এবং তারপর সেই বিষয়ে আলোচনা করা উচিত। সমগ্র দেশবাসীকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা কখনওই বলা হয়নি, এই বিষয়টি আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই।”
তিনি জানান, বর্তমানে মূল লক্ষ্য হল সঙ্কটজনক ব্যক্তিদের (যাদের সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি) প্রথমে ভ্যাকসিন দিয়ে সংক্রমণের চেইন ভাঙা। কে আগে ভ্যাকসিন পাবে, তার তালিকা সম্পর্কে সরকার আগেই জানিয়েছে। তালিকায় রয়েছে প্রায় এক কোটি স্বাস্থ্যকর্মী, নিরাপত্তারক্ষী, যাদের বয়স ৫০ বছরের বেশি এবং যাদের কো-মর্ডিবিটির আশঙ্কা রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের নাম। করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, এমন ব্যক্তিদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে কিনা, এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে রাজেশ ভূষণ জানান, যাঁরা ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গিয়েছে, তাঁদের আদৌই ভ্যাকসিনের প্রয়োজন রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে সমগ্র বিশ্বজুড়েই আলোচনা চলছে।
আরও পড়ুন: প্রথম দিন নিষ্ফলা, আজ ফের বৈঠক, আইন বাতিলেই অনড় কৃষকরা
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিবের বক্তব্যে সহমত পোষণ করে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের প্রধান ডঃ বলরাম ভার্গব (Balram Bhargava) বলেন,”যাদের সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি, এমন ব্যক্তিদের যদি ভ্যাকসিন দিয়ে সংক্রমণ রুখে দেওয়া যায়, তবে সমগ্র দেশবাসীকে ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রয়োজন নাও পড়তে পারে।”
গত বছরে চিন (China) থেকে যে ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়, তা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তেই আমজনতার মুখে আসে নতুন শব্দ, ‘হার্ড ইমিউনিটি’ (Herd Immunity)। যখন একাধিক মানুষ সংক্রামক ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তখন আপনাআপনিই একটি প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। কোনও দেশই এখনও ‘হার্ড ইমিউনিটি’ সৃষ্টির দাবি জানায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র পর্যবেক্ষণ, করোনা সংক্রমণ রুখতে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ অন্যতম পন্থা হলেও তা দীর্ঘমেয়াদী সফলতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
আইসিএমআর (ICMR)-র সেরো সমীক্ষা (Sero-Survey)-এ দেখা গিয়েছে, ভারতের জনসংখ্যার সাত শতাংশ, যাদের বয়স ১০ বছর বা তার কম, তারা করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছে। অন্যদিকে দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো মেট্রো শহরগুলিতে সমীক্ষা করে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গিয়েছে। যেমন, মুম্বইয়ের ৭৫ শতাংশ জনসংখ্যারই ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি (Antibody) তৈরি হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে দিল্লিতে প্রতি চারজনের মধ্যে একজনই ভাইরাসের সংস্পর্শে এসে অ্যান্টিবডি তৈরি করে নিয়েছে বলে দাবি সমীক্ষায়।
আরও পড়ুন: ১২ বছরের আগে একটি শহরের মৃত্যুর গল্প! আজও শিউরে ওঠে দেশবাসী