KCR vs BJP: দোস্তি থেকে সরাসরি কুস্তি! কীভাবে মাত্র ৩ বছরে বিজেপির চরম শত্রু হয়ে উঠলেন কেসিআর?
KCR vs BJP: ৫ বছর আগেও বিজেপি এবং টিআরএস গলায় গলায় বন্ধু ছিল। এখন তা বদলে গিয়েছে চরম তিক্ততায়। কীভাবে, কেন বদলে গেল এই সম্পর্কের সমীকরণ?
হায়দরাবাদ: শনিবার (২ জুলাই) হায়দরাবাদে বিরোধী দলের সর্বসম্মত রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। এরকয়েক ঘণ্টা পরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একই বিমানবন্দরে এসে নামলেও, দেখা মেলেনি তেলঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির প্রধানকে। বদলে মন্ত্রিসভার এক সদস্যকে পাঠিয়েছিলেন কেসিআর। আর এই নিয়ে বিজেপি-টিআরএস তিক্ততা চরমে পৌঁছেছে। বিজেপিও ছেড়ে কথা বলেনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, ধর্মেন্দ্র প্রধানরা তাঁর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর পদের অবমাননা করার অভিযোগ করেছেন। অথচ, একসময় এই দুই দল পরস্পরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল। কিন্তু এখন অবস্থা পুরো ‘আজ দুজনার দুটি পথ দুটি দিকে গেছে বেঁকে’! কীভাবে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে দোস্তি বদলে গেল কুস্তিতে?
৫ বছর আগেও বিজেপি এবং টিআরএস বলা যেতে পারে গলায় গলায় বন্ধু ছিল। তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও পাঁচ বছর আগে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী রামনাথ কোবিন্দকেই জোরালোভাবে সমর্থন করেছিলেন। প্রায়শই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সমর্থনের হাত বাড়িয়েদিতে দেখা যেত তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি দলের প্রদানকে। এআইমিম-এর সঙ্গে জোট গড়ে সরকার চালালেও, তিন তালাকের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সংসদে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে সমর্থন করেছে টিআরএস। তবে, ২০১৯-এ নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই এই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বদলে যেতে শুরু করেছিল। দুই দলের মধ্যে সম্পর্ক ধীরে ধীরে তিক্ত হতে শুরু করেছিল। কিন্তু কেন?
বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের সম্ভাব্য বৃদ্ধি অনুধাবন করেই মরিয়া হয়ে উঠেছেন কেসিআর। খেপে যান বিজেপির উপর। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী ফিরে আসা নিয়ে, কেসিআর বা টিআরএস দলের কোনও আপত্তি ছিল না। কিন্তু গোল বাধে লোকসভা নির্বাচনে, তেলঙ্গানায় বিজেপির মারকাটারি ফলাফলে। ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ১১৮টি আসনে লড়ে বিজেপি জিততে পেরেছিল মাত্র ১টি আসন। তাতে কোনও চমক ছিল না। কারণ তেলঙ্গানায় বরাবরই দুর্বল ছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু, এক বছর পরের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য থেকে চারটি আসন জিতে সবাইকে চমকে দিয়েছিল বিজেপি। কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, বিধানসভা উপনির্বাচনে একেবারে কেসিআর-এর দুর্গেই আঘাত হেনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ আসন জেতে বিজেপি। এমনকি, হায়দরাবাদ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন নির্বাচনেও ভাল পারফরম্যান্স করেছে গেরুয়া শিবির।
এরপরই, বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করেন কেসিআর। মহারাষ্ট্রে শিবসেনার সঙ্গে ছোট শরিক হিসাবে জোটে ছিল বিজেপি। কালে কালে বিজেপিই এখন বড়দা হয়ে গিয়েছে। বিজেপির দাদাগিরি আটকাতে গিয়ে নাস্তানাবুদ উদ্ধব ঠাকরে। বিহারেও গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত বিজেপি ছিল ছোট শরিক। এখন, নীতীশ কুমারের দলকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। এখন পর্যন্ত ছোট শরিক হওয়া সত্ত্বেও নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী হতে দিয়েছে তারা। পরের নির্বাচনেও তাই হবে, সেই ভরসা নেই। চোখের সামনে এই উদাহরণগুলি থাকায়, রাজ্যে বিজেপির উত্থানে কেসিআর-এর শঙ্কিত হওয়াও যুক্তিসঙ্গত।
তবে, ২০১৯-এর পরও বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানো নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ছিল টিআরএস। সিএএ আন্দোলনের সময় যেমন প্রথমে এই বিলের বিরোধিতা করেননি কেসিআর। কিন্তু, ধীরে ধীরে তারা বিরোধী দলগুলির সঙ্গে হাত মেলায়। তারপরও কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকারি সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে চেয়েছিলেন কেসিআর। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি অনুভব করেন, সরাসরি বিজেপি বিরোধিতার রাস্তায় না গেলে, তাঁর দলেরও অবস্থা শিবসেনা বা জেডিইউ-এর মতো হয়ে যাবে। এরপর থেকেই তাঁকে সচেতন ভাবে বিজেপি বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছে। কৃষি বিল নিয়ে প্রতিবাদে কৃষকদের সমর্থন করেছেন। এখন তো তিক্ততা বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় এসেছে, যে প্রধামন্ত্রী রাজ্যে এলে প্রোটোকল ভাঙাটাই নিয়ম করে নিয়েছেন কেসিআর। বিজেপির কর্মসমিতির সভাকে ‘সার্কাস’ বলেছে টিআরএস। বিজেপি বিরোধীদের সঙ্গে জোট গড়তে বিভিন্ন রাজ্যে সফর করছেন রাও।
অন্যদিকে, ছেড়ে কথা বলছে না বিজেপিও। হায়দরাবাদে বসে জাতীয় কর্মসমিতির সভায় তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীকেই ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদের বিষয়ে আলোচনা চলছে। কর্মসমিতির সভা আয়োজনের জন্য হায়দরাবাদ শহরকে বেছে নেওয়াটাও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। যে যে রাজ্যে দল তুলনামূলকভাবে দুর্বল, সেই রাজ্যগুলিতেই দলীয় শক্তি সম্প্রসারণ করতে চাইছে বিজেপি। গত কয়েক বছর ধরেই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছ। ২০১৪ সালে কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসার পর, এই নিয়ে চতুর্থ বার নয়া দিল্লির বাইরে কোথাও জাতীয় কর্মসমিতির সভা করছে বিজেপি। ২০১৫ সালে বেঙ্গালুরু, ২০১৬-তে কেরল এবং ২০১৭ সালে ওড়িশায় এই সভা হয়েছিল।