RFID Tagging: জঙ্গিদের হাতে অস্ত্র যাওয়া রুখতে বিশেষ উদ্যোগ ভারতীয় সেনার

Indian Army: ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৭৫০টি উচ্চ মানের অস্ত্র খোয়া গিয়েছিল শুধুমাত্র বস্তার এলাকায়। এর মধ্যে ছিল ৫৫০ স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল, ১৯০ সেল্ফ লোডিং রাইফেল এবং ১৫-র বেশি গ্রেনেড লঞ্চার।

RFID Tagging: জঙ্গিদের হাতে অস্ত্র যাওয়া রুখতে বিশেষ উদ্যোগ ভারতীয় সেনার
ভারতীয় সেনার অস্ত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 08, 2023 | 6:38 PM

নয়াদিল্লি: ২০১১ সালের অগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ। গোটা মধ্য প্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আরব বসন্ত। লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ ষষ্ঠ মাসে পড়েছে। লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে এক সপ্তাহ ধরে লড়াই আরও ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। প্রাণ বাঁচাতে রাজধানী ছেড়ে পালিয়েছেন লিবিয়ার তৎকালীন শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি। গাদ্দাফি পালাতেই ত্রিপোলির রাস্তায় উচ্ছ্বাসে মেতেছেন বিদ্রোহীরা। চার দশক ধরে গাদ্দাফি কড়া হাতে শাসন করেছেন লিবিয়াকে। নিজের শাসনকালে লিবিয়ার অস্ত্রভান্ডারেও সমৃদ্ধি এনেছিলেন তিনি। আফ্রিকার দেশগুলির মধ্য অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছিল লিবিয়ার অস্ত্রভান্ডার। কিন্তু গাদ্দাফি রাজধানী ছেড়ে পালাতেই সেই সব অস্ত্রভান্ডার নিমেষে উধাও হয়ে যায়। সেই সব অস্ত্রের দেখা মিলেছিল আফ্রিকার বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে। বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং জঙ্গিদের হাতে।

এ বার আসা যাক ভারতে। সেখানেও সেনা-পুলিশের অনেক অস্ত্র খোয়া গিয়েছিল। সেই সব অস্ত্রের দেখা মিলেছিল কাশ্মীর উপত্যকা থেকে দান্তেওয়াড়ার লাল করিডরে। বিদ্রোহীদের হাতে। ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৭৫০টি উচ্চ মানের অস্ত্র খোয়া গিয়েছিল শুধুমাত্র বস্তার এলাকায়। এর মধ্যে ছিল ৫৫০ স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল, ১৯০ সেল্ফ লোডিং রাইফেল এবং ১৫-র বেশি গ্রেনেড লঞ্চার। নিরাপত্তা বাহিনীর অস্ত্র বিদ্রোহীদের হাতে চলে যাওয়ার এই সমস্যা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন সময় দেখা গিয়েছে। অযোগ্যের হাতে অস্ত্রের দখল যাওয়া রুখতে রেডিয়ো ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (RFID) ট্যাগ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় ভারতীয় সেনা। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ওই মাসেই সেনার অস্ত্র কারখানা থেকে আরএফআইডি ট্যাগ লাগানো ৫.৫৬ মিমির আগ্নেয়াস্ত্র পাঠানোৌ হয়েছিল পুলগাঁওয়ে সেনার অস্ত্র ভান্ডারে।

ভারতীয় সেনার অস্ত্রে আরএফআইডি ট্যাগ লাগানোর জন্য আর্মির অর্ডন্যান্স সার্ভিসেস ডিরেক্টরেট এবং মিউনিশন ইন্ডিয়া লিমিটেড (এমআইএল)-এর মধ্যে সমঝোতা হয়। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের অধীনস্ত গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডস অর্গানাইজেশন। এই RFID ট্যাগ লাগানোর উদ্দেশ্য ছিল একটাই অস্ত্রের হিসাব আরও নিখুঁত ভাবে রাখা। অস্ত্রের হদিশ রাখা এবং অস্ত্র সংরক্ষণের ম্যানেজমেন্ট আরও মসৃণ করা। আরএফআইডি প্রযুক্তি ইতিমধ্যেই ঢুকে পড়েছে ঘরে ঘরে। গাড়ির ফাস্টট্যাগ থেকে সুপার মার্কেটে পন্যে উপর থাকা কিউআর কোড, নাইটক্লাব বা প্রমোদ উদ্যানে রিস্টব্যান্ড এসবই RFID প্রযুক্তির দ্বারাই হয়ে থাকে।

তবে ভারতীয় সেনা এই প্রযুক্তি গ্রহণ করে ২০২২ সালে। এই প্রযুক্তি যে বিভিন্ন উপকারে এসেছে তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের জেরে অস্ত্রের হিসাব রাখা, বন্টন এবং রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। অস্ত্রের হিসাব রাখার জন্য গুনতিতে যে সময় নষ্ট হত, তাও এই প্রযুক্তি ব্যবহারের জেরে বন্ধ হয়েছে। আরএফআইডির মাধ্যমে পাওয়া রিয়েল-টাইম তথ্য হেফাজতের বাইরে চলে যাওয়া সম্পদ শনাক্ত করতে সক্ষম করে। সেগুলিকে পুনরুদ্ধারের সুবিধা দেয়। কর্মক্ষমতা পরীক্ষা এবং মেরামতের খোঁজ রাখতেও সাহায্য করে এই প্রযুক্তি। এর জেরে সময় এবং অর্থ উভয়ই সাশ্রয় হয়।

আরএফআইডি প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে কেরলের প্রাক্তন ডিজিপি এসি আস্থানা বলেছেন, “মুম্বইয়ে ২৬/১১ হামলার পর ভারতের সমস্ত মাছধরার নৌকায় আরএফআইডি ট্যাগ বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। আরএফআইডি সক্রিয় থাকলে উপকূল রক্ষীবাহিনী সহজে নিজেদের নৌকা এবং জঙ্গিদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা চিহ্নিত করতে পারবে। এমনকি আরএফআইডি ট্যাগিং জঙ্গিদের হাতে যাওয়া অস্ত্রের খোঁজ রাখতেও অন্যতম উপায়।” এই প্রস্তাব কার্যকর না হওয়ার বিষয়ে আস্থানা বলেছেন, “এই ২টি প্রস্তাবই ব্যর্থ হয়েছিল মূলগত সমস্যার জন্য। প্রধান সমস্যা ছিল ফান্ডের। ভারতীয় সেনার সাধারণ ব্যাটেলিয়নের হাতে এক লক্ষ রাউন্ড গুলি থাকে। সেই সব অ্যামিউনিশন বাক্সকে ট্যাগ করতে গেলে খরচ আছে। এবার গোটা সেনার হাতে যে পরিমাণ অস্ত্র রয়েছে তার খরচ ভাবুন।” আরএফআইডির মাধ্যমে রিয়াল টাইম ট্রাকিংয়ে অন্য কিছু সমস্যাও রয়েছে। এ ব্যাপারে আস্থানা বলেছেন, “আমাদের কেবল মাত্র আরএফআইডি ট্যাগ থাকলেই হবে না। সে গুলিতে পাওয়ার সরবরাহ বজায় রাখার জন্য ব্যাটারির দরকার। সেই সব ব্যাটারিকে নিয়মিত বদলাতে হবে। এর পাশাপাশি কোথায় এই ট্যাগ লাগানো হবে সেটাও একটা আলোচনার বিষয়। সেগুলিকে বন্দুকের পিছনের দিকে, পিস্তলের বাটে লাগানো যেতে পারে। কিন্তু ব্যাটারির সঙ্গে আরএফআইডি গোলাবারুদে লাগানো সম্ভব নয়।”

অপরাধীদের হাতে যাওয়া অস্ত্রের খোঁজ রাখতে আরএফআইডি কাজে লাগতে বলে মনে করেন ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর প্রাক্তন স্পেশ্যাল ডিরেক্টর যশোবর্ধন আজাদ বলেছেন, “কতগুলি অস্ত্র হারিয়েছে তার থেকেই গুরুত্বপূর্ণ হল অস্ত্রগুলি বিদ্রোহীদের শক্তি কত গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সক্রিয় আরএফআইডি ট্যাগিং ওই অস্ত্রের নজর রাখা এবং উদ্ধারে সাহায্য করতে পারে। অস্ত্র এবং গুলির সংরক্ষণে তা গুরুত্বপূ্র্ণ ভূমিকা নিতে পারে। কিন্তু বিবেচ্য বিষয় হল এই কাজ করতে খরচ। যদি আমাদের টাকা থাকে। তাহলে এই কাজ করা উচিত।”