করোনা টিকাকরণে রেকর্ড দেশের, কী বলছেন কো-উইনের নেপথ্য কারিগর ডঃ আর এস শর্মা?

RS sharma, শের টিকাকরণের হার ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রে শিরোনাম দখল করে নিয়েছে। জানা গিয়েছে ইতিমধ্যেই দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ় মিলিয়ে মোট ১১০ কোটি কোভিড টিকা দেওয়া হয়েছে। সরকারি কো-উইন পোর্টাল থেকে টিকা নেওয়ার দিনক্ষণের বুকিং করেছিলেন সিংহভাগ ভারতীয়।

করোনা টিকাকরণে রেকর্ড দেশের, কী বলছেন কো-উইনের নেপথ্য কারিগর ডঃ আর এস শর্মা?
ছবি: ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 18, 2021 | 7:54 PM

কলকাতা: করোনা সংক্রংণের হাত থেকে বাঁচতে টিকাকরণই যে একমাত্র উপায় আগেই বলেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সেই মত ভারতেও শুরু হয় টিকাকরণ। দেশের টিকাকরণের হার ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রে শিরোনাম দখল করে নিয়েছে। জানা গিয়েছে ইতিমধ্যেই দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ় মিলিয়ে মোট ১১০ কোটি কোভিড টিকা দেওয়া হয়েছে। সরকারি কো-উইন পোর্টাল থেকে টিকা নেওয়ার দিনক্ষণের বুকিং করেছিলেন সিংহভাগ ভারতীয়। জানা গিয়েছে এবার ৫০ টিরও বেশি দেশ কো-উইন সফ্টওয়ার কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই পোর্টলটি যাঁর মস্তিস্ক প্রসূত তিনি জাতীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সিইও ডাঃ আর এস শর্মা। তাঁর উদ্যোগেই স্বাস্থ্য পরিকাঠামোতে লেগেছে অভিনবত্বের ছোঁয়া। সেই তিনিই ডিজিটাল স্বাস্থ্য হাইওয়ে গঠনের পরিকল্পনা করছেন। নিউজ নাইনের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি, কী জানালেন ডাঃ শর্মা….

১। প্রশ্নঃ কো-উইনের অভূতপূর্ব সাফল্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে। অন্য দেশগুলির সঙ্গে কো-উইন নিয়ে কথা কত দূর এগোল? ব্যবসায়িকভাবে এই অ্যাপ ব্যবহার করা নিয়ে কী ভাবনা চিন্তা চলছে?

উত্তরঃ ইতিমধ্যেই অন্য দেশ গুলিকে কোউইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবুজ সংকেত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিগত ৫ জুলাই এই নিয়ে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক আয়োজন করেছিলেন তিনি। সেখানে ১৪০ টি দেশ অংশগ্রহন করেছিল। বিদেশ মন্ত্রক দেশগুলির সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছে। দ্রুতই আমরা দক্ষিণ আমেরিকার বেশ কিছু দেশের সঙ্গে মউ চুক্তি সাক্ষর করব আফ্রিকার ও পূর্ব এশিয়ার বেশ কিছু দেশের সঙ্গে কথা চলছে। কোউইন নিয়ে আমরা অনেকেই প্রশিক্ষণ দিয়েছি সহজেই তারা অন্যেদের সাহায্য করতে পারবে। ব্যবসায়িক নয়, মানবিকতার ভিত্তিতেই এই প্ল্যাটফর্ম অন্যদের ব্যবহার করতে দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজি হয়েছে ভারত।

২। প্রশ্নঃ কোউইন ব্যবহারে ফলে অনেক সুবিধা হয়েছে। করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ় নিয়ে কথা চলছে, আপনারা প্রস্তুত? সরকারে কি এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ?

উত্তরঃ স্বচ্ছভাবে নাগরিকদের পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েই কোউইন তৈরি করা হয়েছিল। এই প্ল্যাটফর্মটি এখনও খোলা রয়েছে। আমাদের ১০০ও বেশি অংশীদার রয়েছে, যারা যখন তখন প্রয়োজনে এটি ব্যবহার করতে পারেন। এখন আমাদের পোর্টাল ১৬ থেকে ১৭ টি ভাষায় পাওয়া যাচ্ছে। দেশের ৯০ শতাংশ ইতিমধ্যেই এর আওতায় এসেছে। আমরা দেখেছি আমাদের প্ল্যাটফর্মে এক সেকেন্ডে ১০০০ টি করোনা টিকা দেওয়া হচ্ছে। আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল মিশন ডিজিটাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অভিনবত্ব আনছে।

৩। প্রশ্নঃ কোউইনের কাজ নানা ধরনের ডাটা নিয়ে। এখানে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য নথিভুক্ত রয়েছে সঙ্গে আসল নকল তথ্য বেছে নেওয়ারও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। গোপনীয়তা বজায় রেখে কীভাবে এই বিপুল ডাটা নিয়ে কাজ করা সম্ভব?

উত্তরঃ এটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।আমি বলতে চাই দেশের নাগরিকদের বিপুল পরিমাণ ডাটা নিয়ে কাজ করতে সরকারের অভিজ্ঞতা রয়েছে. আগেও আধার কার্ডের কাজ ব্যাপকভাবে সাফল্য অর্জন করেছিল। এগুলি আমাদের জাতীয় সম্পদ। ডাটার পরিবহন হয়না। দেশের নাগরিকদের দেওয়া তথ্যের যথাযথতা, গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার নিয়ে সরকার যথেষ্ট সচেতন। পরিকল্পনার সময়েই ডিজাইনে এই নিয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গোপনীয়তা নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই।

৪। প্রশ্নঃ সম্প্রতি যেখানে টিকাকরণের হার কম সেই সব এলাকার জেলাশাসকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আপনার কী মনে হয় কোউইন পোর্টাল টিকাকরণ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে সাহায্য করবে?

উত্তরঃ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে এই বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। দ্রুত টিকা দেওয়ার কারণে তিনি ‘হর ঘর দস্তকের’ মত কর্মসূচি নিয়েছেন। এই কর্মসূচিকে সবরকমভাবে সাহায্য করবে কোউইন। আমরা সব রকমভাবে চেষ্টা চালাচ্ছি যাতে আরও বেশি সংখ্যায় মানুষ আমাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন। যদি প্রত্যেকেই নিরাপদ না হন, তবে কেউ নিরাপদ নন। আগামী সোমবার থেকে আমদের ওয়েবসাইট থেকে টিকা নেওয়ার ব্যাজ ও ডাউনলোড করা যাবে। এই ব্যাজ খুবই গৌরবের। আমরা এমন এক পরিকল্পনা চালু করছি যেখানে সকলের মধ্যে টিকা নিয়ে প্রচারাভিযান চালানো হবে।

৫। প্রশ্নঃ ই-সঞ্জীবনী অ্যাপ নিয়ে কীরকম প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?

উত্তরঃ ই-সঞ্জীবনী এবং ই-হসপিটাল দুটি অ্যাপ নিয়েই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসছে। এই অ্যাপ দুটিতে দারুণভাবে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তৈরি করতে এই অ্যাপ দুটির ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হবে বলেই মনে হচ্ছে। আমরা বলছি না শুধুমাত্র অ্যাপ দুটিই ব্যবহার করুন। তবে হ্যাঁ এই দুটি আপনার কাজকে অনেক সহজ করে দেবে।

৬। প্রশ্নঃ প্রধানমন্ত্রী ঔষুধি প্রকল্প বেশ জনপ্রিয় হলেও অনেকেই এখনও এই প্রকল্পের লাভ পাননি। জাতীয় ডিজিটাল স্বাস্থ্য মিশনের আওতায় এই প্রকল্পকে আনা সম্ভব হতে পারে। অনলাইনে ওষুধ কেনা এখন অনেকেরই ঝোঁক রয়েছে, সেই নিয়ে আপনাদের কী চিন্তা ভাবনা?

উত্তরঃ আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবনা। এই দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। আমার ওষুধ নিয়ে পৃথক একটি জায়গা তৈরি করব সেখানে ব্র্যান্ডে ও জেনেরিক দুধরনের ওষুধই নথিভুক্ত করা সম্ভব হবে। এখানে সাধরণ মানুষের চাহিদা অনুযায়ী দামের পার্থক্যও লক্ষণীয় হবে। জন ঔষুধির দোকানে জেনেরিক ওষুধ পাওয়া যাবে, এই পোর্টালে সেই প্ল্যাটফর্মের ঠিকানা থাকবে। আমাদের লক্ষ্য মানুষকে ওষুধে দাম ও সেটা পাওয়া যাচ্ছে কিনা সেই সম্পর্কে সাধারণ জনগণকে অবগত করা।

৭। প্রশ্নঃ ডিজিটাল স্বাস্থ্য মিশনে ইউপিআই ব্যবহারের কথা আপনি বারবারই বলেন। এই বিষয়ে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো তৈরি করতে ঠিক কতদিন সময় লাগবে?

উত্তরঃ এটা সময়ের চাহিদা। খুব দ্রুত ও সঠিকভাবে এই কাজ করে ফেলা সম্ভব। কিন্তু এই বিষয়ে আমি কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমার কথা এখনই বলতে পারছি না। কাজ চলছে আশা করা যাচ্ছে দ্রুত এই কাজ শেষ হবে। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর সঙ্গে ছোট ক্লিনিক, বড় হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, ডায়াগোনেসিস সেন্টার, ল্যাব সবকিছুই যুক্ত। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ইউপিআই চালু করতে হলে সকলকে এক ছাতার তলায় আনতে হবে। এইজন্য জাতীয়ভাবে সকলের কাজ করা প্রয়োজন। আমার মনে হয় আমরা দ্রুত এই কাজ শেষ করে ফেলতে পারব।

৮। প্রশ্নঃ ডিজিটাল স্বাস্থ্য মিশনে বেসরকারি ক্ষেত্রের কী ভূমিকা রয়েছে?

উত্তরঃ বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে আমরা যথেষ্ট ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। আমরা সকল বেসরকারি হাসপাতাল ও ওষুধের দোকানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে হওয়া এক সেমিনারে আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা যত দ্রুত বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের পরিচয় সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ সেড়ে ফেলতে পারব তত দ্রুত সফলভাবে এই কাজ বাস্তবায়িত হবে। মনে রাখতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে দূরত্ব কমে গিয়েছে। যত বেশি সংখ্যায় মানুষ এই উদ্যোগের আওতায় আসবেন, তত বেশি আমাদের এই উদ্যোগ সফল হবে।

৯। প্রশ্নঃ আয়ুষ্মান প্রকল্পের অধীনে রোগীদের কী হাসপাতাল ও বিমা কোম্পানির মধ্যে সংযোগ স্থাপনের কোনও জায়গা এই ব্যবস্থায় থাকবে?

উত্তরঃ ইতিমধ্যেই আমরা ই গ্রিভ্যান্স তৈরি করেছি যা জাতীয় ডিজিটাল স্বাস্থ্য মিশনেরে আওতায় আনা হয়েছে। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আলাদা ধরনে চিন্তাভাবনা রয়েছে। আমরা মনে এই উদ্যোগের আওতায় সরকারে সবকটি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রকল্পউ কাজ করবে এবং সাধারণ মানুষ তাঁর সুফল পাবে।

আরও পড়ুন Rezang la War Memorial: ইন্দো চিন যুদ্ধের নায়কদের স্মরণ, রেজাং লা ওয়ার মেমোরিয়াল উদ্বোধন করলেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং

আরও পড়ুন Maharastra minister on Kangana: মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে মন্তব্যের জের, কঙ্গনাকে ‘নাচনেওয়ালি’ বলে কটাক্ষ করলেন মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী