১ বলে ৩৬ রান করলেই ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি! মোদী সরকার কি পারবে?

এখান থেকে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের পৌঁছতে হয়, তাহলে ১ বলে ৩৬ রান করার মতো বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

১ বলে ৩৬ রান করলেই ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি! মোদী সরকার কি পারবে?
গ্রাফিক্স- অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Jun 03, 2021 | 10:33 AM

সুমন মহাপাত্র: বীজগণিতে অজ্ঞাত কোনও রাশিকে X ধরে বহু প্রশ্নের উত্তর মেলে। সৌজন্যে গাণিতিক রেনে দেকার্ত (Rene Descartes)। ভারতের এই মূহুর্তে একটা অলীক X প্রয়োজন। তবে সেটা অর্থনীতির জন্য। এই X অর্থনীতির কৃষ্ণগহ্বরে ঢুকে থেমে থাকা সময়কে ত্বরাণ্বিত করবে। তাহলেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) কথা মতো ২০২৪ সালের মধ্যে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পৌঁছনো সম্ভব ভারতের। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে জিডিপি (GDP) বৃদ্ধির হার মাইনাস ৭.৩ শতাংশ। মুদ্রাস্ফীতি ৬ শতাংশের বেশি। এই রিপোর্ট আসার পর ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির স্বপ্ন দেখা তো দূরস্থান, এখন মাথা তুলে দাঁড়ানোই লাখ টাকার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ক্ষমতায় এসে নরেন্দ্র মোদীর সরকার আশ্বাস দিয়েছিল, ২০২৪ সালের মধ্যে ৫ লক্ষ কোটি ডলার অর্থনীতিতে পৌঁছবে দেশ। তখন অবশ্য করোনার চোখরাঙানি ছিল না। ‘আত্মনির্ভর ভারত’ হওয়ার লক্ষ্যে স্বপ্ন দেখছে দেশবাসী। এরপর করোনার প্রথম ঢেউ। তালা পড়ল দেশের উন্নয়নে। তখনও এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছিলেন, ২০২৪ সালের মধ্যেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছবে দেশ। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর সেই আত্মবিশ্বাস কি আছে সরকারের? এখনও পর্যন্ত নির্মলা সীতারামনের মুখে না পারার কোনও অলক্ষণে শব্দ শোনা যায়নি। অর্থনীতির বিশেষজ্ঞদের মতে, এই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে হলে দেশকে ‘আনহেলদি’ অর্থনৈতিক পথ অবলম্বন করতে হবে। নয়তো মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠাতে হবে কাড়ি কাড়ি নগদ।

অলীক x ধরে, ভারত যদি ২০২৪ সালের মধ্যেই ৫ লক্ষ কোটি ডলার অর্থনীতিতে হেনতেন প্রকারেণ অর্জন করতে চায়, সে ক্ষেত্রে সরকারের কাছে কী কী রাস্তা খোলা? সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে দেখতে হবে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে দেশ? ২০১৬-১৭ সালে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৮.৩ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে এই বৃদ্ধির হার আরও কমে। দাঁড়ায় ৭ শতাংশে। ২০১৮-১৯ এ বৃদ্ধির হার আরও কমে হয় ৬.১ শতাংশ। ঠিক যেন একেকটা সিঁড়ি ভেঙে নীচের দিকে ভারতের অর্থনীতি। ২০১৯-২০ সালে সিঁড়ির শেষ ধাপটাও শেষ। জিডিপি বৃদ্ধি ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। ২০২০-২১ সালে সিঁড়ির কোনও ধাপ নেই। কার্যত নীচের দিকে ঝাঁপ দেয় অর্থনীতি। জিডিপি বৃদ্ধির হার হয় মাইনাস ৭.৩ শতাংশ। অর্থাৎ করোনা আসার আগে থেকেই নাগাড়ে কমছিল বৃদ্ধির হার। যা চরম আকার নিয়েছে করোনাকালে। আর যদি এখান থেকে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের পৌঁছতে হয়, তাহলে ১ বলে ৩৬ রান করার মতো বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। অর্থাৎ ব্যাটসম্যানকে শুধুই ছয় হাঁকালেই হবে না, প্রতিপক্ষকে বাংরবার নো-ওয়াইড করতে হবে। এই খেলাটা কেমন হবে তাহলে? দেখা যাক।

5 trillion Economy

গ্রাফিক্স- অভিজিৎ বিশ্বাস

ভ্যাকসিনেশন: দেশবাসীর ভ্যাকসিন দরকার। দরকার অর্থনীতিরও। অর্থাৎ ভ্যাকসিনের উপর দাঁড়িয়ে আছে গোটা দেশ। মনে করা হচ্ছে, দেশবাসীকে সম্পূর্ণরূপে টিকা দিতে পারলে হ্যাঁচকা টানে জিডিপি উঠতে পারবে।  ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ভারতের জিডিপি ১২ শতাংশ হতে পারে বলে একাধিক মূল্যায়ন সংস্থা পূর্বাভাস দিয়েছে। অর্থনীতির অধ্যাপক মহানন্দা কাঞ্জিলালের মতে, এখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। সেই ঢেউ সামলাতে পারলে এবং ভ্যাকসিনেশনে জোর দিতে পারলে ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে পজিটিভ গ্রোথ দেখতে পারে দেশ। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ভারতের জিডিপি চিত্র ছিল ইংরেজি V এর মতো। একধাক্কায় ধস নেমে তীর্যক হয়ে উঠেছিল জিডিপি। এ বার ইংরেজি অক্ষর U এর মতো জিডিপি উন্নয়ন হতে পারে। দেশে যখন জোড়া ভ্যাকসিন অনুমোদন পায়,তখন বিশ্ব বাজারে ভারতীয় ভ্যাকসিনের আধিপত্য দেখা দিয়েছিল। কারণ রাশিয়া বা চিনের প্রতিষেধক প্রথমে বাজার ধরতে পারেনি। আর ফাইজ়ার-মডার্নার দাম ছিল বেশি। তখন একাধিক দেশ ভারতীয় ভ্যাকসিন কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু দেশেরই চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয় ভারত। তাই বিশ্ব বাজার হাতছাড়া হয়ে চলে যায় চিন, রাশিয়া ও আমেরিকার কাছে। এখন ভাইরাসের লাগাতার ছোবলে ভারত যদি ফের বাজার দখল করতে পারে, তাহলে ফের অর্থনীতি চাকা সামনের দিকেই গড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।

অনুশিল্পে পরমাণু শক্তি: বড় শিল্প না হলে দেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। কৃষিক্ষেত্রেও গত অর্থবর্ষে যে বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে, তা হচ্ছে তুলনামূলক বৃদ্ধি। আর ঘুরে দাঁড়ানোর একমাত্রা রাস্তা শিল্পই। কিন্তু এপ্রিলের হিসেব বলছে প্রাকৃতিক গ্যাস, ইস্পাত, সিমেন্ট, বিদ্যুৎ, কয়লা সার সবটাই মাইনাসে। আর এই মহামারি কালে বড় শিল্পে বিনিয়োগেরও সম্ভাবনা কম। সরকার যদি বড় শিল্পে বিনিয়োগ না টানতে পারে তাহলে কোনওভাবেই লক্ষ্যভেদ করা সম্ভব নয়। কারণ বড় শিল্প হলে তবেই অনুসারী শিল্পের সংখ্যা বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সেক্ষেত্রে বিকল্প হতে পারে ক্ষুদ্র-অতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। বড় শিল্পের অভাবে কিছুটা হলেও সমতা বিধান করতে পারবে এই ক্ষুদ্র-অতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। তাই কেন্দ্র এমএসএমই-তে যে নজর দিচ্ছে, সেই নজর বৃদ্ধি করে আরও সুগঠিত ভাবে এর পরিচালনা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে এমনও হতে পারে জনসমাগম এড়িয়ে বাড়িতে বাড়িতে ‘মিনি কারখানা’ গড়ে শিল্প সচল রাখা যেতে পারে।

নগদ-নাগপাশ: গবেষকরা বলছেন, তৃতীয় ঢেউ আসবেই। সে ক্ষেত্রে ফের লকডাউনে আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাহলে সাধারণ মানুষের আয়ে আবারও টান ধরবে, এই সমস্যা সমাধানের উপায় কী? মানুষের ক্রয়ক্ষমতা না বাড়লে কোনওভাবেই জিডিপি বৃদ্ধি সম্ভব নয়। এ বিষয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক মহানন্দা কাঞ্জিলাল জানাচ্ছেন, সরাসরি অসাংগঠনিক ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত মানুষের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে হবে। তাহলেই এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা সম্ভব। করোনাকালে মানুষের চাহিদা বিপুল ভাবে কমে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে চাহিদা না বাড়াতে পারলে কোনওভাবেই অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা সম্ভব নয়। বহু মানুষ এই সময় চাকরি হারিয়েছেন। পরিসংখ্যান বলছে মে মাসে দেশের বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১১.৯ শতাংশ। এক মাসে চাকরি হারিয়েছেন এক কোটি মানুষ। আর এদের অধিকাংশই অসাংগঠনিক ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাই বাজারে চাহিদা নেই। যার কাছে সামান্য কিছু টাকা আছে, সে জোর করে সঞ্চয় করতে চাইছে। ফলস্বরূপ মন্দাস্ফীতি আর মুদ্রাস্ফীতি একসঙ্গে বাড়ছে।

বাজারে চাহিদা সৃষ্টি না করতে পারলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানো কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক ঈশিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, “যাঁরা আয়কর দেন না, তাঁদের অ্যাকাউন্টে জরুরিভিত্তিক ভাবে টাকা পাঠাতে হবে। চাহিদা তৈরি করে বাজারে বিক্রি বাড়াতে হবে।” সেক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদী যে আশ্বাস দিয়েছিলেন বিদেশি ব্যাঙ্ক থেকে দেশের ‘কালাধন’ ফিরিয়ে এনে প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ করে টাকা পাঠাবেন। অর্থাৎ নগদ জোগানোর জন্য বিদেশের ‘কালাধন’ ব্যবহার হতে পারে। সেই কাজ যদি মোদী করতে পারেন, তাহলে সরাসরি টাকা দিয়ে চাহিদা তৈরি করা সম্ভব।

এশিয়ান ইউনিয়ন: ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতোই এশিয়ার বিভিন্ন দেশ নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। যার অর্থনীতি এবং মুদ্রা এককেন্দ্রিক হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে মোট ২৭টি সদস্য দেশ রয়েছে । অবাধ ব্যবসা ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে এক দেশ অন্য দেশের পাশে দাঁড়ায় এই ইউনিয়নে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশের দু’টি সংসদ। প্রত্যেক দেশের মানুষ নিজেদের দেশের সাংসদ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাংসদকে পৃথক ভাবে বেছে নেন। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকার ফলে এই দেশগুলি নিজেদের বিরুদ্ধে লড়াই করে না। ফলে সীমান্ত সুরক্ষার অনেক খরচ বেঁচে যায়। সেরকমই যদি একটা এশিয়ান ইউনিয়ন হয়, তাহলে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব ভারতের। এই বিষয়ে সহমত পোষণ করলেও অধ্যাপক ঈশিতা মুখোপাধ্যায় জানান, ভারতের প্রতিবেশীরা অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে বোঝাপড়া আদৌ সম্ভব কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আর ভারত যেহেতু ‘বিগেস্ট পলিটিকাল পাওয়ার’ তাই ইউনিয়নেও ডিক্টেটর হতে পারে ভারত। তাহলে সামগ্রিক ক্ষতি হবে। এ ক্ষেত্রে সমাধান হল নীতি বদলানো।

গ্রাফিক্স- অভীক দেবনাথ

‘কৃষি আমাদের ভিত্তি’: ২০২০-২১ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল মাইনাস ২৩.৯ শতাংশ। কিন্তু লকডাউনে পুরো অর্থনীতি ভেঙে পড়লেও মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল স্রেফ কৃষি। বিশেষজ্ঞদের মতে, হোটেল, পরিবহণ ও ব্যবসা শেষ ত্রৈমাসিকেও মার খেয়েছে কিন্তু দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক সঙ্কোচন পূর্বাভাসের থেকে কম হয়েছে, তার জন্য অনেকটাই দায়ী কৃষি। ভবিষ্যতে করোনার তৃতীয়, চতুর্থ ঢেউ আসতে পারে। সেক্ষেত্রেও ত্রাতা হতে পারে কৃষি। তাই কৃষকদের সাহায্যার্থে এগিয়ে গিয়ে কৃষিকে শিল্পের নজরে দেখতে হবে কেন্দ্রকে। তা হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে কৃষিজাত পণ্য বাইরে গিয়ে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পারবে। এর জন্য আরও সুগঠিত পরিকল্পনা ও আইন প্রয়োজন। সেই আইন কি নয়া কৃষি আইন? না কি এতে কৃষকদের ক্ষতি, সে নিয়েও বিতর্ক তুঙ্গে।

উপরোক্ত বিষয়গুলি ভারতের অর্থনীতির ক্ষেত্রে ওই সম্ভাব্য X হতে পারে। কিন্তু বীজগণিতে যেমন দুই রাশি থাকে। তেমন এই বিষয়গুলির ক্ষেত্রেও অন্য রাশি রয়েছে। বিষয়টা এত সহজ নয়। কারণ অনেক ফ্যাক্টর রয়েছে যা বড় বাধা তৈরি করতে পারে। সেক্ষেত্রে X এর মান ও মাপ বদলে যেতে পারে।

বাধা কোথায়?

করোনা: দেশ ৪ দশকে এহেন সঙ্কোচন দেখেনি। তাহলে কেন এই পতন? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর করোনা মহামারি। লকডাউনেই রেকর্ড সঙ্কোচন দেখেছে দেশ। সে ক্ষেত্রে যদি এই পরিস্থিতি দেশ মোকাবিলা করতে পারে। তাহলেই স্বর্ণালী আলো দেখা সম্ভব। অধ্যাপক ঈশিতা মুখোপাধ্যায়ের মতে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সঙ্গীন। কারণ মহামারিকালে দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভাল না। তাই উৎপাদনও কমেছে। কারণ একজন অসুস্থ মানুষের পক্ষে উৎপাদন সম্ভব নয়। মানুষ কাজ হারাচ্ছে। ঘরে নুন-ভাত খেলেও মহামারিকালে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যেতে অনিচ্ছুক তারা। তাই ঘুরেফিরে চাহিদা-জোগানের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে।

মুদ্রাস্ফীতি: দেশের এখন মুদ্রাস্ফীতি ৬.১৮। অধ্যাপক মহানন্দা কাঞ্জিলালের মতে, মুদ্রাস্ফীতি ৬ এর বেশি হলে জিডিপি গ্রোথ বলে কিছু থাকে না। কারণ রিয়েল জিডিপি অনেকটাই কমে যায়। সেক্ষেত্রে ভারতীয় অর্থনীতির অন্যতম বড় এই বাধা সরাতে হবে। না হলে চাহিদা জোগান বাড়িয়েও লাভ হবে না।

রাজকোষ ঘাটতি: ২০১৭ ও ২০১৮ সালে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্র নিয়েছিল, তার থেকে বেশি টাকা এসেছে রাজকোষে। তারপর ২০১৯,২০২০ ও ২০২১ এ রাজকোষে বিপুল ঘাটতি। ২০২১ সালে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকা। সেখানে রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ১৫ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ রাজকোষে বিপুল ঘাটতি। এই ঘাটতি না মেটাতে পারলে কোনওভাবেই উন্নতি সম্ভব নয়।

গ্রাফিক্স- অভিজিৎ বিশ্বাস

ভারী শিল্প: ভারী শিল্প না হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের কোনও ভবিষ্যত নেই। কিন্তু এহেন পরিস্থিতিতে ভারী শিল্পে বিনিয়োগ কই? রাজ্যভিত্তিক ভারী শিল্পেরও দেখা নেই। তাহলে সরকার কোত্থেকে রাজস্ব আদায় করে রাজকোষ ঘাটতি মেটাবে। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থা বিলগ্নিকরণেও ধাক্কা খাচ্ছে কেন্দ্র। অতিমারি সামলাতে বাড়ছে খরচ।

ভারত এখন মাইনাস ৭.৩ শতাংশে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে হলে প্রতি অর্থবর্ষে অন্তত ১২ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি প্রয়োজন ভারতের জিডিপিতে। যার মানে এখন ১৯ শতাংশের বেশি রিকভারি প্রয়োজন। সিঁড়ি থেকে পড়ে যাওয়া এক দেশের কাঁধে এখন ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বোঝা। এই অবস্থায় সম্ভাব্য X এর কথা বলছেন অনেকেই। কিন্তু X খুঁজে পেতে শ্রীধর আচার্য্যর সূত্র প্রয়োজন না কি অন্য কোনও নতুন সূত্র আবিষ্কার করতে হবে দেশকে! কারণ, ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের ইকনমি গড়তে গিয়ে যদি দেশের পরিকাঠামোগত ত্রুটি থেকে যায় তাহলে তা ভয়ঙ্কর। নীতি এমন ঠিক করতে হবে, যাতে পরবর্তী মহামারিতেও দেশ না নুইয়ে পড়ে। সঠিক নীতিতেই ‘আত্মনির্ভর ভারত’ হওয়া সম্ভব। কিন্তু ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি? সেই উত্তরের চাবিকাঠি চব্বিশের কাছেই থাক।

আরও পড়ুন: ৪ দশকে সর্বনিম্ন, ভারতে জিডিপির সঙ্কোচন ৭.৩ শতাংশ