Kanpur: এ কি সেজেছে ‘আধুনিকা’ বউ! সৌদি থেকে ফোনে তিন তালাক ‘সেকেলে’ স্বামীর
Kanpur tripple talaq case: ২০২২ সালের জানুয়ারিতে, জনৈক সেলিমকে বিয়ে করেছিলেন উত্তর প্রদেশের কানপুরের বাসিন্দা গুলসায়েবা। বিয়ের পর থেকেই স্ত্রীর আধুনিক ফ্যাশন নিয়ে আপত্তি জানাতে শুরু করেছিলেন সেলিম। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীয়ের মধ্যে ঝগড়াও হয়েছিল।
লখনউ: স্ত্রী পছন্দ করেন হালের ফ্যাশন। অন্যদিকে, বর বড়ই সেকেলে। আর ফ্যাশন নিয়ে এই ভিন্ন মতের জেরেই স্বামী, স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছেন বলে অভিযোগ। তাও আবার সৌদি আরব থেকে ভিডিয়ো কলেই স্ত্রীকে বিচ্ছেদ দেন স্বামী, এমনটাই দাবি করেছেন স্ত্রী। তিন তালাক প্রথাকে আইনিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর ৪ বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু, এখনও যে দেশের মুসলিম মহিলারা তিন তালাকের নির্যাতন থেকে মুক্তি পাননি, তা আরও একবার তা প্রমাণ হয়ে গেল এই ঘটনায়।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে, জনৈক সেলিমকে বিয়ে করেছিলেন উত্তর প্রদেশের কানপুরের বাসিন্দা গুলসায়েবা। বিয়ের পর থেকেই স্ত্রীর আধুনিক ফ্যাশন নিয়ে আপত্তি জানাতে শুরু করেছিলেন সেলিম। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীয়ের মধ্যে ঝগড়াও হয়েছিল বেশ কয়েকবার। যাইহোক, সৌদি আরবে চাকরি করেন সেলিম। চলতি বছরের ৩০ অগস্ট তিনি সেই দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। গুলসায়েবার অভিযোগ, স্বামী সৌদি আরবে চলে যেতেই, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে যৌতুকের জন্য হয়রানি করতে শুরু করেছিল। কিন্তু, তার জন্য আরও বড় দুর্ভাগ্য অপেক্ষা করছিল।
৪ অক্টোবর সৌদি আরব থেকে তাঁকে ভিডিয়ো কল করেছিলেন সেলিম। তার আগেই ভ্রু -এর লোম কেটে-ছেঁটে ধনুকের আকৃতির করেছিলেন গুলসায়েবা। ভিডিয়ো কলে তাঁর সেই ধনুকের মতো বাঁকা ভ্রু চোখ এড়ায়নি সেলিমের। সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীকে তাঁর নতুন ফ্যাশন নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করেছিলেন সেলিম। গুলসায়েবা সাফ জানিয়েছিলেন, তাঁর ভ্রু-এর লোম অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল। এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। সেই এলোমেলো লোমের ভ্রু-সহ তাঁকে দেখতে মোটেই ভাল লাগছিল না। তাই নিজেকে সুন্দর করে তুলতেই তিন ওই পদক্ষেপ করেছেন।
স্ত্রীর এই ব্যাখ্যা শুনে রেগে গিয়েছিলেন সেলিম। গুলসায়েবার বয়ান অনুযায়ী, সেলিম তাঁকে বলেছিলেন, “আমার আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তুমি তোমার ভ্রু-এর লোম ছেঁটেছ? আজ থেকে আমি তোমাকে এই বিয়ের বন্ধন থেকে মুক্তি দিলাম।” গুলসায়েবার দাবি, এরপরই ভিডিয়ো কলে সেলিম তিনবার তালাক ঘোষণা করেছিলেন। তারপর, ফোন কেটে দিয়েছিলেন। সেই থেকে অনেকবার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন গুলসায়েবা। কিন্তু, প্রতিবারই ফোন কেটে দিয়েছেন, ফোন ধরেননি সেলিম।
থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে তিন তালাক আইনে অভিযোগ দায়ের করার পর গুলসায়েবা বলেছেন, “মাত্র এক বছর আগে আমরা বিয়ে করেছিলাম। প্রথম থেকেই আমাকে অসম্মান করেছেন আমার স্বামী। এখন তিনি আমাকে তিন তালাক দিয়েছেন। আমি চাই পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।” গুলসায়েবার অভিযোগের ভিত্তিতে, তাঁর স্বামী সেলিম এবং তাঁর শাশুড়ি-সহ আরও পাঁচজনের বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করেছে উত্তর প্রদেশ পুলিশ।
প্রসঙ্গত ২০১৭ সালের অগস্টে, সুপ্রিম কোর্ট ‘তিন তালাক’ প্রথাকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে ঘোষণা করেছিল। শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, তিনবার ‘তালাক’ শব্দটি উচ্চারণ করে স্ত্রীকে বিচ্ছেদ দেওয়ার এই প্রথা, মুসলিম মহিলাদের মৌলিক অধিকারকে লঙ্ঘন করে। এরপর, ব্যাপক বিতর্কের মধ্যে ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই, মুসলিম মহিলা (বিবাহের অধিকার সুরক্ষা) আইন, ২০১৯ প্রণয়ন করেছিল মোদী সরকার। এই আইন অনুযায়ী, ভারতে তিন তালাক অবৈধ এবং কেউ একে ফৌজদারি অপরাধ বলে গন্য করা হয়।