Kerala child’s rape-murder: শিশুকন্যার ধর্ষক ও খুনিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে কলমের নিব ভেঙে দিলেন বিচারক, কেন জানেন?
Kerala child's rape-murder: ১৯৭ পৃষ্ঠার রায়ের নীচে স্বাক্ষর করে, কলমটির নিব ভেঙে দেন তিনি। মামলার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, তাঁর সহকারী তাঁকে একটি নতুন কলম দেন। কিন্তু, কেন কলমের নিব ভেঙে দিলেন বিচারক?
কোচি: বুধবার সকাল ১১টা বেজে ২৫ মিনিট। কেরলের আলুভায় এক পাঁচ বছরের শিশুকন্যাকে ধর্ষণ ও নৃশংস হত্যার দায়ে, বিহারের বাসিন্দা আসফাক আলমকে ফাঁসির সাজা দিলেন আলুভার জেলা ও দায়রা আদালতের অতিরিক্ত বিচারক কে সোমান। তার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়াত বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “কোনও সমাজে শিশুদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করা হয়, তা থেকে সমাজের প্রকৃত চরিত্রটি প্রকাশ পায়।” এরপরই, ১৯৭ পৃষ্ঠার রায়ের নীচে স্বাক্ষর করে, কলমটির নিব ভেঙে দেন তিনি। মামলার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, তাঁর সহকারী তাঁকে একটি নতুন কলম দেন। কিন্তু, কেন কলমের নিব ভেঙে দিলেন বিচারক?
আসলে, কোনও আইনি নথিতে উল্লেখ না থাকলেও, মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করার কলমের নিব ভেঙে দেওয়াটা একটা প্রথা। ব্রিটিশ আমল থেকেই এই প্রথা চালু রয়েছে ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায়। এই প্রথা চালুর পিছনে, অনেকে অনেক কারণ দেখান। একটি মত অনুসারে, এটা একটা প্রতীকী অনুশীলন। কোনও ব্যক্তির জীবন কেড়ে নেওয়ার জন্য যে কলম ব্যবহার করা হল, তা আর কখনও ব্যবহার করা উচিত নয়। এই ভাবনা থেকেই এই প্রথা শুরু হয়েছিল।
আরেকটি ধারণা বলে, এই অনুশীলনের মাধ্যমে, মৃত্যুদণ্ড প্রদানকারী বিচারকরা এই রায়দানের অপরাধবোধ কাটানোর চেষ্টা করেন। কেউ যত বড়ই অপরাধ করুক না কেন, স্রেফ কলমের কয়েকটা আঁচড়ে তাঁর প্রাণনাশের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করাটা বিচারকদের পক্ষেও সহজ কাজ নয়। আবার কারও কারও মতে, মৃত্যু পরোয়ানায় সই করার জন্য যে কলম ব্যবহার করা হয়, সেটি অপবিত্র হয়ে যায়। সেই কলম ফের ব্যবহার করা উচিত নয়। সেই কারণেই মৃত্যুদণ্ডের আদেশে স্বাক্ষরের পর, কলমের নিবটি ভেঙে দেন বিচারক।
রায় ঘোষণারক সময় এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার সামাজিক প্রভাব নিয়েও আলোচনা করন বিচারক। বিচারক কে সোমানের মতে, আসফাক আলম ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ের নৃশংস মানসিকতার অপরাধী’। তিনি বলেন, “এই ঘটনা নিয়ে কেরলের সর্বত্র চর্চা হচ্ছে। কারণ সাধরণ মানুষ এই ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। বাড়ির আশেপাশে যে সকল শিশুরা খেলা করে, এই ঘটনাকে সেই শিশুদের জন্য হুমকির উদাহরণ হিসাবে বিবেচনা করা যায়। যদি অভিযুক্তকে সমাজের অংশ হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে যে শিশুকন্যাদের এখনও জন্ম হয়নি, তাদেরও প্রাণনাশের ঝুঁকি থাকবে।”
বিহারের আরারিয়া জেলার পারারিয়া গ্রামের বাসিন্দা আসফাক আলম। আধার কার্ডের তথ্য অনুসারে, ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি তার জন্ম হয়েছিল। পড়াশোনা করেছিল চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। মদ্যপ বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে ঘর ছেড়েছিল সে। নিজের গ্রাম ছেড়ে নয়া দিল্লিতে এসে পিৎজা ডেলিভারির কাজ শুরু করেছিল। ২০১৮ সালে, ১০ বছরের এক নাবালিকাকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে আলমকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২৮ দিন জেলে থাকার পর, এক ভাইয়ের সাহায্যে জামিন পেয়েছিল সে। জামিন পেয়েই সে পালিয়েছিল কেরলে। সেখানে সে এক মাংসের দোকানে এবং নির্মাণ কর্মী হিসেবে কাজ করা শুরু করেছিল। চলতি বছরের ২৮ জুলাই, তাদের বাড়ি থেকেই ৫ বছরের মেয়েটিকে অপহরণ করেছইল সে। তারপর ধর্ষণ করে তাকে গলা টিপে হত্যা করেছিল।
আলমের পরিচিতরা জানিয়েছে, সে সবসময়ই মদ খেয়ে লোকজনের সঙ্গে ঝগরা-মারামারি করত। পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, আলম যেখানেই কাজ করতে যেত, সেখানেই ঝামেলা করত। এর জেরে কোথাও সে বেশিদিন কাজ করতে পারেনি। গ্রেফতারের পর পুলিশ তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু, তার পরিবারের লোকজন সাফ জানায়, আলমের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিন কোনও যোগাযোগ নেই। তার কোনও বিষয়ে তারা যুক্ত হতে চান না।