My India My LiFE Goal: যেখানে-সেখানে প্লাস্টিক ফেলছেন, ‘কাঞ্জি চাওয়ালা’কে দিলে বদলে পাবেন গাছ কিংবা অন্য উপহার

Rajasthan's Kana Ram Mewada: বিসালপুরের জাওয়াই বাঁধ দেখতে আসেন যে পর্যটকরা, তাঁরা প্রায়শই এই দোকানে আসেন। চা খাওয়া তো আছেই, সেই সঙ্গে তাঁরা কাঞ্জি চাওয়ালার হাতে তুলে দেন প্লাস্টিক বর্জ্য।

My India My LiFE Goal: যেখানে-সেখানে প্লাস্টিক ফেলছেন, 'কাঞ্জি চাওয়ালা'কে দিলে বদলে পাবেন গাছ কিংবা অন্য উপহার
'সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক' বা একক-ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে প্রকার জেহাদ ঘোষণা করেছেন কাঞ্জি চাওয়ালা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 19, 2023 | 5:02 PM

জয়পুর: রাজস্থানের টোঙ্ক জেলার বিসালপুরে ছোট্ট একটা চায়ের দোকান চালান কানা রাম মেওয়াদা। বেশি পরিচিত কাঞ্জি চাওয়ালা নামেই। বিসালপুরের জাওয়াই বাঁধ দেখতে আসেন যে পর্যটকরা, তাঁরা প্রায়শই এই দোকানে আসেন। চা খাওয়া তো আছেই, সেই সঙ্গে তাঁরা কাঞ্জি চাওয়ালার হাতে তুলে দেন প্লাস্টিক বর্জ্য। আসলে কাঞ্জি চাওয়ালা শুধু ধোঁয়া ওঠা চা বা টুকটাক স্ন্যাকস বিক্রি করেন না, ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ বা একক-ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে প্রকার জেহাদ ঘোষণা করেছেন তিনি। এই ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে গ্রাম এবং সংলগ্ন এলাকা জুড়ে এক বিশেষ প্রচার অভিযান শুরু করেছেন তিনি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্লাস্টিক সংগ্রহ করেন, তার বদলে মানুষকে আকর্ষণীয় উপহারও দেন। এরপর, সংগৃহীত প্লাস্টিক তিনি হয় নিজেই পুনর্ব্যবহার করেন, অথবা মুম্বইয়ের এক এনজিও-তে পাঠান পুনর্ব্যবহারের কাজে লাগাতে।

প্রথমে তিনি একাই এই প্লাস্টিক সংগ্রহের কাজ শুরু করেছিলেন। মাসে এক থেকে দুই কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ হত। ধীরে ধীরে তিনি এলাকার মানুষকে এই বিষয়ে সচেতন করেন। সাধারণ মানুষও এই বিষয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করে এই কাজে তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছে। বর্তমানে প্রতি মাসে তাঁরা প্রায় ২০০ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেন। শুধু তাই নয়, মানুষকে যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলা থেকে নিরুৎসাহ করতে আর্থিক সহায়তা থেকে শুরু করে উপহার দেন কানা রাম মেওয়াদা। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রতি কেজি ২৫ টাকা দরে প্লাস্টিক বর্জ্য কেনেন তিনি। অনেক ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের বিনিময়ে, গাছপালা, চিনি, আটা-ময়দা দেন। শিশুদের মধ্যে প্লাস্টিক দূষণ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে তাদের প্লাস্টিকের পরিবর্তে পেন্সিল-রাবার, জ্যামিতি বাক্সের মতো জিনিস উপহার দেন।

কানা রাম বলেছেন, “প্লাস্টিক এই পৃথিবীর সবথেকে বড় শত্রু। অথচ, আমাদের প্রত্যেকের ব্যবহারের মধ্য দিয়েই প্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে ওঠে। আজ আমাদের ভারত-সহ গোটা বিশ্বে বড় বড় প্লাস্টিকের পাহাড় তৈরি হচ্ছে। সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাফাই অভিযান চালিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না। চিপস, দুধ, ক্যারিব্যাগ, কাপ, তেল বা জলের পাউচের মতো বাড়িতে যে সিঙ্গল ইউজ় প্লাস্টিকগুলি আসে, আমি সেগুলো বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করি। মানুষকে উৎসাহ দিতে আমি বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্কিমও তৈরি করেছি। কখনও বলি আমায় ১ কেজি প্লাস্টিক দিন, বদলে আকর্ষণীয় উপহার নিয়ে যান। এইভাবে, প্রতি মাসে আমার কাছে ২০০ কেজিরও বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয়। ক্রমে এই প্লাস্টিক সংগ্রহের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।”

স্বাধীনতার ৭৫ বছরে, প্লাস্টিক বর্জ্য নির্মূল করতে সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন কাঞ্জি চাওয়ালা। তিনি বলেছেন, “আজাদির অমৃত মহোৎসব চলছে। ৭৫ বছর হয়ে গেল দেশ স্বাধীন হয়েছে। আসুন আমরা এই দেশকে আরও সুন্দর করে তুলি। যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা বন্ধ করি।” তার চায়ের দোকানের চেয়ার থেকে টেবিল সবকিছুই পরিবেশবান্ধব মনে হবে। একই সাথে, এটি তার কঠোর পরিশ্রমের ফল যে মানুষ পরিবেশ সুরক্ষা বুঝতে পারছে এবং তাকে সমর্থন করছে।

বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সমস্যা প্লাস্টিক দূষণ। মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে প্লাস্টিক। বোতল, পাউচ কোনও কিছুর মোড়ক – সবেতেই প্লাস্টিক ব্যবহার হয়। আর ব্যবহারের পর, সেই প্লাস্টিক গিয়ে জমা হয় মাটিতে কিংবা সমুদ্রের জলে। সবথেকে বড় বিষয় হল, এই জমা প্লাস্টিক সহজে পরিবেশে মিশে যায় না। দীর্ঘদিন ধরে অবিকৃত অবস্থায় থেকে যায় প্লাস্টিক বর্জ্য। ২০১৯-২০ সালে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড বা সিপিসিবি (CPCB)-র এক প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতে প্রতি বছর ৩.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়।