৩ কোটি থেকে দ্বিতীয় ধাপে ৩০ কোটি, আমজনতার করোনা টিকা পাওয়া নিয়ে রয়েই গেল ধোঁয়াশা

ডিসেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ (Rajesh Bhushan) সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, "একটি বিষয় আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই, সরকারের তরফ থেকে কখনোই গোটা দেশকে টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি।"

৩ কোটি থেকে দ্বিতীয় ধাপে ৩০ কোটি, আমজনতার করোনা টিকা পাওয়া নিয়ে রয়েই গেল ধোঁয়াশা
প্রতীকী চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Jan 16, 2021 | 1:16 PM

নয়া দিল্লি: দীর্ঘ একবছরের অপেক্ষার অবসান, শনিবার থেকেই দেশজুড়ে শুরু হল করোনার টিকাকরণ প্রক্রিয়া (COVID-19 Vaccination Drive)। উদ্বোধন করলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। প্রথম দফায় তিন কোটি স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদের বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী। তবে প্রশ্ন রয়ে গেল একটাই, বাকি ৯৭ কোটি দেশবাসী কি আদৌই করোনা টিকা পাবেন?

টিকা প্রস্তুতির শুরুতে শোনা গিয়েছিল, দেশের ১৩০ কোটি জনগণকেই দেওয়া হবে করোনার টিকা (COVID-19 Vaccine)। কিন্তু গোল বাঁধে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের বিবৃতিতে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ (Rajesh Bhushan) সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “একটি বিষয় আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই, সরকারের তরফ থেকে কখনোই গোটা দেশকে টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। এই ধরনের বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলি তথ্যের ভিত্তিতে আলোচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

একই সুরে সুর মিলিয়ে আইসিএমআর (ICMR)-র ডিরেক্টর জেনারেল বলরাম ভার্গব জানান, যাদের সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, এমন জনগণকে যদি টিকা দিয়ে সংক্রমণের চেইন ভাঙা যায়, তবে দেশের প্রতিটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। সম্পূর্ণ বিষয়টিই নির্ভর করছে ভ্যাকসিনের কার্যকারীতার উপর।

আজ করোনা গণটিকাকরণ প্রক্রিয়ার উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বলেন, “টিকাকরণের প্রথম ধাপে মোট তিন কোটি স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদের টিকা দেওয়া হবে। এই সংখ্যাটিই দ্বিতীয় ধাপে বাড়িয়ে ৩০ কোটি করা হবে।” তবে বাকি দেশবাসীর টিকাকরণের প্রসঙ্গ সন্তর্পণে এড়িয়ে যান তিনি।

আরও পড়ুন: তিন কোটি স্বাস্থ্যকর্মীর টিকাকরণের খরচ বহন করবে সরকার: নরেন্দ্র মোদী

প্রথম ধাপে স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদের বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হলেও বাকি দেশবাসী কবে ভ্যাকসিন পাবে, তাঁদের টিকাকরণও বিনামূল্যে করা হবে কিনা, সেই বিষয়টি কেন্দ্রের তরফেও খোলসা করা হয়নি। টিকাকরণ প্রক্রিয়া শুরুর আগে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এই প্রশ্ন তুলেছিলেন।

বৈঠকে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছিলেন, “তিন কোটি স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকাকরণের খরচ কেন্দ্রীয় সরকার বহন করছে, কিন্তু বাকি দেশবাসীর কী হবে? তাঁদের টিকাকরণের খরচ কি রাজ্য সরকারগুলিকে বহন করতে হবে?” মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নীতি আয়োগ কর্তা জানান, দ্বিতীয় দফা টিকাকরণ প্রক্রিয়া শুরুর আগে ফের বৈঠক করা হবে, সেই সময়ে এই বিষয়ে আলোচনা হবে।

তবে বিহারবাসীকে বিনামূল্যে টিকাকরণের প্রতিশ্রুতির কী হবে? গত বছরের বিহার নির্বাচনে নীতিশ কুমারের দলের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াইয়ে নেমেছিল বিজেপি (BJP)। নির্বাচনী প্রচারে হাজির হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কেন্দ্রের শাসক দলের তরফে প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল, নির্বাচনে জিতলে সমস্ত বিহারবাসীকেই দেওয়া হবে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন। নির্বাচনে জিতলেও ভ্যাকসিন বিতরণ নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নে মুখে কুলুপ আঁটে শাসক দল।

এই পরিস্থিতিতে যখন সমস্ত দেশবাসীই “কবে আসবে পালা”-র দিকে তাকিয়ে, সেখানে কেন্দ্রের তরফে প্রথম ধাপে স্বাস্থ্যকর্মী এবং দ্বিতীয় ধাপে ৫০-র উর্দ্ধে থাকা ব্যক্তি ও কো-মর্ডিবিটি (Co-mordibity) থাকা জনগণকে টিকাকরণের কথা বলা হলেও, সাধারণ মানুষকে টিকাকরণের প্রসঙ্গ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। টিকাকরণের আদৌই কোনও তৃতীয় ধাপ হবে কিনা, সেই বিষয়টি ঘিরেও সম্পূর্ণ ধোঁয়াশাই রয়েছে।

আরও পড়ুন: ২৬ জানুয়ারির ট্রাক্টর মার্চ ঘিরে অন্নদাতাদের প্রস্তুতি তুঙ্গে, বাড়ছে গোলমালের আশঙ্কা!