Emergency Period: আজ এমন দিনে অন্ধকারে তলিয়ে যায় দেশ, কী কী স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ইন্দিরার এক ঘোষণায়

Indira Gandhi: পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে অভ্যন্তরীণ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পরামর্শ দেন। এরপরই ইন্দিরা গান্ধীর পরামর্শে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন মধ্য রাতের কয়েক মিনিট আগে জরুরি অবস্থার ঘোষণা করেন।

Emergency Period: আজ এমন দিনে অন্ধকারে তলিয়ে যায় দেশ, কী কী স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ইন্দিরার এক ঘোষণায়
১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন ইন্দিরা গান্ধী।Image Credit source: Getty Image
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 25, 2023 | 2:54 PM

নয়া দিল্লি: ৪৮ বছর পার হয়ে গিয়েছে। অনেকের মনে স্পষ্ট এখনও জরুরি অবস্থার (Emergency) ক্ষত। ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী (Indira Gandhi)-র পরামর্শে সংবিধানের ৩৫২ ধারা প্রয়োগ করে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ জরুরি অবস্থার ঘোষণা করেন। ১৯৭৭ সালের ২১ মার্চ অবধি জারি ছিল এই জরুরি অবস্থা। ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এই ২১ মাসের সময়কালকে ‘অন্ধকারময় সময়’ হিসাবেই উল্লেখ করা হয়। জরুরি অবস্থার ৪৮ বছর পার হলেও, এখনও ইন্দিরা গান্ধীর এই সিদ্ধান্ত নিয়েই আক্রমণের মুখে পড়তে হয় কংগ্রেসকে (Congress)। ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম বিতর্কিত অধ্যায় এই জরুরি অবস্থা। এই জরুরি অবস্থায় কী কী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইন্দিরা গান্ধীর সরকার? কেনই বা এত বিতর্ক জরুরি অবস্থার সিদ্ধান্ত নিয়ে?

জরুরি অবস্থার ইতিহাস জানতে গেলে, এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আগে জানা প্রয়োজন। আগেও ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধ ও ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হলেও, তার প্রভাব গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব ফেলেনি। তবে ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা ঘোষণার সিদ্ধান্তের পিছনে ছিল তাঁর প্রধানমন্ত্রী পদ বাঁচানোর চেষ্টা। ১৯৭১ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন রাজ নারায়ণ। তাঁর অভিযোগ ছিল, অসৎ উপায়ে নির্বাচন করানো হয়েছে এবং নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছিল।

১৯৭৫ সালের ১২ জুন এলাহাবাদ হাই কোর্টের তরফে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির মামলায় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করে। আদালতের তরফে রায় দেওয়া হয় যে আগামী ছয় বছর তিনি কোনও ধরনের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন না। আদালতের এই রায়ের ফলে ১৯৭১ সালে রায়বরেলিতে ইন্দিরা গান্ধীর জয় বাতিল করে দেওয়া হয়, লোকসভার আসন হারান তিনি। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টেও গিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী, কিন্তু সেখানেও হাই কোর্টের রায়ই বহাল রাখা হয়। সাংসদ হিসাবে ইন্দিরা গান্ধী যে সমস্ত সুবিধা পেতেন, তা বন্ধ করে দিতে বলা হয়। তাঁর ভোটাধিকারও কেড়ে নেওয়ার রায় দেওয়া হয়।

JP Narayan

জেপি নারায়ণ Getty Images

পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে অভ্যন্তরীণ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পরামর্শ দেন। এরপরই ইন্দিরা গান্ধীর পরামর্শে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন মধ্য রাতের কয়েক মিনিট আগে জরুরি অবস্থার ঘোষণা করেন। রাতভর সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় ও ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা ঘোষণার বক্তব্য লেখেন।

কী কী বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল?

  • জরুরি অবস্থা ঘোষণা হতেই ওই রাতে দিল্লির অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। পরের দিন সকালে সংবাদপত্রগুলিতে সাদা পাতা প্রকাশিত হয়।
  • ২৬ জুন সকাল ৮টায়, অল ইন্ডিয়ায় রেডিয়োর একটি বার্তায় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থার ঘোষণা করেন। রেডিয়ো বার্তায় তিনি বলেন, “ভাই ও বোনেরা, রাষ্ট্রপতিজি জরুরি অবস্থার ঘোষণা করেছেন। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।”
  • জরুরি অবস্থা চলাকালীন যেমন নাগরিকদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, তেমনই সংবাদ মাধ্য়মের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়।
  • গ্রেফতার করা হয় একের পর এক বিরোধী নেতাকে। বিজয়রাজে সিন্ধিয়া থেকে শুরু করে জয়প্রকাশ নারায়ণ, মোরারজি দেশাই, চরণ সিং, অটল বিহারী বাজপেয়ী, লাল কৃষ্ণ আদবাণী, অরুণ জেটলি, নারায়ণ সিনহা, জয়পুরের রানি গায়েত্রী দেবীকে গ্রেফতার করা হয়। ওই সময়ে প্রায় ১ লক্ষেরও বেশি মানুষ সরকারের বিরোধিতা করার অপরাধে গ্রেফতার হয়েছিলেন।
  • বন্ধ হয়ে যায় লোকসভা ও রাজ্যসভার নির্বাচন।
  • দেশের কর্মক্ষমতা বাড়াতে রবিবারের ছুটি বাতিল করে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় বোনাস, বেতন বৃদ্ধি। খোলা হাতে কর্মী ছাঁটাইয়ের অধিকার দেওয়া হয়।
  • মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য কর ছাড়ের ঘোষণা করেন। আট হাজার টাকা অবধি আয়ের উপরে ছাড় দেওয়া হয়।
  • চালু করা হয় রোড পাসের নিয়ম। ন্যাশনাল পারমিট স্কিম চালু করা হয়।

Ghorer Bioscope