গঙ্গার তীর জুড়ে পড়ে আছে হাজার দুয়েক দেহ, চিল-শকুনের ভুরিভোজে দৃশ্য কার্যতই ভয়ঙ্কর

গত কয়েকদিন ধরে গঙ্গায় দেহ ভেসে আসার দৃশ্য দেখা গিয়েছে। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলাতেও বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে।

গঙ্গার তীর জুড়ে পড়ে আছে হাজার দুয়েক দেহ, চিল-শকুনের ভুরিভোজে দৃশ্য কার্যতই ভয়ঙ্কর
মৃতদেহ পড়ে আছ প্রয়াগরাজে (ছবি- পিটিআই)
Follow Us:
| Updated on: May 15, 2021 | 6:22 PM

লখনউ: বক্সার, গাজীপুর, বারাণসী! গত কয়েকদিন ধরে আসছে কিছু টুকরো টুকরো খবর আর কিছু শিউরে ওঠার মতো ছবি। যে গঙ্গা ভারতীয় সংস্কৃতিতে মা হিসেবে পূজিত, তার বুকেই ভেসে উঠছে একের পর এক দেহ। সেই ছবি ইতিমধ্যেই ঘুম উড়িয়েছে গোটা দেশের। কিন্তু গঙ্গার তীর ধরে আসলে যে মৃতদেহের স্তূপ পড়ে আছে, সেই ছবিটা নাকি এখনও অধরাই।

সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমের হাত ধরে উঠে এসেছে উত্তরপ্রদেশের গঙ্গা তীরবর্তী এলাকার বীভৎস ছবি। কোথাও জলে ভাসছে দেহ, কোথাও আবার নদীর পাড়ে লাশের সার। কোথাও ছিঁড়ে খাচ্ছে কুকুর আবার কোথাও পচা-গলা দেহে চিল-শকুনের লোলুপ দৃ্ষ্টি। ছিঁড়ে খাওয়া দেহগুলো থেকে দেহাংশ ছড়িয়ে আছে ইতিউতি। উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের কিছুটা অংশে গঙ্গার ধারে এই দৃশ্য চোখে পড়ছে। কনৌজ, কানপুর, উন্নাও, ফতেপুর, সম্বল, প্রয়াগরাজ, প্রতাপগড়, শাহজাহানপুর, হারদই, ফারুকাবাদ, বদায়ুঁ, কাসগঞ্জ, আলিগড়, হাপুর, বুলন্দশহর, মুজফফরনগর, মিরট, বিজনোর জুড়ে প্রায় ১১৪০ কিলোমিটার এলাকায় চোখে পড়ছে একই ছবি। হিসেব বলছে, অন্তত ২০০০ দেহ পড়ে আছে নদীর ধারে।

কোথায় কেমন ছবি?

কনৌজের মহাদেবী ঘাটের কাছে পড়ে আছে ৩৫০টি দেহ। স্থানীয়রা বলছেন, পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন ওই সব দেহের ওপর মাটি চাপা দিচ্ছে, যাতে কেউ না দেখতে পায়। তারপর জলের স্তর বাড়লেই আবার ভাসছে সেই দেহ। এক ঘাট থেকে পৌঁছে যাচ্ছে আর এক ঘাটে।

কানপুরের শেরেশ্বর ঘাটের ছবিও একই। মাটিতে পোঁতা অগণিত দেহ। অন্তত ৪০০ দেহ পড়ে আছে সেখানে। কোনও কোনও দেহ কুকুরে টানা-হেঁচড়া করছে। পুলিশও রয়েছে সে সব জায়গায়। সেখানেও মাটি চাপা দেওয়ার প্রচেষ্টা জারি আছে বটে তবে পচনশীল মৃতদেহের গন্ধ আটকানো সম্ভব নয়।

শুধু উন্নাওতেই নদীর ধারে পোঁতা রয়েছে ৯০০ দেহ। বক্সার ঘাট ও শুক্লাগঞ্জ ঘাটের কাছে পা ফেলার জায়গা নেই, থিক থিক করছে মৃতদেহ। উন্নাওয়ের কাছে ফতেপুরে ২০টি দেহ পড়ে রয়েছে। উন্নাও ও ফতেপুরের প্রশাসন দেহগুলির শেষকৃত্য সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া, প্রয়াগরাজ, বারানসী, চান্দোলি, ভাদোই, মির্জাপুরে অন্তত ৫০ টি দেহ রয়েছে বলে সূত্রের খবর।

গাজীপুরের দৃশ্যও খুব একটা সুখকর নয়। মাটি খুঁড়লে প্রত্যেকদিন ১০-১২ টা করে দেহ বেরিয়ে আসছে। হিসেব বলছে, প্রায় ৩০০-র কাছাকাছি দেহ রয়েছে সেখানে। বালিয়াতে ১৫টি দেহ পাওয়া গিয়েছে।

আরও পড়ুন: করোনা ঠেকাতে বৈঠক প্রধানমন্ত্রীর, কী কী পরামর্শ দিলেন নমো?

কেন এই বীভৎসতা?

গঙ্গার বুকে কোথা থেকে এল এই দেহ তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই কারও কাছে। স্থানীয়দের বেশির ভাগের মতে, করোনা আক্রান্তদের সৎকারের জায়গা নেই বলে এ ভাবে ভাসিয়ে দিচ্ছেন আত্মীয়রা। আবার অনেকে বলছেন, নদীতে দেহ ভাসিয়ে দেহ ভাসিয়ে দেওয়ার প্রথা প্রচলিত আছে অনেক জায়গায়। কিন্তু এত বেশি মৃতদেহ একসঙ্গে কেন? তার সদুত্তর নেই প্রশাসনের কাছেও। স্থানীয়দের আরও দাবি, এগুলো এই সব মৃতের কোনও হিসেব নেই প্রশাসনের কাছে। এরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন কিনা, সেটাও হয়ত জানেন না কেউ। কিন্তু এর ফল কী হবে? এ ভাবে পচা-গলা দেহ জমতে থাকলে কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়েই আতঙ্কে আছেন মানুষজন।