সীমান্তে শান্তি না ফিরলে আখেরে ক্ষতি ভারত-চিন বাণিজ্যের, উদ্বেগ জয়শঙ্করের বইয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদন: লাদাখ সীমান্তে দু’পক্ষই ৫০ হাজারের মতো সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। শীত পড়ার আগে বাড়ানো হচ্ছে আগাম মজুত অস্ত্রের সংখ্যাও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেনাকে সদাসতর্ক থাকার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন সংসদের বাদল অধিবেশন শুরুর আগেই। অর্থাত্ আগামী কয়েক মাসে ভারত-চিন সীমান্তে চাপান-উতর যে কমার নয়, তা স্পষ্ট। শনিবার, বর্তমান পরিস্থিতির কথা বলতে গিয়ে এক রাশ […]
নিজস্ব প্রতিবেদন: লাদাখ সীমান্তে দু’পক্ষই ৫০ হাজারের মতো সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। শীত পড়ার আগে বাড়ানো হচ্ছে আগাম মজুত অস্ত্রের সংখ্যাও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেনাকে সদাসতর্ক থাকার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন সংসদের বাদল অধিবেশন শুরুর আগেই। অর্থাত্ আগামী কয়েক মাসে ভারত-চিন সীমান্তে চাপান-উতর যে কমার নয়, তা স্পষ্ট। শনিবার, বর্তমান পরিস্থিতির কথা বলতে গিয়ে এক রাশ উদ্বেগ প্রকাশ করলেন বিদেশমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর।
শীর্ষ আমলা থেকে মন্ত্রী হওয়া জয়শঙ্করের গলায় এই উদ্বেগ যদিও প্রথম নয়, একাধিক সাক্ষাৎকারে সীমান্ত সমস্যার জটিল পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। এ দিন তাঁর ‘দ্য ইন্ডিয়া ওয়ে’ নামক একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে জয়শঙ্কর বলেন, “সীমান্তে শান্তি এবং সুস্থিরতা গভীরভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এর জেরে তলানিতে ঠেকেছে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক।” ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যা যে জটিল, এ কথা আরও একবার জানান তিনি। বিদেশমন্ত্রীর কথায়, ১৯৮০-র পর ভারত-চিনের সম্পর্ক সহজ হতে থাকে। তার একটাই কারণ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক মজবুত হয়।
চিনের কাছে বিদেশমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা, সীমান্ত সমস্যা জটিল হওয়ায়, তার সমাধান একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমঝোতা প্রয়োজন। আলাপ-আলোচনার মধ্যে তা সম্ভব বলে মনে করেন জয়শঙ্কর। সীমান্তে শান্তি এবং স্থিরতা বজায় রাখতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের দরকার। ‘দ্য ইন্ডিয়া ওয়ে’ বইয়ে এই সব বিষয় উল্লেখ করেছেন বলে জানান তিনি।
এই মুহূর্তে ভারতের অবস্থান:
গত ১৩ অক্টোবর সামরিক স্তরে ফের বৈঠকে বসে দু’দেশের সেনা। গালওয়ানে ভারতীয় ভূখণ্ড এবং প্যাংগংয়ের উত্তর ও দক্ষিণের ফিঙ্গার পয়েন্টে লাল ফৌজ পিছু না হটলে ভারতও নিজের অবস্থান থেকে সরবে না বলে স্পষ্ট জানানো হয়। ভারতীয় ভূখণ্ডে ৪৪টি সেতু উদ্বোধন করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তা নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে সীমান্তে। রাজনাথ জানিয়েছেন, পাকিস্তান ও চিন এক সঙ্গে সমস্যা তৈরি করার চেষ্টা করছে। ভারতের ৭ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে তারা অস্থিরতা তৈরি করছে। উল্লেখ্য, এ নিয়ে সপ্তমবার বৈঠক হল দুই দেশের সেনার মধ্যে। সূত্রের খবর, সামরিক ও কূটনৈতিক আলোচনা চলার সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে সীমান্তে সব রকমের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতীয় সেনা।
অনড় লাল ফৌজও:
সীমান্তে ক্রমশ সামরিক সরঞ্জাম বাড়িয়ে চলেছে চিনা সেনা। সূত্রের খবর, অস্ত্র থেকে চিকিত্সা সরঞ্জাম, যুদ্ধের যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে রেখেছে তারা। গত সপ্তাহের বৈঠকে চিনের হুঁশিয়ারি, ভারত প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে সেনা না সরালে, তারও তাদের অবস্থানে অনড় থাকবে। অন্যদিকে, ভারতের একাধিক সেতু তৈরি নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে চিন। এক সাংবাদিক বৈঠকে চিনা বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিঝিয়ান জানান, ভারত যে বেআইনিভাবে লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করেছে, চিন তা স্বীকৃতি দেয় না। অরুণাচল প্রদেশ ভারতের নয় বলেও জানান তিনি।
বিতর্কিত জায়গায় ভারতের এ ধরনের নির্মাণকাজে তীব্র সমালোচনা করেন ঝাও লিঝিয়ান। তিনি জানান, সম্প্রতি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিতর্কিত জায়গায় নতুন করে কোনও অস্থিরতা যাতে না হয় তা মাথায় রেখে পদক্ষেপ করবে দুই দেশ। কিন্তু ভারত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নির্মাণকাজ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ চিনা মুখপাত্রের।