ক্যাপিটল হিলে তৎপর টুইটার, লালকেল্লায় কেন নিষ্ক্রিয়, প্রশ্ন ক্ষুব্ধ রবিশঙ্করের

ভারতে থাকতে গেলে দেশের আইন মানতেই হবে, কড়া বার্তা মন্ত্রীর

ক্যাপিটল হিলে তৎপর টুইটার, লালকেল্লায় কেন নিষ্ক্রিয়, প্রশ্ন ক্ষুব্ধ রবিশঙ্করের
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 11, 2021 | 7:57 PM

নয়া দিল্লি: ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই সোশ্যাল মিডিয়াকে বিজেপির অন্যতম হাতিয়ার বলে মনে করা হয়। এমনকি সাম্প্রতিককালে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ফেসবুকের সঙ্গে বিজেপির আঁতাতের অভিযোগও ওঠে। বিতর্কের জেরে পদত্যাগ করেন ফেসবুক ইন্ডিয়ার উচ্চপদস্থ আধিকারিক আঁখি দাস। অথচ লালকেল্লার ঘটনার পর বদলে গেল ছবিটা। মাইক্রোব্লগিং প্লাটফর্ম টুইটারের সঙ্গে বিরোধ ক্রমশ প্রকট হচ্ছে বিজেপি সরকারের। বুধবারই কেন্দ্রের সঙ্গে মার্কিন এই সংস্থার জরুরি বৈঠক হয়। এরপর বৃহস্পতিবার সরাসরি সংস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ।

এ দিন টুইটারের নাম না করলেও সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। উস্কানিমূলক ‘কনটেন্ট’ সরানো না হলে ভারতের আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। কৃষক আন্দোলনে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে উস্কানি দিতে কিছু টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ কেন্দ্রীয় সরকারের। সেইসব অ্যাকাউন্টগুলির তালিকা সংস্থাকে দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু ওই সব অ্যাকাউন্ট ব্লক বা সাসপেন্ড করার ক্ষেত্রে সংস্থার গাফিলতি চোখে পড়তেই ক্ষুব্ধ সরকার। বুধবারের বৈঠকেও কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে টুইটারের আধিকারিকদের।

আরও পড়ুন: ‘ফুচকা খাওয়ার ক্ষমতা নেই, ফুলকো লুচি খাবে’! মমতার কটাক্ষ অমিতকে

এ দিন রাজ্যসভায় এই প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আমেরিকার ক্যাপিটোল হিলের প্রসঙ্গও টেনে আনেন মন্ত্রী। তাঁর দাবি, টুইটার দ্বিচারিতা করছে। ক্যাপিটোল হিলে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, লালকেল্লার ক্ষেত্রে তা করা হয়নি বলে অভিযোগ রবিশঙ্করের। উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে ক্যাপিটোল হিলের বিক্ষোভের জেরে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেওয়া হয়। আর লালকেল্লার ঘটনার পর কেন্দ্রীয় সরকার শতাধিক অ্যাকাউন্টের তালিকা তৈরি করে ব্লক করতে বললেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি টুইটার। রবিশঙ্করের অভিযোগ ওয়াশিংটনের সেই ঘটনার ক্ষেত্রে তৎপরতার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও ভারতের ক্ষেত্রে সেই একই ছবি দেখা যাচ্ছে না।

রবিশঙ্কর প্রসাদ আরও বলেন, “সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ব্যক্তি অধিকারকে আমরা গুরুত্ব দিই। কিন্তু নিরাপত্তা আর দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকেও সমানভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন।” এক প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যসভায় তিনি বলেন, “দয়া করে হিংসা আর ভুল তথ্য ছড়াবেন না। দেশের সংবিধান মেনে চলুন, নাহলে আমরা কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পথে হাঁটব।”

এ দিন তিনি সাফ বার্তা দিয়ে জানান যে সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলির নিজস্ব কিছু নিয়ম-কানুন আছে মানে এই নয় যে, তারা ভারতের আইন মানবে না। তাঁর কথায়, “এখানে ওসব চলবে না।” সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে কেন্দ্র নতুন গাইডলাইন তৈরি করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর চূড়ান্ত গাইডলাইন প্রকাশ করা হবে বলে এদিন জানান রবিশঙ্কর প্রসাদ।

বুধবারের বৈঠকে টুইটারের তরফ থেকে ছিলেন টুইটারের ভাইস প্রেসিডেন্ট (গ্লোবাল পাবলিক পলিসি) মনিক মেশে ও ডেপুটি জেনারেল কাউন্সেল জিম বেকার। তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফ থেকে তাঁদের কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কেন্দ্রের তরফ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয় ওই বৈঠকে নির্দেশিকা কার্যকর করার ক্ষেত্রে গাফিলতি কেন, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের সচিব। তিনি সংস্থার আধিকারিকদের মনে করিয়ে দেন যে ভারতে কাজ করতে গেলে এখানকার আইন মেনে চলতে হবে।

ব্লক বা সাসপেন্ড করার জন্য সম্প্রতি মোট ১,১৭৮ টি টুইটার অ্যাকাউন্টের তালিকা তৈরি করে কেন্দ্র। এই সব অ্যাকাউন্টগুলির সঙ্গে খালিস্তানি ও পাকিস্তানি সমর্থকদের যোগ আছে বলে অভিযোগ। খালিস্তানি ও পাকিস্তানি সমর্থনে ওই অ্যাকাউন্টগুলি থেকে কৃষক আন্দোলনের পক্ষে টুইট করা হচ্ছে বলে সরকারি নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে। তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফ থেকে এই তালিকা ‘টুইটার’কে দেওয়া হয়েছে। এর আগে আরও ২৫৭ টি টুইটার হ্যান্ডেলের তালিকা দেওয়া হয়েছিল টুইটারকে। সেগুলি প্রাথমিকভাবে ব্লক করা হলেও পরে তা আন-ব্লক করা হয়। বাক-স্বাধীনতার যুক্তি দিয়ে আন-ব্লক করে মাইক্রোব্লগিং সংস্থা ‘টুইটার’। দ্বিতীয়বার অবশ্য, তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের ৬৯ এ ধারা মেনেই নতুন নোটিস পাঠানো হয়েছে।