কৃষি আইন স্থগিত করুন, না হলে আমরা করতে বাধ্য হব: সুপ্রিম কোর্ট

প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করে বলেন, "আপনারা আইন স্থগিত রাখুন, নয়তো আমরা স্থগিতাদেশ জারি করব।"

কৃষি আইন স্থগিত করুন, না হলে আমরা করতে বাধ্য হব: সুপ্রিম কোর্ট
অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Jan 11, 2021 | 4:22 PM

নয়া দিল্লি: কৃষি আইন (Farm Laws) নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বড় ধাক্কা খেল কেন্দ্র। কৃষক আন্দোলন ঘিরে পরিস্থিতি আরও খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে, একথা বলে কেন্দ্রের কড়া সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে (SA Bobde) বলেন, “আপনারা আইনে স্থগিতাদেশ জারি করুন, নয়তো আমরা করব। এই বিষয়ে এত অহংবোধ আসছে কী করে?”

সোমবার কৃষি আইনের বৈধতা ও কৃষক আন্দোলনের স্থান নিয়ে একাধিক মামলার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেই মামলার শুনানিতেই কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে কড়া সমালোচনা করে শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে বলেন, “যদি খারাপ কিছু হয়, তবে আমরা সকলে তার জন্য দায়ী থাকব। কোনও ক্ষয়ক্ষতি হোক বা আমাদের হাতে রক্ত লাগুক, তা কাম্য নয়।” কৃষকদের আন্দোলনের পক্ষেই সায় দিয়ে শীর্ষ আদালত জানায়, কৃষি আইনে স্থগিতাদেশ জারি করার পরও তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারবে। তবে দিল্লি সীমান্তেই তাঁরা আন্দোলন জারি রাখতে চান কিনা, সেই সিদ্ধান্ত কৃষকদের উপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

গতবারের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি বললে কেন্দ্রের তরফে বলা হয়, “দুই পক্ষের মধ্যে একটি সুষ্ঠ আলোচনা হচ্ছে”। আজ কেন্দ্রের সেই মন্তব্যকে উল্লেখ করেই প্রদান বিচারপতি সমালোচনা করে বলেন, “গতবারের শুনানিতেও আমরা এই প্রশ্ন করেছিলাম, কিন্তু কোনও জবাব মেলেনি। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গিয়েছে। কৃষকরা আত্মহত্যা করছেন। এই ঠান্ডা আবহাওয়াতেও বয়স্ক ও মহিলারা আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন কেন?”

আরও পড়ুন: দিল্লি মহারাষ্ট্রেও কোপ বার্ড ফ্লু-র, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশেষ বৈঠক সংসদীয় কমিটির

কৃষি আইন কেন্দ্র করে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, তা সমাধানে ফের একবার কেন্দ্রকে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের তরফে বলা হয়, “যদি সরকার নিজে থেকে এই কাজ না করে, তবে আইন কার্যকরের সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ জারি করে আমরা কথা বলব।” কমিটি গঠন না হওয়া অবধি কৃষি আইনে স্থগিতাদেশ জারি করার উপরই জোর দেয় সুপ্রিম কোর্ট। একইসঙ্গে জানানো হয়, কৃষি আইনে স্থগিতাদেশ জারি করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও ১৯৫৪ সালের সংবিধান সংশোধনীর উপর স্থগিতাদেশ জারি করা হচ্ছে না।

সুপ্রিম কোর্টের কড়া সমালোচনার মুখে পড়ে কেন্দ্রের তরফে হাজির অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল (KK Venugopal) বলেন, “আপনারা কমিটি গঠন করতে পারেন তবে আইনে স্থগিতাদেশ জারি করবেন না।” কৃষক আন্দোলনে কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে সাফাই দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “কেবল দু-তিনটি রাজ্যের কৃষকরাই আন্দোলন করছেন। দেশের দক্ষিণ বা পশ্চিমভাগের কৃষকরা এই আন্দোলনে অংশ নেয়নি।”

কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে গত বছরের নভেম্বর মাসের শেষভাগ থেকে দিল্লির সিংঘু সীমান্তে আন্দোলন করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকরা। এদের মধ্যে অধিকাংশই পঞ্জাব ও হরিয়ানার বাসিন্দা। আন্দোলনকারী কৃষকদের প্রধান দুটি দাবি হল, কেন্দ্রের নয়া তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে হবে এবং ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি গ্যারান্টি দিতে হবে।

ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের সঙ্গে আট দফা বৈঠক হলেও কোনও আলোচনাতেই মেলেনি সমাধানসূত্র। আইন প্রত্যাহারের দাবিতেই অনড় রয়েছেন কৃষকরা। অন্যদিকে কেন্দ্রের তরফেও বলা হয়েছে, “আইন প্রত্যাহার ছাড়া অন্য কোনও প্রস্তাব থাকলে তা কেন্দ্রকে জানাক কৃষকরা, সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে।” আগামী ১৫ জানুয়ারি ফের বৈঠকে বসতে চলেছে কেন্দ্র ও কৃষক পক্ষ।

আরও পড়ুন: কৃষক আন্দোলন সম্পর্কিত একাধিক মামলার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে, ক্ষুব্ধ ‘অন্নদাতা’রা