বিদেশি ঘোষণা করা হয়েছিল অসমের বাসিন্দাকে, নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট
Supreme Court: নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত ছোটেন মহম্মদ রহিম আলি। সম্প্রতিই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিক্রম নাথ ও বিচারপতি আহসানুদ্দিন আমানুল্লাহের বেঞ্চের তরফে রহিম আলির ছিনিয়ে নেওয়া নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
গুয়াহাটি: নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র দেখাতে পারেননি। তাই আদালতে তাঁকে ‘বিদেশি’ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে ১২ বছর পর অবশেষে নাগরিকত্ব ফিরে পেলেন ওই ব্যক্তি। অসমের বাসিন্দা রহিম আলিকে ফের একবার ভারতীয় নাগরিক হিসাবে ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্ট। একইসঙ্গে ২০ বছর আগে নাগরিকত্ব নির্ধারণের জন্য যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হত, তারও কড়া নিন্দা করল শীর্ষ আদালত।
১২ বছর আগে অসমের বাসিন্দা মহম্মদ রহিম আলিকে বিদেশি বলে ঘোষণা করেছিল ফরেনার্স ট্রাইবুনাল। সুপ্রিম কোর্টের তরফে ওই ব্যক্তির নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়ে, ওই মামলাকে “গ্রেভ মিসক্য়ারেজ অব জাস্টিস” বলে অ্যাখ্যা দেওয়া হয়।
জানা গিয়েছে, ২০০৪ সালে মামলাটি শুরু হয়েছিল। অসমের নালবাড়ির পুলিশ স্টেশনের এক সাব ইন্সপেক্টর রহিম আলির বাড়িতে এসেছিলেন। তাঁকে ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ দেখাতে বলেন, দাবি করেন তিনি বিদেশি নাগরিক। মামলা গড়ায় ট্রাইবুনাল আদালত পর্যন্ত। সেখানে তাঁকে হাজিরা দিতে বলা হলেও, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। এরপরই আদালতের তরফে তাঁকে বিদেশি আইন (Foreigners Act)-র ৯ নম্বর ধারার অধীনে বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তি বিদেশি নন, তা প্রমাণ করতে ব্য়র্থ হয়েছেন। তাঁকে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী বলে ঘোষণা করা হয়।
এরপর ১২ বছর কেটে গিয়েছে। নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত ছোটেন মহম্মদ রহিম আলি। সম্প্রতিই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিক্রম নাথ ও বিচারপতি আহসানুদ্দিন আমানুল্লাহের বেঞ্চের তরফে রহিম আলির ছিনিয়ে নেওয়া নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হয়। শীর্ষ আদালতের রায়ে বলা হয়, ২০০৪ সালে পুলিশ যে তদন্ত করেছিল, তাতে গাফিলতি ছিল। আইনি ব্যর্থতার কারণেই ওই ব্যক্তিকে ভুল করে বিদেশি ঘোষণা করা হয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের তরফে বলা হয়, “একজন অভিযুক্তকে মূল্য়ায়ন করতে গেলে আরও অনেক বেশি তথ্যের দরকার। শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে কাউকে মূল্যায়ন করা যায় না। সামান্য প্রামাণ্যের ভিত্তিতে কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত করা হলে, তা সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে অত্যন্ত খারাপ পরিণতি হতে পারে।”
শীর্ষ আদালতের তরফে তৎকালীন কর্তৃপক্ষেরও কড়া সমালোচনা করা হয় যে প্রাথমিক পর্যায়ে অভিযোগের মূল ভিত্তিরই ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। এই ভুল ব্যাখ্যা গোটা প্রক্রিয়াকেই অবৈধ ঘোষণা করার জন্য যথেষ্ট। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ট্রাইবুনালের কাছে পেশ করা প্রমাণ খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল নাম ও তারিখের ইংরেজি ভুল বানানের কারণে। সামান্য বানান ভুলে এমন গুরুতর ফল হতে পারে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাতৃভাষা ও ইংরেজিতে আলাদা বানান লেখা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের তরফে গুয়াহাটি হাইকোর্ট ও ফরেনার্স ট্রাইবুনালের রায় খারিজ করে দিয়ে রহিম আলিকে অবিলম্বে ভারতীয় নাগরিক হিসাবে ঘোষণা করা হয়।