জামিনের জুজু দেখাতেই সুপ্রিম কোর্ট থেকে নারদ মামলা প্রত্যাহার করল সিবিআই
হাইকোর্টের পাঁচ সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারাধীন রয়েছে, তা নিয়ে কেন সুপ্রিম কোর্ট আসা হচ্ছে। এই প্রশ্ন রাখা হয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সামনে। শেষে আদালতের তোপের মুখে পড়ে মামলা প্রত্যাহার করে নেয় সিবিআই।
নয়া দিল্লি: নারদ মামলায় হাইকোর্টের পর সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও প্রশ্নের মুখে জেরবার হতে হল সিবিআইকে। এ দিন শীর্ষ আদালতের ভ্যাকেশনাল বেঞ্চে মামলাটি উঠলে দুই বিচারপতির কড়া সওয়ালের মুখে কার্যত ঝাঁঝরা হতে হয় কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে। যে মামলাটি ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের পাঁচ সদস্যের বিশেষ বেঞ্চের বিচারাধীন রয়েছে, তা নিয়ে কেন সুপ্রিম কোর্ট আসা হচ্ছে। এই প্রশ্ন রাখা হয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সামনে। মামলা প্রত্যাহার না করা হলে অভিযুক্তদের জামিন দিয়ে দেওয়ার কথাও বলেন বিচারপতিরা। শেষে আদালতের তোপের মুখে পড়ে মামলা প্রত্যাহার করে নেয় সিবিআই।
জবাবে কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, সেদিন নিজাম প্যালেসের বাইরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যের আইনমন্ত্রী যেভাবে ধর্নায় বসেছিলেন, তাতে সিবিআই নিজের কাজ ঠিক মতো করতে পারেনি। কেন্দ্রের এই যুক্তি শুনে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বলেন, “একটা বিষয় পরিষ্কার করে দিতে চাই আমরা ধর্নার বিপক্ষে। কিন্তু যদি মুখ্যমন্ত্রী বা আইনমন্ত্রী নিজের হাতে আইন তুলে নেন, তার জন্য অন্যান্য অভিযুক্তদের ভোগান্তি হবে কেন?” সিবিআই দাবি করেছিল, নিম্ন আদালত প্রভাবিত হয়ে এই জামিনের নির্দেশ দেয় চার অভিযুক্তকে। কেন্দ্রীয় সংস্থার সেই দাবিও কার্যত উড়িয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ সাফ জানায়, “আমাদের মনে হয় না নিম্ন আদালতের বিচার ব্যবস্থা এতটা দুর্বল যে তাদের এভাবে প্রভাবিত করা যায়। আমরা দেশের বিচার ব্যবস্থাকে নিরুৎসাহিত করতে চাই না।” এমনকি, অন্য রাজ্যের আদালতে মামলা স্থানান্তরিত করার আর্জিও খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে সেই মামলা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বা আইনমন্ত্রী যদি আইন ভেঙে থাকেন সে ক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে সিবিআই, এমনটাই পর্যবেক্ষণে বলা হয় শীর্ষ আদলতের পক্ষ থেকে।
আরও পড়ুন: ‘গোদের ওপর বিষফোঁড়া এই ভরা কোটাল’, রাতভর পাহারা দেবেন বলে আশ্বাস মমতার
যদিও এ দিন আদালতে বারংবার চার অভিযুক্তের গৃহবন্দি রাখার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে যান কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল। এক সময় বাধ্য হয়ে দুই বিচারপতিকে বলতে শোনা যায়, “ছুটির সময় স্পেশাল বেঞ্চ সাধারণত গঠিত হয় মানুষকে স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য। এই প্রথম আমরা দেখতে পাচ্ছি স্পেশাল বেঞ্চকে স্বাধীনতা খর্ব করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।” ফলে এই মামলা অন্য রাজ্যে যাচ্ছে না। হাইকোর্টে বিচারাধীন মামলা যদি অন্য আদালতে স্থানান্তর করা হয় সেটা রাজ্যের উচ্চ আদালতের জন্য অবমাননাকর হবে বলে পর্যবেক্ষণে জানান সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি।
আরও পড়ুন: সকাল থেকেই নবান্ন-উপান্নে যাতায়াত মমতার, কড়া নজরে ইয়াসের গতিবিধি