AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

‘দায়ভার ঝেড়ে ফেলতে পারবে না ব্যাঙ্ক’, রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে অভিন্ন লকারবিধি তৈরির নির্দেশ ‘সুপ্রিমে’র

লকারের সুরক্ষায় প্রয়োজনে ব্লক চেইন প্রযুক্তি (Block Chain Technology)-র মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শও দেয় সুপ্রিম কোর্ট (Supreme court)। গ্রাহকদের লকারগুলি সঠিকভাবে বন্ধ হয়েছে কিনা, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করার দায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষেরই, এমনটাই জানায় সুপ্রিম কোর্ট।

'দায়ভার ঝেড়ে ফেলতে পারবে না ব্যাঙ্ক', রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে অভিন্ন লকারবিধি তৈরির নির্দেশ 'সুপ্রিমে'র
ফাইল চিত্র।
| Updated on: Feb 21, 2021 | 3:43 PM
Share

নয়া দিল্লি: গ্রাহকদের লকারের সুবিধা দেওয়া হলেও তার দায়ভার নিতে অধিকাংশ সময়ই অস্বীকার করত ব্যাঙ্ক (Bank)। তবে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে বদলে গেল সেই রীতি। এবার থেকে গ্রাহকদের লকারে সংক্রান্ত কোনও সমস্যা দেখা দিলে, দায়ভার ঝেড়ে ফেলতে পারবে না ব্যাঙ্ক। আগামী ছয় মাসের মধ্যেই লকার সংক্রান্ত নীতি (Locker Policy)-তে পরিবর্তন আনতে হবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে, এমনটাও নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)।

লকারের ভাড়া বাকি থাকায় অমিতাভ দাশগুপ্ত নামক এক গ্রাহকের অজ্ঞাতেই তাঁর ব্যাঙ্কের লকার ভেঙেছিল কলকাতার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা। এরপরই সেই গ্রাহক ক্রেতা সুরক্ষা দফতর (Consumer Forum)-র দারস্থ হন। সেখানে প্রথমে তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যাঙ্কের তরফে রাজ্য স্তরে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে আবেদন জানানো হলে সেই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কমিয়ে ৩০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা মঞ্চও একই রায় দেয়। এরপরই সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হন অমিতাভ।

১৯ ফেব্রুয়ারি এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি এসএস স্বান্তনাগৌড়া ওবং বিচারপতি বিনীত সারনের বেঞ্চ জানায়, গ্রাহকের অজ্ঞাতে লকার ভাঙলে তা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। এক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকেই দায়ভার নিয়ে হবে। বিভিন্ন ব্যাঙ্কের লকার নীতি আলাদা হওয়ায়, সেই বিষয়েও প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট। গ্রাহকদের সুবিধার্থে লকার নীতি নিয়ে একটি অভিন্ন বিধি তৈরির জন্য নির্দেশও দেওয়া হয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া(Reserve Bank of India)-কে।

আরও পড়ুন: গরু সম্পর্কে জ্ঞান কত? যাচাই করতে পরীক্ষা দেবে ৫ লাখেরও বেশি পড়ুয়া!

আরবিআই (RBI) যতদিন এই নতুন নীতি তৈরি করছে না, ততদিন অবধি সমস্ত ব্যাঙ্ককে বেশকিছু নিয়মবিধি মেনে চলতে হবে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রতিটি ব্যাঙ্ককেই লকার ও লকারের চাবির একটি রেজিস্টার (Register) রাখতে হবে এবং তা নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। যদি লকারে কোনও পরিবর্তন আনা হয়, সেই বিষয়টিও রেজিস্টারে উল্লেখ করতে হবে। যদি লকারের স্থান পরিবর্তন করা হয় বা গ্রাহকের লকার অন্য কাউকে দেওয়া হয়, তবে সেক্ষেত্রে গ্রাহককে আগেই জানাতে হবে এবং তাঁরা যদি চান, তবে লকার পরিবর্তন বা লকারে রাখা নিজেদের মূল্যবান সামগ্রী বের করে নেওয়ার সময় দিতে হবে। লকারের গ্রাহকরা কবে, কখন লকার খুলছে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যও রেজিস্টারে নথিভুক্ত করতে হবে।

প্রয়োজনে ব্লক চেইন প্রযুক্তি (Block Chain Technology)-র মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শও দেয় সুপ্রিম কোর্ট। গ্রাহকদের লকারগুলি সঠিকভাবে বন্ধ হয়েছে কিনা, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করার দায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষেরই, এমনটাই জানায় সুপ্রিম কোর্ট। এক্ষেত্রে ব্যাঙ্ককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের কর্মচারীরা যেন নিয়মিতভাবে লকারগুলি পরীক্ষা করেন। যদি এই নিয়ম মানা সম্ভব না হয়, তবে দ্রুত লকারের গ্রাহককে জানাতে হবে এবং তাঁদের জমা রাখা সামগ্রী অক্ষত রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার সুযোগ দেওয়া হবে।

যদি ব্যাঙ্কের লকার বৈদ্যুতিন মাধ্যম দ্বারা পরিচালিত হয়, তবে অনলাইনে যাতে হ্যাকিং (Hacking) বা অন্য কোনও সমস্যা না হয়, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাহকের বায়োমেট্রিক (Biometric) সহ ব্যক্তিগত তথ্য কোনও তৃতীয় ব্যক্তি বা সংস্থার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যাবে না বলেই জানায় সুপ্রিম কোর্ট। এক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি আইন অনুসরণ করা হবে।

লকার ভাঙার ক্ষমতা সম্পূর্ণ কেড়ে না নিলেও কিছু নিয়মবিধি মানার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। এই বিষয়ে বিচারপতি বলেন, “রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নীতি ও অন্যান্য আইন অনুযায়ী লকার ভাঙার অধিকার রয়েছে ব্যাঙ্কের। তবে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ না করে লকার ভাঙলে তা বেআইনি হিসাবেই গ্রাহ্য করা হবে এবং পরিষেবাদাতা হিসাবে ব্যাঙ্ককেই দোষী মানা হবে।”

লকার ভাঙার আগে গ্রাহককে লিখিত নোটিস দিতে হবে। একইসঙ্গে আধিকারিক ও একজন নিরপেক্ষ সাক্ষীর উপস্থিতিতেই লকার ভাঙা যাবে। লকার ভাঙার পর ভিতর থেকে যা কিছু উদ্ধার করা হবে, তার একটি বিস্তারিত নথি বানানো ও রেজিস্টারে আলাদা করে নথিভুক্ত করার নির্দেশও দেয় সুপ্রিম কোর্ট। লকার গ্রাহকের হাতে তাঁর জমা রাখা সম্পত্তি তুলে দেওয়ার পর তাঁর স্বাক্ষরও নিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কোনও সমস্যা না দেখা যায়।

দীর্ঘদিন ধরে লকার সচল না থাকলে এবং গ্রাহকের কোনও হদিশ না মিললে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকা অনুসারে তাঁর নমিনি বা উত্তরসূরীর হাতে লকারের যাবতীয় বস্তু তুলে দেওয়া হবে। লকারগুলি সুরক্ষিত কিনা, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করাও ব্যাঙ্কের দায়িত্ব বলেই জানায় সুপ্রিম কোর্ট। লকার ভাড়া করার সময় যাবতীয় নিয়মবিধি মেনে চুক্তিপত্রের একটি কপি তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: ‘আবদুল কালামকে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন মোদীই’