Kashmir Chenab Rail Bridge: কাশ্মীরের চেনাব রেল ব্রিজ, আইফেল টাওয়ারের থেকেও প্রায় ৩৫ মিটার উঁচু
দেশের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে, ১৩ অগস্ট গোল্ডেন জয়েন্ট লাগানোর সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হল চেনাব বা চন্দ্রভাগা নদীর উপর পৃথিবীর উচ্চতম রেল ব্রিজের নির্মাণ কাজ।
শ্রীনগর (কাশ্মীর): কাশ্মীরবাসীর জন্য সুখবর। অবশেষে ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের মাধ্যমে যুক্ত হতে চলেছে কাশ্মীর। এতদিন উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেল লিঙ্ক (USBRL) প্রকল্পের অন্তর্গত মাতা বৈষ্ণোদেবী কাটরা স্টেশন পর্যন্ত দিল্লি থেকে সরাসরি ট্রেন চলাচল করত। অন্যদিকে এই রেল লিঙ্কের অন্তর্গত কাজিগুন্ড থেকে বারামুলার মধ্যবর্তী অংশেও চলত ট্রেন। কাটরা থেকে কাজিগুন্ডের মধ্যবর্তী এলাকায় রেল লাইন তৈরির জন্য বানিহাল টানেল ও চেনাব ব্রিজ নির্মাণাধীন ছিল। এর মধ্যে বানিহাল টানেলের কাজ আগেই শেষ হয়েছে। আর দেশের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে, ১৩ অগস্ট গোল্ডেন জয়েন্ট লাগানোর সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হল চেনাব ব্রিজের নির্মাণ কাজ।
কাটরা থেকে কাজিগুন্ডের মধ্যবর্তী এলাকায় বানিহালে তৈরি হচ্ছে ভারতের দীর্ঘতম রেলওয়ে টানেল। আর কাটরা ও বানিহালের মধ্যে দিয়েই বয়ে গিয়েছে চেনাব বা চন্দ্রভাগা নদী। এই নদীর উপরই তৈরি হয়েছে ১৩১৫ মিটাল লম্বা ও ৩৫৯ মিটার উচ্চতার চেনাব রেল ব্রিজ। পৃথিবীর উচ্চতম এই ব্রিজ উচ্চতায় আইফেল টাওয়ারের চেয়েও ৩৫ মিটার বেশি উঁচু এবং ভারতীয় প্রযুক্তি ও প্রযুক্তিবিদ্যার এক অনন্য নিদর্শন।
এই ব্রিজের কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালেই। পরবর্তীতে ২০০৮-০৯ সালে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই রকম ভৌগলিক এলাকায় রেল যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ব্রিজ তৈরির কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত অ্যাফকন্সের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর গিরিধর রাজাগোপালন বলেন, “গোল্ডেন জয়েন্ট লাগানো হয়ে গেলে আমরা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি, ব্রিজের কাজ ৯৮ শতাংশ হয়ে গিয়েছে”। গোল্ডেন জয়েন্ট লাগানোর কাজ হয়ে যাওয়ার পর টুইট করেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ। তারপর ব্রিজের ওপরেই আনন্দে মেতে ওঠেন ব্রিজের কাজের সঙ্গে যুক্ত রেল, অ্যাফকন্স ও কোঙ্কন রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ার, আধিকারিক ও শ্রমিকরা।
The Golden Joint: Deck launching work of the world’s highest Railway Arch Bridge, Chenab Bridge completed. pic.twitter.com/nrGF0Mrm6R
— Ministry of Railways (@RailMinIndia) August 13, 2022
চন্দ্রভাগা নদীর উপর এই ব্রিজ তৈরি করতে ২৮ হাজার ৬৬০ মেট্রিক টন স্টিল ও ৬৬ হাজার ঘনমিটার কংক্রিট লেগেছে। এই ব্রিজের কাজ করতে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কাজের জায়গায় নিয়ে আসার জন্য হিমালয়ের এই দুর্গম এলাকায় ২৬ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। স্টিল বক্স দিয়ে তৈরি ব্রিজের প্রধান আর্চটির মোট ওজন ১০ হাজার ৬১৯ মেট্রিক টন। হিমালয়ের এই এলাকায় বায়ুর বেগ অত্যন্তই বেশি। ফলে চেনাব ব্রিজ এমন ভাবে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যাতে এই ব্রিজ ঘণ্টায় ২৬৬ কিলোমিটার গতিবেগের বাতাসও সহ্য করতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য অনুযায়ী এই ব্রিজ তৈরি করতে ১ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
চেনাব রেল ব্রিজের কাজ সম্পূর্ণ হলেও, এখনও ব্রিজের ওপর রেল লাইন, বৈদ্যুতিকরণ ইত্যাদির কাজ বাকি রয়েছে। রেল মন্ত্রক এখনও এই ব্রিজের সরকারি ভাবে উদ্বোধনের সময় ঘোষণা না করলেও মনে করা হচ্ছে ডিসেম্বর মাসে উদ্বোধন করা হতে পারে চেনাব রেল ব্রিজের। এই ব্রিজ চালু হলে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় দিল্লি থেকে রেলপথে শ্রীনগর ও বারামুলা পৌঁছানো যাবে, ফলে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের সঙ্গে সুবিধা ভোগ করবে সেনাবাহিনীও, সুরক্ষা বাড়বে সীমান্তের।