বাজেটে শুধুই শ্রমিক কল্যাণে বরাদ্দ, প্রত্যাশা পূরণ হয়নি চা বাগানের
কল্যাণমূলক তহবিল ছাড়া চা নিয়ে বাজেটে সরাসরি কোনও ঘোষণা ছিল না।
অভিজিৎ ঘোষাল: কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বাজেটে (Budget 2021)এক হাজার কোটি টাকা ঘোষণা করেছেন অসম এবং পশ্চিমবঙ্গের চা শ্রমিকদের জন্য। বিশেষ করে মহিলা এবং শিশুদের কল্যাণে। কিন্তু দার্জিলিং চা-শিল্প মহলে এই ঘোষণা বিশেষ উৎসাহের সঞ্চার করতে পারেনি। দার্জিলিং চা-শিল্পে অন্যান্য প্রধান দাবি ছিল নেপাল থেকে বিনা শুল্কে চা আমদানি বন্ধ হোক। তবে কল্যাণমূলক তহবিল ছাড়া চা নিয়ে বাজেটে সরাসরি কোনও ঘোষণা ছিল না।
বাজেটের আগেই দার্জিলিং চা-শিল্পের মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, নেপাল থেকে বিনা শুল্কে চা আমদানি হওয়ার ফলে তাঁদের ভরাডুবি হয়েছে। দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশেনের সেক্রেটারি সন্দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “নেপাল থেকে আমদানি করা চা প্রতিনিয়ত বিক্রি হয়েছে দার্জিলিং চায়ের নামে।” গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ২০১৭ সালে ১১০ দিনের উত্তরবঙ্গ বন্ধের সময়ে এই ব্যবস্থা চালু হয়। টানা ধর্মঘটের ফলে তখন দার্জিলিংয়ে চায়ের উৎপাদনও বন্ধ ছিল। তবে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকে এই বিষয় বারবার আবেদন জানালেও কোনও ফল হয়নি বলে জানিয়েছেন সন্দীপ।
তিনি বলেন, “নেপালি চায়ে দেশ ছেয়ে গেছে। গত বছর দার্জিলিং থেকে ৮০ লক্ষ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। কিন্তু নেপাল থেকে আমদানি করা হয়েছিল ৯৭ লক্ষ কেজি চা। যা বাজারে বিক্রি করা হয়েছিল দার্জিলিং চায়ের নামেই।” বাংলায় ২৮৪টি চা বাগানের মধ্যে ৮৭টি রয়েছে দার্জিলিং এবং কালিম্পংয়ে। এখান থেকেই বিশ্বের সবচেয়ে ভাল স্বাদযুক্ত চা উৎপাদন হয়।
শ্রমকল্যাণের জন্য এক হাজার কোটি টাকা প্রসঙ্গে মুখার্জি বলেন, “এই ঘোষণা খুবই ভাল। কিন্তু শ্রমিকরা তখনই ভাল থাকবেন যখন এই শিল্পটি ভাল ভাবে চলবে।” ভারতের টি অ্যাসোসিয়েশনের (উত্তরবঙ্গ) সেক্রেটারি সুমিত ঘোষ অর্থমন্ত্রীর ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি আরও বলেন, “আরও দুটি বিষয়ে সরকারের নজর দেওয়া উচিত ছিল।”
প্রথমত, বছরে ব্যাঙ্ক থেকে এক কোটি নগদ তোলার জন্য যে দুই শতাংশ টিডিএস কাটা হয়, তাতে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে চা শিল্প। ২০১৯ সালে এই নিয়ম চালু হয়েছিল। চা-বাগানের শ্রমিকদের বেতন নগদে হওয়ার কারণে ব্যাঙ্ক থেকে একসঙ্গে অনেক টাকা তোলা প্রয়োজন হয় বাগান মালিকদের। এক কোটির উপরে দুই শতাংশ টিডিএস কাটার ফলে একটি মাঝারি মাপের বাগানেও বছরে এই খাতে অতিরিক্ত ৩৫ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। দ্বিতীয়ত, সরকারের উচিত ছিল তরাই এবং ডুয়ার্স অঞ্চলে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনও ব্যবস্থা ঘোষণা করা। প্রতি বর্ষায় অনেক চা-বাগান জলে ডুবে থাকে।
আরও পড়ুন: স্টিলে কাস্টমস ডিউটি কমানোর ফলে বাজেটের পরের দিনই বাড়ল দাম, শঙ্কিত শিল্পমহল
বাংলায় চা-বাগানগুলি মূলত উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারে রয়েছে। এই রাজ্যে ২৮৪টি বাগানে ও কারখানায় প্রায় তিন লক্ষ শ্রমিক কাজ করেন। দেশের মধ্যে চা উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। এক চতুর্থাংশ চা উৎপাদন হয় এখান থেকেই। দার্জিলিং এবং কালিম্পংয়ের ৮৭টি বাগান ১৭,২০০ হেক্টর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। প্রায় ৬৫ হাজার স্থায়ী কর্মী এবং প্রায় ১৯ হাজার অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ থাকে এখানে।