Tripura: ‘তৃণমূলই ভ্যাকসিন’! ‘দুয়ারে গুন্ডা মডেল’ বদলের ডাক দিলেন অভিষেক

Tripura: ২৩ জুন ত্রিপুরার আসন্ন চারটি আসনের বিধানসভা উপ-নির্বাচনের আগে, মঙ্গলবার (১৪ জুন) আগরতলার জনসভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ত্রিপুরায় গুণ্ডা মডেলের বদলে দুয়ারে সরকার মডেল চালু করতে হবে।

Tripura: 'তৃণমূলই ভ্যাকসিন'! 'দুয়ারে গুন্ডা মডেল' বদলের ডাক দিলেন অভিষেক
আগরতলায় বক্তৃতা দিচ্ছেন অভিষেক
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 14, 2022 | 4:52 PM

আগরতলা: ২০২৩ সালেই ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে আগামী ২৩ জুন ত্রিপুরার চারটি আসনে হতে চলেছে উপ-নির্বাচন। আগরতলা, বড়দোয়ালি শহর, সুরমা ও যুবরাজনগর – এই চার আসনের উপনির্বাচনকে বলা হচ্ছে সেমিফাইনাল। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহাও। আর এই সেমিফাইনাল থেকেই ত্রিপুরায় বিজেপিকে ছিটকে দেওয়ার আহ্বান জানালেন তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার (১৪ জুন), আগরতলার এক জনসভায় তিনি বললেন, ‘ত্রিপুরায় এখন দুয়ারে গুন্ডা মডেল চলছে। এর বদলে দুয়ারে সরকার মডেল চালু করতে হবে। তবে শুধু বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরানো নয়, এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একই সঙ্গে বলেছেন, কংগ্রেস বা সিপিএম-কে ভোট দেওয়া মানে ভোট নষ্ট করা। বিজেপি নামক ভাইরাসের একটাই ভ্যাকসিন, তৃণমূল কংগ্রেস।

এদিন, দুপুর ১টা নাগাদ আগরতলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান অভিষেক। তাঁকে স্বাগত জানান, রাজ্যের তৃণমূল সভাপতি সুবল ভৌমিক, সাংসদ সুস্মিতা দেব এবং ত্রিপুরার যুব তৃণমূল সভাপতি শান্তনু সাহা। এরপর, বড়দোয়ালির গান্ধীঘাট থেকে আগরতলার জিবি বাজার পর্যন্ত এক জমজমাট রোড শো করেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক। রাজ্যের তৃণমূলের প্রায় সকল নেতা-কর্মীরাই অংশ নেন এই রোড শো-তে। রাস্তার দুই ধারে সাধারণ মানুষের উৎসাহও ছিল দেখার মতো। রোড শো-র শেষে জিবি বাজার এলাকায় সমবেত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন অভিষেক।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, অর্থবল, পেশি শক্তি নিয়ে রাজ্যের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিজেপি। বাইক বাহিনী নিয়ে এলাকায় এলাকায় টহল দিয়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে। সোমবারই, আগরতলায় কুনাল ঘোষের সভাতেও হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এরপরই তিনি বলেন, বিজেপি সরকারের মডেলই হল ‘দুয়ারে গুন্ডা’। আর তৃণমূল সরকারের মডেল হল ‘দুয়ারে সরকার’। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরও অভিযোগ করেন, তিনি যাতে আগরতলা আসতে না পারেন, তার জন্যই মঙ্গলবার তাঁর বাড়িতে হানা দিয়েছে সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা।

বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকার নিয়েও তীব্র কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ডবল ইঞ্জিন সরকার মানে হল ডবল চোরের সরকার। ত্রিপুরাতেও চুরি করা হবে, আবার দিল্লিতেও চুরি করা হবে। ত্রিপুরার পুলিশও সেই চুরি ধরবে না, দিল্লিতে সিবিআই-ও ধরবে না। তিনি আরও বলেন, এই ডবল ইঞ্জিন সরকারের ফলে, ত্রিপুরাকে দিল্লির কাছে মাথা নোয়াতে হচ্ছে। একটা ইঁট পুঁততে গেলেও, ত্রিপুরার সরকারকে দিল্লির অনুমতি নিতে হয়। ডবল ইঞ্জিন সরকারের যাবতীয় প্রতিশ্রুতিই ভাঙা অডিও ক্যাসেটের মতো বলে দাবি করেন অভিষেক। যা শুধু শোনা যায়, চোখে দেখা যায় না। অপর পক্ষে তৃণমূলের প্রতিশ্রুতি হল হাই কোয়ালিটি ডিভিডির মতো। যা শোনাও যায়, চোখেও দেখা যায়। এই প্রসঙ্গে তিনি বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারে বিভিন্ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

চার আসনের উপনির্বাচনের আগে বিজেপির পক্ষ থেকে টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জমায়েতের উদ্দেশ্যে অভিষেক বলেন, ‘বড় ফুলের থেকে টাকা নেবেন, ছোট ফুলে ভোট দেবেন’। তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরার অনেক বিজেপি নেতা-কর্মীই এখন তৃণমূলে যোগ দিতে চাইছেন। চাইলেই এই সরকারকে ফেলে দিতে পারত তৃণমূল। তবে, মানুষের নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দিতে চায়নি তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক আরও দাবি করেন, তৃণমূলের দ্রুত উত্থানে ভয় পেয়েই মুখ্যমন্ত্রী বদলিয়েছে বিজেপি। বিপ্লব দেবকে সরিয়ে, এই পদে আনা হয়েছে মানিক সাহাকে। অভিষেক বলেন, সরকার গঠনের চার বছরের মাথায় মুখ্যমন্ত্রী বদলাতে বাধ্য হয়েছে বিজেপি। কারণ, তৃণমূল কংগ্রেস এখন তাদের পিছনে পড়ে গিয়েছে।

শুধু বিজেপিকেই নয়, একই মঞ্চ থেকে কংগ্রেস এবং সিপিআই(এম)-কেও আক্রমণ করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘কংগ্রেস দলের দূরবস্থা নিয়ে আমি কোনও কথা বলতে চাই না। ২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল পুরভোটে। এখন ছাদে নিয়ে গিয়ে ৫০০০ টাকা দিয়ে দলে যোগদান করাচ্ছে’। অন্যদিকে, সিপিআই(এম) নিয়ে অভিষেক বলেন, ‘ত্রিপুরাকে শেষ করে দিয়ে গিয়েছে সিপিআই(এম)। তারা ক্ষমতায় ফিরলে কি কর্মসংস্থান হবে বলে মনে করেন? বাংলাকেও শেষ করে দিয়েছিল ওরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে গত কয়েক বছরে বাংলা সেই জায়গায় থেকে এগিয়ে এসেছে’। এই দুই দলকেই ভোট দেওয়া মানে ভোট নষ্ট। বাংলার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, গোটা ভারতে বিজেপিকে হারাতে পারে একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসই। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীদের নাম সংহিতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পান্না দেব হলেও, আসল প্রার্থী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ত্রিপুরার কর্মীরা ডাকলেই, বাংলার নেতারা এসে তাঁদের পাশে দাঁড়াবেন বলে প্রতিশ্রুতিও দেন। অভিষেক বলেন, ‘রাত ১২টায় জানাবেন, ২টোর মধ্যে কলকাতা থেকে এসে যাব’।