Omicron: বিশ্লেষণ: কেন ভয়ঙ্কর ওমিক্রন?

Omicron Scare: করোনার সাধারণ উপসর্গ থেকে আলাদা ওমিক্রনের উপসর্গ। এর ফলে ওমিক্রনের গতিবিধি সম্পর্কেও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে।

Omicron: বিশ্লেষণ: কেন ভয়ঙ্কর ওমিক্রন?
কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে ওমিক্রণ?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 06, 2021 | 5:54 PM

বিয়াল্লিশ করোনা রোগী। ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশের অক্সিজেন ছাড়াই চিকিৎসা চলছে। উপসর্গও নামমাত্র। আর যাদের অক্সিজেন লাগছে, তাঁরা সঙ্কটজনকও নন। কো-মর্ডিবিটি রয়েছে এমন দু-একজনই আইসিউ-তে ভর্তি। এমনই একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিক্যাল কাউন্সিল। গুয়েটাং প্রভিন্সের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসারত ওমিক্রন করোনা রোগীদের উপর সমীক্ষা চালানো হয়। উল্লেখ্য, এই গুয়েটাং প্রভিন্সেই প্রথম ওমিক্রন শনাক্ত করা গিয়েছিল। তবে, সমীক্ষা যতটা আশাব্যঞ্জক মনে হচ্ছে, বাস্তবের চিত্র কিন্তু সম্পূর্ণই ভিন্ন।

ওমিক্রন কেন ‘কনসার্ন অব ভ্যারিয়েন্ট’:

বি.১.১.৫২৯ বা ওমিক্রনকে ‘কনসার্ন অব ভ্যারিয়েন্ট’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। তার কারণ, অতিরিক্ত মাত্রায় ওমিক্রনের মিউটেশন ডেল্টার থেকেও ভয়ঙ্কর হবে বলে আশঙ্কা হু-র বিজ্ঞানীদের। আফ্রিকায় ওমিক্রমনের সংক্রমণ যা ধরা পড়েছে, তা অত্যন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে বলে দাবি তাদের। গোটা বিশ্বে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে। পাশাপাশি, আর একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, করোনার সাধারণ উপসর্গ থেকে আলাদা ওমিক্রনের উপসর্গ। এর ফলে ওমিক্রনের গতিবিধি সম্পর্কেও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে।

কত দ্রুত ছড়াতে পারে ওমিক্রন?

এই প্রশ্নের উত্তরে দক্ষিণ আফ্রিকার করোনা পরিসংখ্যান উল্লেখ করা যেতে পারে। শনিবার একদিনে করোনা আক্রান্ত ১৬ হাজার। এক সপ্তাহ আগে যে সংখ্যাটা ছিল ২৮০০ কাছাকাছি। তবে তুলনায় মৃত্যু অনেকটাই কম। গতকাল এক দিনে মৃত্যু মাত্র ২৪। চার মাস আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় একদিনে ১৬ হাজার করোনা আক্রান্ত লক্ষ্য করা গিয়েছিল। মৃত্যুর হারও ছিল বেশি। একদিনে ৫০০-র বেশি মৃত্যু হচ্ছিল। ওমিক্রনের মৃত্যুর হার এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি।

তবে ওমক্রিনের সংক্রমণের তীব্রতা অনেক বেশি তার প্রমাণ মিলেছে। গত সেপ্টেম্বরে ডেল্টার দাপটে গুটেংয়ে ‘আর’ ভ্যালু একের নীচে ছিল। আজ সেটা দুইয়ের উপর বলে দাবি করেছে জোহানেসবার্গের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কমিউনিকেবল ডিজিজ। বিজ্ঞানীদের মতে, ওমিক্রন ডেল্টার তুলনায় তিন থেকে ছয় গুণ বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে। ইতিমধ্যেই ভারত-সহ ৩৭টি দেশে ওমিক্রনের সন্ধান মিলেছে।

ভ্যাকসিনকেও জয় করতে পারে ওমিক্রন?

আফ্রিকার দক্ষিণাংশে একাধিক ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীদের দেখা গিয়েছে, কয়েক মাস আগেই তাঁরা ডেল্টায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। অন্য দিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষেরই সম্পূর্ণ করোনা টিকাকরণ সম্পন্ন হয়েছে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে ওমিক্রনের আগে করোনার যে ঢেউগুলি এসেছে, তখনও অনেকেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু যাঁরা ডেল্টা বা অন্যান্য স্ট্রেনগুলি থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন বা যাঁদের সম্পূর্ণ টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে, তাদের শরীরেও বাসা বাঁধছে ওমিক্রন।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, কোনও জায়গায় এই ভ্যারিয়েন্ট কত দ্রুত ছড়াতে পারে, তা নির্ভর করছে সেখানকার টিকাকরণ এবং সংক্রমণের হারের উপর। অর্থাৎ, যদি এমন কোনও জায়গা যেখানে টিকাকরণের হার অনেক বেশি এবং সেই কারণে মানুষ অন্যান্য করোনা বিধিকে সেভাবে মানছেন না, সেই সব জায়গায় অনায়াসেই নিজের কেরামতি দেখাতে পারে ওমিক্রন। তবে ওমিক্রন মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কতটা কাবু করতে পারে, তা নিয়ে এখনও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কতটা কাজে দেবে ভ্যাকসিন?

যদি ওমিক্রন অ্যান্টিবডিগুলিকে ফাঁকি দিতে সক্ষমও হয়, এর অর্থ এটা নয় যে টিকাকরণ এবং পূর্বের করোনা সংক্রমণের মাধ্যমে তৈরি হওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এই নতুন ভ্য়ারিয়েন্টের বিরুদ্ধে একেবারেই সুরক্ষা দিতে পারবে না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ক্ষেত্রে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দিতে পারলেও টি সেলকে সেভাবে প্রভাবিত করতে পারে না করোনার নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট।

বুস্টারে কি বাড়তি সুরক্ষা?

ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তেই বিশ্বের ধনী দেশগুলি, যেমন ব্রিটেন, নিজেদের দেশে করোনার বুস্টার ডোজ় দেওয়ার প্রক্রিয়ায় আরও গতি এনেছে। তবে বুস্টার ডোজ়গুলি করোনার এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, তৃতীয় ডোজ় নেওয়ার ফলে শরীরে অ্যান্টিবডির মাত্রা আরও বেড়ে যায়। ফলে ওমিক্রনের মানবদেহে অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দিয়ে শরীরে বাসা বাঁধা অনেকটা কঠিন হয়ে যায়।

ডেল্টা এবং অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টগুলির থেকে এটি কম ভয়ঙ্কর?

এখনও পর্যন্ত ওমিক্রন আক্রান্তদের ক্ষেত্রে যে উপসর্গগুলি দেখা দিয়েছে, তা মাঝারি ধরনের। তেমন ভয়াবহ কিছু ঘটেনি। যা থেকে অনেকেই মনে করছেন, এই ভ্যারিয়েন্টটি ডেল্টা বা পূর্বের অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টগুলির থেকে কম ভয়ঙ্কর হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই এমন ভেবে নেওয়াটা ভুল হতে পারে।

চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানিয়েছেন, “ওমিক্রন স্ট্রেনটি কোভিড ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে তৈরি হয়েছে। লক্ষ্য করা গিয়েছে, বিটা স্ট্রেন বা তারপর ডেল্টা স্ট্রেনের মোট যে পরিবর্তন, তার থেকেও বেশি পরিবর্তন রয়েছে ওমিক্রনে। সেই থেকে অনুমান করা যাচ্ছে, ডেল্টার থেকে বেশি হারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে ওমিক্রনের মাধ্যমে। ভারতে এটা আসতই। পুরো বিষয়টিই যে বিদেশ থেকে আসছে, আমরা যে প্রত্যেকটি বিষয় টেস্ট এবং ট্র্যাক করতে পারছি, এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে যদি আমরা এই টেস্টিং অ্যান্ড ট্র্যাকিং চালিয়ে যেতে পারি, তাহলে এটি মহামারি হয়ে ছড়িয়ে পড়া থেকে আমরা আটকাতে পারব। এমনটা নয়, যে স্ট্রেনটি ভারতে একেবারেই আসবে না বা আমরা পুরোপুরি আটকে রাখতে পারব। কিন্তু প্রচুর মানুষ যাতে একসঙ্গে আক্রান্ত না হয়ে যান, বা মানুষের মধ্যে মৃত্যু হার যাতে না বাড়ে – সেটি নিশ্চিত করতে হবে।”

তিনি আরও জানিয়েছেন, “ডেল্টার সংক্রমণের সময় দেশে চারিদিকে অক্সিজেনের হাহাকার পড়ে গিয়েছিল। ওমিক্রনেও কি তেমন কিছু ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে? চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই অবশ্য বলছেন, “এখনও পর্যন্ত যে উপসর্গগুলি এসেছে, সেগুলি পুরানো ডেল্টার সঙ্গে অনেকটাই মিল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হবে কি না, তা এখনই বলা যাবে না। এটি অনেকগুলি তত্ত্ব রয়েছে। একটি তত্ত্ব বলছে, এটি ভয়ঙ্কর হতেও পারে, কারণ পরিবর্তনগুলি এমন জায়গায় হয়েছে, যা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা টিকাকরণের ফলে যে প্রতিরোধ ক্ষমতা, বা যাদের আগে করোনা হয়ে গিয়েছে, তাঁদের যে প্রতিরোধ ক্ষমতা, তা এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে না। অন্য একটি তত্ত্ব রয়েছে, যেখানে বলা হচ্ছে, এখানে এতগুলি পরিবর্তন হয়েছে যে ভাইরাসটির চরিত্রই বদলে গিয়েছে এবং এটি আর ভয়ঙ্কর হতে পারবে না। মাঝারি ধরনের উপসর্গ হয়েই থেকে যাবে। তবে এখনও আমাদের কাছে তেমন কোনও প্রামাণ্য তথ্য নেই যার উপর ভিত্তি করে বলা যাবে, এটি ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে কিনা। সুতরাং আমাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে।”

আরও পড়ুন : Nagaland Civilians Death: ‘শিকারি বন্দুক’ থেকেই বিভ্রান্তি? নজরদারির সময় ‘ব্যারেলের মতো’ কী দেখেছিলেন জওয়ানরা?